জয়পুরহাটে চলতি মৌসুমে হিমাগারগুলোতে সংরক্ষণ ভাড়া প্রতি কেজি আলু ১ টাকা বৃদ্ধির ঘোষণা করা হয়েছে। ৭ টাকার স্থলে ৮ টাকা নেওয়া হবে। হিমাগারের ভাড়া বৃদ্ধির ফলে খাবার আলু ও বীজআলুর দাম বাড়ার আশঙ্কা করছেন ভোক্তা, ব্যবসায়ী এবং কৃষি বিপণন অধিদফতর।
বিদ্যুতের দাম না বাড়লেও প্রতি কেজি আলু সংরক্ষণে এক টাকা বাড়ানোকে অযৌক্তিক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিজ্ঞাপন
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবার জয়পুরহাটে ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে এবার চাষ হয়েছে ৪৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। সে তুলনায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৯ লাখ ৩১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন আলু আশা করা হচ্ছে। উৎপাদিত আলুর গড়ে ৩০ শতাংশ জয়পুরহাটের ১৯টি হিমাগারে সংরক্ষণ হবে। এতে করে প্রায় ২ লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি আলু সংরক্ষণ হবে। আগামী ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে এসব আলু ব্যবসায়ী ও কৃষকরা সংরক্ষণ করবে। জুন মাসের পর মজুদ করা আলু সারাবছর ধরে বাজারে বিক্রি হয়।
হিমাগারে সংরক্ষণ করা আলু মজুদের ওপর নির্ভর করে মৌসুমের শেষে দাম কেমন হবে। গত মৌসুমে হিমাগারে আলু রাখার জন্য প্রতি কেজির দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭ টাকা। এবার এক টাকা বাড়িয়ে তা ৮ টাকা কেজি করা হয়েছে। হিমাগার ভাড়া ৮ টাকা হওয়ায় আলুর দাম মৌসুম শেষে অতিরিক্ত বাড়ার আশঙ্কা করছেন ভোক্তা ও ব্যবসায়ীরা।
হাতিয়র বহুমুখী কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম বলেন, হিমাগার মালিকরা গত বছরও জোটবদ্ধ হয়ে আলু ভাড়া বৃদ্ধি করেছিল। আজ আবারও প্রতিকেজিতে ১ টাকা বৃদ্ধি করেছে। এতে করে বাজারে প্রভাব লেগেই ছিল। এবারও তারই আগাম আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিজ্ঞাপন
বটতলী বাজার এলাকার বেলাল হোসেন বলেন, হিমাগার ভাড়া যতই বাড়বে, ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠবে। আর প্রভাব ভোক্তাদের ওপরেই আসবে। তারা খেয়াল খুশিমতো যখন-তখন ভাড়া বৃদ্ধি করেই যাচ্ছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
পাঁচবিবি উপজেলার চাঁনপাড়া সাথী-৩ হিমাগারের ব্যবস্থাপক রতন কুমার চৌধুরী বলেন, শুনেছি হিমাগার মালিকরা সভা করে প্রতি কেজি আলুর ভাড়া ১ টাকা বৃদ্ধি করেছে। তবে এ সংক্রান্ত কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এখনও কোনো পত্র পাইনি।
বগুড়া জেলা কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি আলহাজ তোফাজ্জল হোসেন জানান, হিমাগারে আলু রাখার ভাড়া নির্ধারণ করে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন। দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, শ্রমিক খরচ ও বিদ্যুৎ খরচ বেড়ে যাওয়ার দাম বাড়ানো হয়েছে।
জয়পুরহাট কৃষি বিপণন অধিদফতরের কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, কেজিতে এক টাকা ভাড়া বাড়লে এই চাপ ভোক্তা পর্যায়ে পড়বে। সুযোগ বুঝে ব্যবসায়ীরা আলুর দাম বাড়িয়ে দিবে। এবার বিদ্যুতের দাম বাড়েনি, অন্য কোনো সমস্যাও নেই, তারপরও এক টাকা বাড়ানোয় পুরো চাপ পড়বে ভোক্তাদের ওপর।
তিনি আরও বলেন, হিমাগার মালিকরা যদি প্রকৃত কৃষকদের জন্য ভাড়ার ব্যাপারে কিছু ছাড়ের ব্যবস্থা করেন এবং কৃষকদের বীজআলু রাখার ব্যাপারে উৎসাহিত করেন তবে পরবর্তী মৌসুমে বীজআলুর কোনো সংকট হবে না।
প্রতিনিধি/এসএস