রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

বাকৃবির আশরাফুল হক হলে ‘টর্চার কর্নার’: ভয়াবহ নির্যাতনের ছবি

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, বাকৃবি
প্রকাশিত: ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:৩৯ পিএম

শেয়ার করুন:

বাকৃবির আশরাফুল হক হলে ‘টর্চার কর্নার’: ভয়াবহ নির্যাতনের ছবি
বাকৃবির আশরাফুল হক হলে ‘টর্চার কর্নার’: ভয়াবহ নির্যাতনের ছবি

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) আশরাফুল হক হলে গত কয়েক বছরে নিষিদ্ধ সংগঠন ‘ছাত্রলীগ’ কর্তৃক শিক্ষার্থীদের অমানবিক নির্যাতনের একাধিক ছবি প্রদর্শন করা হয়েছে। ওই হলের শিক্ষার্থীরা এই নির্যাতনের শিকার হওয়া শিক্ষার্থীদের শরীরের বিভিন্ন স্থানের আঘাতের চিত্র উপস্থাপন করেন। এসব ছবি দেখে চমকিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া।

মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) রাতে বাকৃবির আশরাফুল হক হলে জুলাই বিপ্লব শীতকালীন টুর্নামেন্টের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আগে সাময়িকভাবে নির্মিত ‘টর্চার কর্ণার’-এ এসব ছবি প্রদর্শন করা হয়। প্রদর্শনীতে তৎকালীন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দ্বারা শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীরা তাদের অনুভূতিও ব্যক্ত করেন।


বিজ্ঞাপন


নির্যাতনের বর্ণনা

আশরাফুল হক হলের আবাসিক ছাত্র মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ওই দিন আমাকে গেস্টরুমে ডাকা হয় ছাত্রদল করার অভিযোগে। আমি অসুস্থ ছিলাম এবং অ্যাজমার সমস্যাও ছিল। আমাকে ২৩৪ নম্বর রুমে নিয়ে একের পর এক থাপ্পর মারা হয়। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ নেতা আজহার রড দিয়ে আমার হাঁটুতে আঘাত করলে আমি মাটিতে পড়ে যাই। তখন শ্বাসকষ্ট শুরু হলে আমাকে ঔষুধের দুই ডোজ খাওয়ানো হয় এবং মারধর চলতে থাকে। পরে আমাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসার পর আমাকে ছাত্রদল করার স্বীকারোক্তি দিতে বলা হয় এবং পরবর্তীতে আমাকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়।’

আশরাফুল হক হলের আরেক আবাসিক ছাত্র রিফাত বিন শায়েকুজ্জামান বলেন, ‘২০২২ সালের ১৩ ডিসেম্বর বিকেলে আমি ক্লাস শেষে হল থেকে বের হচ্ছিলাম। হঠাৎ এক সিনিয়র আমাকে গেস্টরুমে নিয়ে শুরু হয় অমানবিক নির্যাতন। থাপ্পর ও লাথি মারার পর আমাকে বিশেষ পলিটিকাল রুমে নিয়ে হকি স্টিক দিয়ে পিটানো হয়। এক পর্যায়ে আমার কানের পর্দা ফেটে যায় এবং নাক-মুখ দিয়ে রক্ত পড়তে থাকে। দীর্ঘ ৬ ঘণ্টা মারধরের পর আমাকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়।’

পুরস্কার বিতরণী ও উপস্থিতি


বিজ্ঞাপন


পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আশরাফুল হক হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলম মিয়ার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাকৃবি ভিসি অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. শহিদুল হক, মাৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম সরদার, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল আলীম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. হুমায়ূন কবির, এগ্রোমেটিওরোলজি বিভাগের বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. আহমদ খায়রুল হাসান, সহযোগী ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ।

ভিসির মন্তব্য

এসময় ভিসি অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা যখন ছাত্র ছিলাম তখন এমন অত্যাচার বা গেস্টরুমের কালচার ছিলো না। আমরা স্বাধীনভাবে গড়ে উঠার ও পড়াশোনার পরিবেশ পেয়েছি।’

তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মেধার চর্চা করতে হবে। বাংলাদেশের অনেক মেধাবী বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তাদের মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। বাকৃবির শিক্ষার্থীরাও তাদের মেধার মাধ্যমে পৃথিবী জয় করবে। দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় বাকৃবির ভূমিকা সকলেই শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করে।’

এছাড়া, ওই অনুষ্ঠান উপলক্ষে ‘জুলাই বিপ্লব কর্ণার’ ও টুর্নামেন্ট সম্পর্কিত ‘খেলাধুলা কর্ণার’ স্থাপন করা হয়।

ভিসির আশ্বাস

ভিসি শিক্ষার্থীদের ডাইনিংয়ের মান উন্নত করার আশ্বাসও দেন। তিনি বলেন, ‘যতটা সম্ভব কম খরচে উন্নত মানের খাবার সরবরাহ করা হবে।’

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর