যশোর শহরের চায়ের দোকান, হোটেল, রেস্তোরাঁ, ফাস্টফুডের দোকানে পান করানো হচ্ছে সাপ্লাইয়ের পানি। ফলে পানিবাহিত রোগে প্রতিদিনই আক্রান্ত হচ্ছেন শহরবাসী। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ডায়রিয়া, আমাশয়সহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগীর সংখ্যা। তারা মূলত শহরের সাপ্লাইয়ের পানি পানের কারণে অসুস্থ হচ্ছেন।
সম্প্রতি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক যশোর পৌরসভার খাবারের দোকানের পানির গুণগতমান নির্ধারণে একটি সমীক্ষা চালান। সমীক্ষার ফলাফলে সরবরাহকৃত পানির নমুনায় অণুজীবের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে।
গবেষণা দলটির প্রধান অধ্যাপক সাইবুর মোল্যা বলেন, পৌরসভার বিভিন্ন চায়ের দোকান, রাস্তার পাশের ফাস্ট ফুডের দোকান, সাধারণ রেস্তোরাঁ ও সজ্জিত রেস্তোরাঁসহ মোট ৩৫টি স্থানের পানির নমুনা সংগ্রহ করে এর গুণগতমান যাচাই করা হয়। গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, নমুনাগুলোর পানির অস্বচ্ছতা (টার্বিডিটি), বৈদ্যুতিক পরিবাহিতা, পিএইচ, মোট দ্রবীভূতি দ্রবণ, নাইট্রেট সালফেট, ফসফেটের মানসমূহ বাংলাদেশ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত সীমার মধ্যে থাকলেও বেশ কয়েকটি নমুনায় ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের ঘনত্ব সংস্থাটির মানের চেয়ে বেশি ছিল। এছাড়া ৪৬% নমুনায় লৌহের ঘনত্ব বাংলাদেশ অনুমোদিত সীমা ছাড়িয়েছে। পাশাপাশি বেশিরভাগ নমুনা ফিকাল কলিফর্ম (স্তন্যপায়ী প্রাণীর পেট থেকে মলমূত্রের মাধ্যমে বা মৃতদেহ পচে জলে বা মাটিতে মেশা বিভিন্ন প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া) দ্বারা দূষিত হয়েছে। নমুনার মধ্যে রাস্তার পাশের ফাস্টফুডের ও ফুচকার দোকানগুলোতে সরবরাহ করা পানি জৈবিকভাবে খুবই দূষিত।
অধ্যাপক সাইবুর মোল্যা বলেন, যশোর পৌরসভার খাবারের দোকান এবং রেস্তোরাঁগুলোতে সরবারাহকৃত পানি জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক ও হুমকিস্বরূপ। সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে যশোর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ও দায়িত্বরত প্রশাসনকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে।
পৌরসভার তথ্য মত্রে, যশোর শহরে তিন শতাধিক চায়ের দোকানসহ পাঁচ শতাধিক হোটেল-রেস্তোরাঁ, ফাস্টফুড শপ রয়েছে। পৌরসভা থেকে ব্যবসায়িক অনুমোদন (ট্রেড লাইসেন্স) নিয়েছে মাত্র ১৬৯টি দোকান। এর মধ্যে হোটেল-রেস্তোরাঁ রয়েছে ৯৫টি, ফাস্ট ফুডের দোকান ৪৭টি ও চায়ের দোকান ২৭টি।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি সদর উপজেলার চুড়ামনকাটির পুলতাডাঙ্গা গ্রামের আমিন উদ্দিন বলেন, দুই দিন আগে বড় মেয়ে বায়না ধরে ফুচকা খাবে। ওই দিন শহর থেকে সবার জন্য ফুচকা নিয়ে যাই। ফুচকা খাওয়ার পর ওই রাত থেকে পেটে সমস্যা শুরু হয়। পরে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সুস্থ হতে হয় তাকে।
বিজ্ঞাপন

একই ওয়ার্ডে ভর্তি আকবর হোসেন জানান, প্রতিদিন নিয়মিত হোটেলে খাওয়া হয়। বুধবার তিনি খাবার খান আরএন রোডের এক হোটেলে। এরপর থেকে আমাশয়সহ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন।
যশোর পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত সেনিটারি ইন্সপেক্টর আসাদুজ্জামান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন যাবত সেনিটারি ইন্সপেক্টরের পদ শূন্য রয়েছে। অনেকবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও কোনো নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। জনবল কম থাকায় নিয়মিত তদারকি হয় না।’
যশোর পৌরসভার লাইসেন্স ইন্সপেক্টর মেজবাহ উদ্দিন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘একাধিকবার অভিযান চালানো হয়েছে শহরের বিভিন্ন ফাস্টফুডসহ টি স্টলে। দোকানদারদের জরিমানাসহ সিলগালা করা হয়েছে। তারপরও তারা থেমে নেই। বর্তমানে পৌরসভায় জনবল কম থাকায় অভিযান চালানো সম্ভব হচ্ছে না।’
জেবি

