বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০২৫, ঢাকা

রংপুরে স্ত্রীকে এসিডে পুড়িয়ে মারলেন ‘পাষণ্ড’ স্বামী

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৫৮ এএম

শেয়ার করুন:

রংপুরে স্ত্রীকে এসিডে পুড়িয়ে মারলেন ‘পাষণ্ড’ স্বামী

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় স্বামীর ছোড়া এসিডে এক গৃহবধূর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতে সোমবার রাতে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেন অভিযুক্ত রুবেল মিয়া। 

গঙ্গাচড়া থানা পুলিশ মঙ্গলবার সকালে বাড়ি থেকে নিশির মরদেহ উদ্ধার করে। ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন অভিযুক্ত রুবেল মিয়া। 


বিজ্ঞাপন


এলাকাবাসী জানান, উপজেলার দক্ষিণ চেংমারী গ্রামের সেকেন্দার আলীর ছেলে রুবেল মিয়ার সঙ্গে পাশ্ববর্তী পূর্ব নবনীদাস গ্রামের মোহাম্মদ আলীর মেয়ে নিশি আক্তারের বিয়ে হয়। ইতিমধ্যে সংসারে তাদের তিনটি সন্তান রয়েছে। রুবেল মিয়া জাল টাকা ও মাদক কারবারি করেন। স্ত্রী নিশি এসবের প্রতিবাদ জানালে তার ওপর অমানসিক নির্যাতন করতেন। এমনকি টাকার লোভে অনৈতিক কাজে স্ত্রীকে বাধ্য করা হত। সহ্য করতে না পেরে নিশি দফায় দফায় বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিলে সেখানে গিয়ে ঘরবাড়ি ভাঙচুরসহ শ্বশুড়বাড়ির লোকজনকে মারধর করে স্ত্রীকে ফেরত নিয়ে আসতেন রুবেল মিয়া। সর্বশেষ গত ২৫ ডিসেম্বর শ্বশুরবাড়ি থেকে নিশিকে নিয়ে এসে মারধর করে এসিডে ঝলসে দেওয়া হয়। অবস্থা গুরুতর হলে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখান থেকে রেফার্ড করা হলে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয় নিশিকে। তার ভালো হয়ে ওঠার কোনো সম্ভাবনা না থাকায় ঢাকা থেকে ফের রংপুর মেডিকেলে আনা হয়। সেখান থেকে দু’দিন আগে বাড়িতে নিয়ে আসার পর সোমবার রাতে মারা যান নিশি। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিবেশিরা জানান, স্ত্রী মারা যাওয়ার পর ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহের লক্ষ্যে রুবেল মিয়া তার মোটরসাইকেলটি আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেন, যাতে অগ্নিকাণ্ডে নিশির মৃত্যু হয়েছে বলে সবাই মনে করে। রুবেল মিয়া তার বাড়িতে এলাকার কাউকে ঢুকতে দিতেন না বলেও জানান প্রতিবেশীরা।
 
নিহত নিশির ভাবি ফারজানা বেগম বলেন, মাদক ও জাল টাকার কারবারি রুবেল মিয়া অমানসিক নির্যাতন করত নিশিকে। অন্য লোকদের সঙ্গে অনৈতিক কাজেও বাধ্য করা হত। সোমবার রাতে রুবেলের বাড়িতে শেষবারের মত নিশিকে দেখার বর্নণায় তিনি জানান, মাথা থেকে হাটু পর্যন্ত তার শরীরে পচন ধরেছিল। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল নিশি। এর আগেও নিশির গোপনাঙ্গ এসিডে ঝলসে দেওয়া হয়েছিল অভিযোগ করেন তিনি।

নিশির মা আমেনা বেগম বলেন, ‘হাসপাতালে আমিও সঙ্গে ছিলাম। অবস্থা বেগতিক দেখে রুবেল মিয়া নিশিকে ঢাকা থেকে আনতে অস্থির হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত মেয়েটাকে সে পুড়িয়ে পারল। আমি এর বিচার চাই।’

নিশির বাবা মোহাম্মদ আলী বলেন, মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পর থেকেই রুবেল মিয়ার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়েছি। শুধু মেয়েকেই নয়, সে আমার বাড়ি ভাঙচুরসহ বাড়ির সবাইকে পিটিয়েছে। এর আগে এ ব্যাপারে থানাসহ প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল বলেও জানান তিনি।


বিজ্ঞাপন


গঙ্গাচড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল এমরান বলেন, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য দুপুরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্ত রুবেল মিয়া পলাতক রয়েছেন। নিশিকে এসিডে পুড়িয়ে মারা হয়েছে কি না তা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ছাড়া বলা মুশকিল। তবে সুরতহাল রিপোর্টে দেখা যায়, তার শরীরে দগ্ধের ক্ষত রয়েছে। এ ব্যাপারে অভিযোগ পেলে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে বলেও জানান তিনি।

ইএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর