পাবনা জজ কোর্টের নবনিযুক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর ও গণঅধিকার পরিষদের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম সরোওয়ার খান জুয়েলের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতা ও আওয়ামী আইনজীবীদের সঙ্গে গোপন বৈঠকের অভিযোগ উঠেছে। বৈঠকের একাধিক ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এনিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা গেছে, পাবনা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকে সামনে রেখে নানা বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। সেই বিতর্কের মধ্যেই সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) অ্যাডভোকেট গোলাম সরোওয়ার খান জুয়েলের বাসায় গোপন বৈঠকের মিলিত হোন আওয়ামী লীগ নেতা ও দলটির আইনজীবীরা। এতে আওয়ামী লীগের পক্ষে নেতৃত্ব দেন পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট বেলায়েত আলী বিল্লু ও আইনজীবী সমিতির সাবেক নির্বাহী কার্যপরিষদের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শহিদুল্লাহ বিশ্বাস হেলাল। বৈঠকে সমিতির নির্বাচনের পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নামে মামলার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয় বলে বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিজ্ঞাপন
পরদিন মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রয়ারি) এই বৈঠকের একাধিক ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। যা নিয়ে আইনজীবী অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। ফ্যাসিবাদবিরোধী আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে পাবনা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট কামাল হোসাইন ও মাজেদুল ইসলামসহ একাধিক আইনজীবী বলেন, এটা আমাদের জন্য হতাশার এবং লজ্জাকর। যেই ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীনতার পর তিনি পিপি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। সেই রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করে তিনি কীভাবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠক করলেন। আমি আইনজীবী হিসেবে লজ্জিত।
বৈঠকের বিষয়ে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট বেলায়েত আলী বিল্লু বলেন, ‘আমাদের পিপি সাহেব ডেকেছিল। মতবিনিময় হয়েছে। আমাদের সেসব লোক জেলে রয়েছে তাদের কীভাবে জামিন করানো যায় সেটা নিয়ে কথা হয়েছে, কিন্তু রাজনীতি বা নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা হয়নি।’
তবে এবিষয়ে অভিযুক্ত অ্যাডভোকেট গোলাম সরোওয়ার খান জুয়েল বলেন, ‘বৈঠকটি আমার বাসায় নয়, চেম্বারে হয়েছে। আইনজীবী সমিতির নির্বাচন নিয়ে অ্যাডভোকেট কাজী আলমের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে, আমার সাথে হয়নি। আমি পিপি হিসেবে আমার কাছে সবাই আসতে পারে। এতে সমস্যা নেই।’
এবিষয়ে বাংলাদেশ গণধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, ‘আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। এখন এই বিষয়টি নিয়ে আমি দলীয় ফোরামে তুলে আলোচনা করবো। এরপর আপনাকে জানাতে পারবো।’
প্রসঙ্গত, অ্যাডভোকেট গোলাম সরোওয়ার খান জুয়েল পাবনার সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রিন্সের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও ঠিকাদারী পার্টনার। গত ১৭ নভেম্বর পাবনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। এরপর তার নিয়োগ বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সংবাদ সম্মেলন করেন জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী পরিষদের সদস্যরা। এরপরও তিনি বহাল তবিয়তে রয়েছেন।
প্রতিনিধি/জেবি