শুক্রবার, ১১ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

কালিয়াকৈরে নানা অপকর্মের হোতা সেই ওসির অবশেষে স্ট্যান্ড রিলিজ

জেলা প্রতিনিধি, গাজীপুর
প্রকাশিত: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:৪৬ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img
মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ওসি মহিদুল ইসলাম

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে নানা অপকর্মের হোতা মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সেই ওসির অবশেষে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অপকর্মের নানা অভিযোগ উঠলে তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করেন।


বিজ্ঞাপন


স্ট্যান্ড রিলিজের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কালিয়াকৈর থানার ওসি রিয়াদ মাহমুদ।

এলাকাবাসী, ভুক্তভোগী পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ জুলাইয়ের পর কালিয়াকৈর মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ হিসেবে যোগদান করেন ওসি মহিদুল ইসলাম। এরপর নানা অপকর্মে জড়িয়ে তিনি বেপরোয়া হয়ে উঠেন। ওই এলাকার ঝুট ব্যবসার হাত বদলের পর ঝুটের দাম কমানোর কথা বলে স্থানীয় দেলোয়ার হোসেন নামে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন ওসি মহিদুল।

এ ঘটনা বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলে গত নভেম্বর মাসে তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল। কিন্তু অদৃশ্য খুঁটির জোরে সেই প্রত্যাহার ঠেকিয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেন ওই ওসি ও তার টিম।

তার অপকর্মের সংবাদ প্রকাশ হলে ওই ওসি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন এবং ওই ব্যবসায়ী ও তার স্বজনদের ভয়ভীতিসহ নানা হুমকি দেন। এরপর তার সহযোগী ইউসুফ আলী রানাকে বাদী করে আদালতে একটি সিআর মামলা করান ওই ওসি। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ ফেব্রুয়ারি কালিয়াকৈর থানায় ওই ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন ও তার শ্বশুর কালিয়াকৈর পৌর শ্রমিকদলের সভাপতি এ.কে আজাদকে আসামি করে একটি মামলা রেকর্ড করা হয়। এছাড়াও ওই ওসির নির্দেশে এএসআই হাবিবুর রহমান হাবিব ফোনে যমুনা কোম্পানির কাভার্ডভ্যান চালক সবুজ সরকারকে ফাঁড়িতে যেতে বলেন। পরে তিনি গত ১০ ডিসেম্বর সকাল ১০টার দিকে ওই ফাঁড়িতে যান। তালাকপ্রাপ্ত ২য় স্ত্রী অভিযোগ দিয়েছে জানিয়ে তার কাছে ২ লাখ টাকা দাবি করে ফাঁড়ি পুলিশ। এতো টাকা দিতে অনীহা প্রকাশ করায় পুলিশ তাকে মারধর করে।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন

পুলিশ দেখে ১৫ কেজি গাঁজা ফেলে পালাল মাদক কারবারিরা

খবর পেয়ে তার ১ম স্ত্রী সেলিনা ফাঁড়ি পুলিশকে ৫০ হাজার টাকা দেন। কিন্তু দাবি করা টাকার কম দেয়ায় ওসি মহিদুল, এএসআই হাবিবুরসহ তিন পুলিশ তাকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে ১ম স্ত্রীর সামনে অমানবিক নির্যাতন করে। ওই সময় মারধর থামানোর জন্য আরও ১০ হাজার টাকা পুলিশ দাবি করলে তার স্ত্রী আরও ৫ হাজার টাকা ব্যবস্থা করে দেয়। তারপরও শান্ত হননি ওসি মহিদুল ও তার টিম। দাবি করা টাকা না পেয়ে দু’দিন আটকে রেখে গত ১১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় তাদের স্বামী-স্ত্রীকে কালিয়াকৈর থানায় হস্তান্তর করে ফাঁড়ি পুলিশ।

২য় স্ত্রী ইতি মামলা করতে অস্বীকার করলে ফাঁড়ি পুলিশ রাতেই তার বড় বোন হাফিজা বেগমকে বাদী করে একটি ধর্ষণ মামলা করায়। ওই মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৬ নভেম্বর সবুজকে তালাক দেন তার ২য় স্ত্রী ইতি। তালাকের পর প্রলোভন দেখিয়ে ৭ নভেম্বর এবং ২৬ নভেম্বর একাধিকবার ধর্ষণ করে তালাকপ্রাপ্ত সবুজ। গত ১২ ডিসেম্বর সবুজকে গাজীপুর জেলহাজতে প্রেরণ করে পুলিশ।

৪৩ দিন জেল খাটার পর ২২ জানুয়ারি আপোষনামার মাধ্যমে জামিনে বেরিয়ে আসেন সবুজ। এরপর ফাঁড়ি পুলিশের অমানবিক নির্যাতনের বিচার চেয়ে ওইদিন ভুক্তভোগী সবুজ সরকারের ১ম স্ত্রী সেলিনা বেগম বাদী হয়ে গাজীপুর পুলিশ সুপার (এসপি) বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। বিষয়টি জানতে পেরে ওই মৌচাক ফাঁড়ি পুলিশ ও তাদের সমর্থিত লোক দিয়ে বাদী ও তার পরিবারকে নানা ধরনের ভয়ভীতিসহ হুমকি দেন। এছাড়াও ওই ওসির বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে বলেও জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় লোকজন।

নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মৌচাক পুলিশের ইনচার্জ সেই ওসির অবশেষে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে জানতে ওই ওসির মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি।

কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াদ মাহমুদ জানান, মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ওসি মহিদুল ইসলামকে স্ট্যান্ড রিলিজ করার বিষয়টি শুনেছি। তবে কী কারণে তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে সেটা জানা নেই।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এই ক্যাটাগরির আরও খবর