গাজীপুরের রাজবাড়ী এলাকার আদালত পাড়ায় একটি আদালত থেকে জামিন নিয়ে বের হয়ে আসার পর আদালত চত্বরে আসামির ওপর হামলা করে বাদীপক্ষ। এসময় প্রকাশ্যে নারী-পুরুষসহ ১৩ আসামিকে মারধর করে ফিল্মি স্টাইলে দুই সহোদর ভাই ও মামলার আসামিকে অপহরণ করা হয়েছে।
এ ঘটনার পর আদালত পাড়ায় আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে গাজীপুর জেলা জজ আদালতের পশ্চিম পাশে আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
অপহৃত আসামিরা হলেন, মো. মিলন মিয়া (৩৫) ও বাবুল মিয়া (৪০)। তারা উভয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর থানাধীন তেলিহাটি এলাকার আব্দুল মালেকের ছেলে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন, গাজীপুর আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম ও জিএমপির সদর মেট্রো থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেহেদি হাসান।
অপহরণের নেতৃত্ব দিয়েছেন, মামলার বাদী এস এম নাজমুল হক। তিনি গাজীপুর জেলা শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি এলাকার শহীদুল্লাহর ছেলে।
বিজ্ঞাপন
![]()
এই মামলার অপর আসামি এনামুল হক বলেন, বাদী নাজমুল আমাদের বিরুদ্ধে শ্রীপুর থানায় জমি সংক্রান্ত মামলা করেন। আমরা মামলার নারী-পুরুষসহ ১৩ আসামি আগেই আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিয়েছি। বুধবার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ আমাদের স্থায়ী জামিন নেয়ার দিন ধার্য ছিল। আমরা আদালত থেকে জামিন লাভ করার পর আদালত থেকে বের হলে বাদী ও তার সঙ্গে দা, চাকু, ছুরা, লাঠিসহ দেশি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত কতিপয় সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোক দেখতে পাই। পরে আমরা ভীত হয়ে বিষয়টি আমাদের আইনজীবী ও গাজীপুর আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামকে জানাই। তিনি পরে তার সমিতির দু’জন ব্যক্তিকে আমাদের আনার জন্য পাঠায়। আমরা ওই দু’জনের সঙ্গে আদালত থেকে বের হয়ে গাজীপুর আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের অফিসের নিচে পৌঁছালে সেখানে উপস্থিত আইনজীবী, পুলিশসহ শত শত মানুষের সামনে বাদী ও তার সঙ্গের সন্ত্রাসীরা সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আমাদের ওপর হামলা করে। সন্ত্রাসী আমাদের ব্যাপক মারধর করে। এসময় আমাদের বাঁচাতে সমিতির দুই কর্মকর্তা এগিয়ে এলে তাদেরও আহত করা হয়। পরে ফিল্মি স্টাইলে আমাদের মধ্যে থেকে দু’জনকে টেনে হিঁচড়ে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে গাজীপুর আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জানান, সকালে একটি মামলায় ১৩ জন আসামি হাজিরা দেওয়ার জন্য আদালতে আসেন। আসামিরা আগেই আদালত থেকে জামিনে ছিলেন। আজকে তাদের স্থায়ী (বদলি) জামিন নেয়ার দিন ধার্য ছিল। বাদী আসামিদের জামিন বাতিলের আবেদন করে। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক সেলিনা আক্তার আসামিদের জামিন মঞ্জুর করেন। জামিন লাভের পর আসামিরা আদালত থেকে বের হয়ে বাদীপক্ষের লোকজনকে সশস্ত্র অবস্থায় দেখে দেখে ভয় পায়। পরে তারা বিষয়টি আমাকে জানালে আমি আসামিদের নিরাপদে আমার এখানে নিয়ে আসার জন্য আইনজীবী সমিতির দু’জন কর্মচারী আইয়ুব আলী ও মতিউর রহমানকে পাঠাই। তাদের নিয়ে আমার অফিসের সামনে নিচে আসার পরে বাদী ও তার সন্ত্রাসী লোকজনের হামলায় ১৩ আসামি ও আমাদের সমিতির দুই কর্মচারী মারাত্মকভাবে হামলায় আহত হন। তাদের মধ্যে আইয়ুব আলির মাথায় আঘাত লেগেছে। তার মাথায় সাতটি সেলাই দিতে হয়েছে। এসময় সবার সামনে বাদীপক্ষ সন্ত্রাসী লোকজন নিয়ে এসে আসামিদের আদালত চত্বরে প্রকাশ্যে ব্যাপকভাবে মারধর করে এবং তাদের দু’জনকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় আদালত চত্বরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
![]()
তিনি আরও অভিযোগ করেন, এ ঘটনার সময়ের সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, সেখানে পুলিশের দু’জন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি।
তিনি বলেন, বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে গাজীপুরের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মহোদয়কে জানানো হয়েছে। আজ আমাদের আইনজীবী সমিতির সাধারণ সভা। বিষয়টি সেখানে আলোচনা করা হবে। পরে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।
গাজীপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বক্তব্য দেয়ার সময় বারের সভাপতি হাসিনা আক্তার জাহান (বীথি), সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনসহ অন্য আইনজীবী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে জিএমপির সদর মেট্রো থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেহেদি হাসান বলেন, আদালত চত্বরে হামলায় কয়েকজনের আহত হওয়ার খবর পেয়েছি। সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রতিনিধি/এসএস

