মেলা নামটি শুনলেই মনে এক ধরনের অভূতপূর্ব আনন্দের উচ্ছ্বাস জেগে ওঠে। আর পোড়াদহ মেলাটি সেই আনন্দ ও উচ্ছ্বাসের আরেক ধাপ যেন বাড়িয়ে দেয়। বগুড়া জেলায় বা আশপাশের এমন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না, যারা পোড়াদহ মেলার নাম শোনেনি। প্রায় ৪০০ বছরের বেশি সময় ধরে পুরোনো ঐতিহ্য নিয়ে সগৌরবে টিকে আছে উত্তরবঙ্গের রাজধানী খ্যাত বগুড়ার ‘পোড়াদহ মেলা’। লোকজ মেলাটি বগুড়া জেলা শহর থেকে ১১ কিলোমিটার পূর্বদিকে ইছামতী নদীর তীরে গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের পোড়াদহ নামক স্থানে অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবছর মাঘ মাসের শেষ বুধবারে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা। এটিকে মাছের মেলাও বলা হয়ে থাকে। বিশাল আকৃতির বাঘাইড়, রুই-কাতলা, মৃগেল, ব্রিগেড, চিতল, সিলভার কার্পসহ নানা প্রজাতির মাছ উঠে এ মেলায়। যা চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। আবার অনেকেই এটিকে জামাই মেলাও বলে থাকেন। মূলত জামাইদের বরণ করে মেলা শুরু হয়। মেলা উপলক্ষ্যে আশপাশের গ্রামে যেসব মেয়েদের বিয়ে হয়েছে তারা জামাই নিয়ে বাপের বাড়িতে আসেন। মেলায় যেমন মাছের আকর্ষণ, তেমনি বাড়ি বাড়ি জামাই আকর্ষণ। কোন জামাই কত বড় মাছ কিনেছে, তা নিয়ে চলে প্রতিযোগিতা। উৎসবে মাতোয়ারা সবাই। এলাকায় আনন্দের ধুম পড়ে যায়। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই উৎসবে মেতে ওঠেন।
এই পোড়াদহ মেলাকে ঘিরে উপজেলার দুর্গাহাটা হাইস্কুল মাঠ, দাড়াইল বাজার, সাবগ্রাম, অদ্দিরগোলা, পাচমাইল বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে মেলা বসানো হয়। মেলার আকর্ষণ বড় বাঘাইড়, বোয়াল, কাতলা, রুই, ব্ল্যাক কার্প, গ্লাস কার্প, মৃগেল, সিলভারকার্প, বিগ্রেড, কার্প, চিতলসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের মাছ। মেলায় ৩৫ কেজি ওজনের বাঘাইড় বিক্রি হয়েছে ১৭০০ টাকা কেজি, ২৭ কেজি ওজনের কাতলা বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৪০০ টাকা কেজি, ২০ কেজি ওজনের ব্ল্যাক কার্প বিক্রি হয়েছে ১ হাজার টাকা কেজি এবং ১৫ কেজি ওজনের মিষ্টি মাছ ৬৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
রকমারি জাতের মাছ এ মেলার প্রধান আকর্ষণ। বুধবার ভোরের আগেই আড়তে আনা হয় বড় আকারের মাছগুলো। আর ভোর থেকেই আড়তে আড়তে ছুটে যান খুচরা ব্যবসায়ীরা। চাহিদা অনুযায়ী তারা মাছ কেনেন। পরে মাছের পসরা সাজিয়ে দোকানে দোকানে জেঁকে বসেন এসব ব্যবসায়ীরা। দিনভর দোকানগুলোতে চলে ধুমধামে কেনাকাটা।
রুই, কাতলা, মৃগেল, বোয়াল, সিলভার কার্প, বিগহেড, কালবাউস, পাঙ্গাসসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যায় এ মেলায়। মেলায় বড় মাছ রুই ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি, কাতলা ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা কেজি, সিলভার কার্প ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি, কার্প মাছ ৩৫০ টাকা কেজি, চিতল ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি, বোয়াল ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি, আইর ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজি, গ্লাস কার্প ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি, যমুনার পাঙ্গাস ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি এবং ২ থেকে ৪ কেজি ওজনের ছোট মাছ ৩০০-৪০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে।

বাহারি মিষ্টান্ন সামগ্রী এ মেলার আরেক আকর্ষণ। মাছ আকৃতির মিষ্টি, রসগোল্লা, সন্দেশ, জিলাপি, নিমকি, তিলের নাড়ু, খই, শুকনা মিষ্টি পাওয়া যায়। দেড় থেকে দুই কেজি ওজনের মিষ্টি পোড়াদহ মেলার অন্যতম আকর্ষণ। ১২ কেজি ওজনের মাছ আকৃতির মিষ্টি ছিল এবার প্রধান আকর্ষণ।
বিজ্ঞাপন
এছাড়া মেলায় বাহারি ডিজাইনের কসমেটিকস, খেলনা, গিফট সামগ্রী, চুড়ি, কানের দুল, মালা, কাজলসহ নানা ধরনের প্রসাধনী ও খেলনা সামগ্রী পাওয়া যায়। এছাড়া এ মেলায় পাওয়া যায় কাঠের, স্টিল ও লোহার বিভিন্ন আসবাবপত্র।
প্রতিনিধি/একেবি

