সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

বান্দরবানে এলজিইডির খাল খনন প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ

জেলা প্রতিনিধি, বান্দরবান
প্রকাশিত: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৫৪ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

বান্দরবানের আলীকদমে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) কেয়াং ঝিরি খাল খনন প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ৭০ শতাংশ বিল নিয়ে কাজের মেয়াদ শেষ হলেও নিয়ম অনুযায়ী কাজ সমাপ্ত না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা জানান, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আলীকদম উপজেলা সদরে পানি সংকট নিরসনে বাস স্টেশন এলাকা থেকে জামাল চেয়ারম্যান বাড়ির মাতামূহুরী নদী পর্যন্ত ১২শ মিটার কেয়াং ঝিড়ি খাল খনন প্রকল্পের কাজ শুরু করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। যেখানে প্রকল্পটির মাধ্যমে হিন্দু পাড়া, নাজির চেয়ারম্যান পাড়া, বাজার পাড়া, থানা পাড়া, আলীম উদ্দিন পাড়া, পোষ্ট অফিসসহ কয়েকটি পাড়ার অন্তত ১০ হাজার জনগণ উপকৃত হওয়ার কথা থাকলেও কাজটি সম্পন্ন না করায় দুর্ভোগ বেড়েছে কয়েকগুন।


বিজ্ঞাপন


তারা আরও জানান, এছাড়া প্রকল্পটিতে খাল খনন, পায়ে হাটার রাস্তা, সৌন্দর্য বর্ধনে ইউনি ব্লক স্থাপন ও বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে বেঞ্চ বসানোসহ প্রকল্পটিতে ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৭২ লাখ টাকা এবং কাজটি বাস্তবায়নের সর্বশেষ সময়সীমা ছিল ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত, যার দায়িত্ব পেয়েছিলেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনএস এন্টারপ্রাইজ। তবে কাজটি জনবান্ধব হওয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে উন্নয়নের নামে শুধুই যেন মাটি বিক্রয় করা হয়েছিল। খান খনন করে সৌন্দর্য বর্ধনে ইউনি ব্লক বসানো ও স্থানীয়দের বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে খালটির তীরে বেঞ্চ বসানোর কথা থাকলেও মাটি কাটা ছাড়া কোনো কিছুই করেনি।ইতোমধ্যে প্রকল্পের মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। সঠিক সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ না করায় খনন করা খালটির দুই পাড় ভেঙ্গে পড়ে ভরাট হয়ে গেছে খালটি। ফলে এই প্রকল্পটিতে এলজিইডির কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের যোগসাজশে সরকারি টাকা অপচয় ছাড়া তেমন কিছুই দৃশ্যমান হচ্ছে না।

আলীকদম সদর ইউপির বাসিন্দা মানিক মিয়া, মো. হোসেন ও সুমিত্র তঞ্চঙ্গ্যা জানান, আলীকদম উপজেলার  প্রাণকেন্দ্র ও সবচেয়ে জনবসতি পূর্ণ এলাকায় উন্নয়নের নামে কেয়াং ঝিরি খাল খনন,খালের দুইপাশের তীরে ইউনি ব্লক বসিয়ে সৌন্দর্য বর্ধন, ওয়াক ওয়ে ও বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে বেঞ্চ বসানোর প্রকল্পটি সম্পূর্ণ না করায় এলাকায় বেড়েছে  দুর্ভোগ। প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হলেও ৫০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন না করেই প্রায় ৭২ লাখ টাকা বরাদ্দের মধ্যে একটা ৫০ লাখ টাকা বিল উত্তোলন করে ফেলেছে ঠিকাদার, যা মোট বরাদ্দের ৭০ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে শুকনো মৌসুম থাকলেও কাজ বন্ধ রেখেছেন ঠিকাদার। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) বান্দরবানের আলীকদম উপজেলা প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদকে ম্যানেজ করে নেওয়ার ফলে এই প্রকল্পের তদারকিও করছেন না অফিস কর্তৃপক্ষ।

কাজটির দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার মো. কায়সারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে একাধিক বার মোবাইলে কল ও ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।


বিজ্ঞাপন


এ বিষয়ে জানতে সহকারী প্রকৌশলী জয় সেনকে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টায় কল ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

পক্ষান্তরে উপজেলা প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রকল্পের অগ্রগতি বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এই প্রতিবেদককে মুঠোফোনে বলেন, ‘কার উসকানিতে নিউজ করতেছেন?’

বিস্তারিত না বলে উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শরিফকে তার মুঠোফোন দিয়ে প্রকল্পের অগ্রগতিসহ বিস্তারিত বলতে বলেন। উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শরিফ বলেন, প্রকল্পের কাজ ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। মোট বরাদ্দ ৭৫ লাখ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকা ঠিকাদারকে বিল প্রদান করা হয়েছে। প্রকল্পের কাজের মধ্যে ইউনি ব্লক তৈরি, ফুট ওয়াক ওয়ে নির্মাণ ও বেঞ্চ তৈরির কাজ করা হয়নি।

তবে দ্রুত কাজ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গত ৭ মাস ধরে বৃষ্টির কারণে কাজ করতে পারেনি ঠিকাদার। এছাড়া মেয়াদ শেষ হলেও পুনরায় ১ বছর সময় দেওয়া যায় ঠিকাদারকে।’

‘এ নিয়ে নিউজ করে ক্ষতি করার কী দরকার আছে’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বান্দরবান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের সিনিয়র প্রকৌশলী পারভেজ সরোয়ার হোসেন জানান, সারাদেশে পুকুর ও খাল উন্নয়ন (আইপিসিপি) প্রকল্পের অধীনে প্রায় ৭২ লাখ টাকার খাল খনন প্রকল্পটির প্রকল্প মেয়াদ শেষ হলেও ঠিকাদারের পক্ষ থেকে কোন প্রকার সময় বাড়াতে আবেদন করেনি। এর মধ্যে ঠিকাদারকে ৫০ লাখ টাকা বিল প্রদান করা হয়েছে।তবে নির্দিষ্ট মেয়াদ কালের মধ্যে কাজটি শেষ না করায় ঠিকাদারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান তিনি।

প্রতিনিধি/এমএইচটি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর