বড় ছেলের স্ত্রী পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে তার বাবার বাড়ি থেকে পালিয়েছে। এরপর সেই ছেলে ও মেয়ে গা ঢাকা দিয়েছে। মেয়ে ও তার পরিবার যেন কোনো ঝামেলা না করে, এজন্য বিষয়টি জানাতে থানায় অভিযোগ করেন ছেলের বাবা। এ ঘটনার তদন্তভার পেয়ে আসামি ধরতে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেছেন অভিযোগটির তদন্ত কর্মকর্তা এএসআই। বিষয়টি থানার ওসিকে জানালে ক্ষিপ্ত হয়ে আসামি না ধরে উল্টো অভিযোগকারী পরিবারকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। ফলে এ বিষয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতনের দৃষ্টি কামনা করেছে পরিবারটি।
এমন ঘটনা ঘটেছে নীলফামারী সদর থানায়। আর এই অভিযোগ উঠেছে থানাটিতে দায়িত্বরত এএসআই বদিউজ্জামানের বিরুদ্ধে। যদিও তার দাবি, তিনি কোনো টাকা চাননি।
বিজ্ঞাপন
এদিকে, অভিযোগকারী বিষয়টি লিখিতভাবে জানানোর ১০ দিন অতিবাহিত হলেও কোনো সমাধান দিতে পারেনি পুলিশ। তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবারটিকে নানা আইনের কথা শুনিয়ে যাচ্ছেন।
ভুক্তভোগী পরিবারটি জানিয়েছে, নীলফামারী সদর থানার বড় সংগলশী চেয়ারম্যানপাড়ার সেকেন্দার আলীর বড় ছেলে মো. আল খাইরুল বাশারের (৩৫) সঙ্গে পাশের বোচাপাড়া গ্রামের আলো রহমানের বড় মেয়ে নাজমুন আরা বেগমের বিয়ে হয়। এরপর তাদের একটি ছেলে হয়, যার নাম তানভীর (৭)। খাইরুলের স্ত্রী গত ২৪ জানুয়ারি তার বাবা বাড়ি থেকে নিকটস্থ বাজার কাজীরহাটে যাওয়ার কথা বলে লাপাত্তা হয়ে যায়। এরপরও বিষয়টি মেয়ের মা-বাবা ছেলের পরিবারকে জানায়নি। কিন্তু এরমধ্যে ছেলে বিষয়টি জানতে পেরে তার বাবা সেকেন্দার আলীকে জানান। পরে গত ৪ জানুয়ারি দুপুরে বাবা-ছেলে নীলফামারীর সদর থানায় যান। কিন্তু সেখানে দায়িত্বে থাকা ডিউটি অফিসার তাদের বিষয়টি আমলে নেয়নি। পরে তারা রাতে ওসির সঙ্গে দেখা করে অভিযোগ দেন। সেই অভিযোগের তদন্তভার পরে থানার এএসআই মো. বদিউজ্জামানের ওপর। বদিউজ্জামানকে বিষয়টি ভালো করে তদন্তের নির্দেশ দেন ওসি।
ভুক্তভোগী পরিবারটি আরও জানায়, পরে এএসআই বদিউজ্জামান খাইরুল বাশার এবং বাবা সেকেন্দার আলীকে ডেকে নেন। আসামি ধরা হবে এবং খায়রুল বাশারের পলাতক স্ত্রী নাজমুন ও ছেলে ইমরান হোসেন বাদশাকে হাজির করলে দেনমোহরের টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে বলে দাবি করেন তিনি। তাহলে তিনি বিষয়টি সমাধান করে দেবেন বলে তাদের জানান। এরপর বিষয়টি আল খায়রুল বাশারের বাবা থানার ওসিকে জানান। কিন্তু বিষয়টি ওসি এএসআই বদিউজ্জামানকে জানানোর পর থেকে ঘটনার আর কোনো তদন্ত করেননি তিনি। উল্টো টাকা দাবি নিয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগকারী খাইরুল বাশারের পরিবারকে নানাভাবে হয়রানি করাচ্ছেন সেই মেয়েকে দিয়ে। অভিযোগের ১০ দিন অতিবাহিত হলেও এখনো সেই ছেলে মেয়েকে ধরতে পারিনি এএসআই বদিউজ্জামান।
অভিযোগকারী আল খায়রুল বাসার জানান, ২০১৭ সালে মার্চের দিকে পলাতক নাজমুনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের একটি পুত্র সন্তান আসে। সেই ছেলেকে নিয়ে ভালোই সংসার চলছিল। কিন্তু গত দুই বছর থেকে নানাভাবে বুঝতে পারেন তার স্ত্রী পরকীয়া প্রেমে আসক্ত। বিষয়টি তার স্ত্রীকে একাধিকবার নিষেধের পরেও সে কোনো কথা শোনেনি। গেল বছর সেপ্টেম্বরে নাজমুনের প্রেমিক বাদশার সাথে মোবাইলে কথা বলার সময় হাতেনাতে ধরে ফেলেন খাইরুল বাশার। এরপর উল্টো খাইরুলকে ফাঁসানোর জন্য আদালতে মামলা করতে যায় নাজমুন। পরে নাজমুনের বাবা এসে তার মেয়েকে নিয়ে যায়। তখন থেকে বাবার বাড়িতে ছিলেন নাজমুন।
বিজ্ঞাপন
খাইরুল বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা থানায় গিয়েছিলাম। সেদিন প্রথম দিকে কোনো অভিযোগ নেয়নি। উল্টো এএসআই বদিউজ্জামান আমাদের সাথে খুব খারাপ আচরণ করেছে। ওরে ওসি বলায় বিষয়টি গুরুত্ব দেয় কিন্তু আসামি ধরিয়ে দেওয়া এবং তাদেরকে হাজির করার জন্য নাকি এএসআই বদিউজ্জামানকে ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে আমাদেরকে প্রস্তাব দেন তিনি। তাহলে তিনি মেয়ে ছেলেকে হাজির করে তালাকের ব্যবস্থা করবেন! আমরা ভেবেছিলাম পুলিশ বদলে গেছে। অভিযোগ করলে বিচার পাব। কিন্তু এখন দেখছি উল্টো পুলিশ আমাদের হয়রানি করছে। শুক্রবার আমার পলাতক স্ত্রী নাজমুন মোবাইলে কল দিয়ে তিনদিনের সময় বেঁধে দিয়েছে। তাকে দেনমোহরের ৩ লাখ টাকা দিতে হবে। না হলে সে মামলা করবে বলে হুমকি দিয়েছে। নাজমুনের এই হুমকির পেছনে অবশ্যই এএসআই এর হাত রয়েছে। কারণ, এএসআই তাদেরকে না ধরে আমাদেরকে নানান আইনের কথা শোনাচ্ছেন।
খাইরুল বাশারের বাবা সেকেন্দার আলী বলেন, আমি ও আমার ছেলে সাক্ষী এএসআই বদিউজ্জামান আমাদের কাছে টাকা চেয়েছে। বিষয়টি আমরা থানার ওসিকে কেন বললাম, এ কারণে এএসআই বদিউজ্জামান আমাকে কল করে বলেছে আপনি স্যারের কাছে যান। আমি আপনার কাছে টাকা চাইনি বলবেন। আমি তাকে সাফ জানিয়ে দিয়েছি, আমি ওসি স্যারের কাছে মিথ্যা বলতে পারব না। এএসআই আমার ছেলের পলাতক বউ নাজমুন ও তার পরকীয়া প্রেমিক বাদশাকে না ধরে আমাদেরকে আইনের নানান কথা শোনাচ্ছেন। এই নাজমুন এর আগেও ঝামেলা চেষ্টা করেছে। এ বিষয়ে এর আগেও থানায় অভিযোগ জানিয়েছিলাম। তখন থানার এসআই জব্বার এটার তদন্ত করেছিল।
তিনি আরও বলেন, এবার অভিযোগ করে তো এখন সেই নাজমুন আমাদের হুমকি দিচ্ছে, মামলা করবে। তাহলে আমরা পুলিশের কাছে অভিযোগ করে কী লাভ হলো! পুলিশের কাছে অভিযোগ করে মানুষ যদি সমাধান না পায় তাহলে আমরা যাব কোথায়! আমি প্রয়োজনে জেলার এসপিকে বিষয়টি জানাব। পুলিশ ছেলে-মেয়ের অবস্থান শনাক্ত করেছে কিন্তু তাদেরকে থানায় হাজির করছে না। আমরা বিষয়টির কারণে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছি। বারবার জানানোর পরও এএসআই বদিউজ্জামান এখন মেয়েকে দিয়ে খেলছে। আমরা বিষয়টি সমাধান চাই এবং এএসআই আমাদের কাছে যে ঘুষ দাবি করেছে এজন্য পুলিশ প্রশাসনের কাছে তার শাস্তি চাই।
এ বিষয়ে এএসআই বদিউজ্জামান ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি তাদের কাছে কোনো টাকা চাইনি। আর কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেই তাকে ধরতে হবে এমন কোনো কারণ নেই। আমি পলাতক ছেলে মেয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। মেয়ে সংসার করতে চায় না। যে ছেলে তাকে পালিয়ে নিয়ে গেছে সে থানায় আসতে চেয়েছে কিন্তু এখনো আসেনি। গত রোববার আসার কথা ছিল তবু আসেনি সে।
এ ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা এএসআই বদিউজ্জামান অভিযোগকারীর কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেছেন বিষয়টি থানার ওসি এমআর সাঈদকে জানানো হলে তিনি বলেন, এমন তো হওয়ার কথা না। আমি এএসআইয়ের সাথে কথা বলতেছি।
নীলফামারী জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদপুর মোর্শেদ আলম একাধিকবার কল করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
এমআইকে/এমএইচটি

