মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

দাম ভালো পাওয়ায় খুশি চাষিরা, বিদেশেও রফতানি হচ্ছে কক্সবাজারের সুপারি

জেলা প্রতিনিধি, কক্সবাজার
প্রকাশিত: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০১ এএম

শেয়ার করুন:

দাম ভালো পাওয়ায় খুশি চাষিরা, বিদেশেও রফতানি হচ্ছে কক্সবাজারের সুপারি

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কক্সবাজারে সুপারি ফলন বেড়েছে। কক্সবাজারে উৎপাদিত সুপারি দেশীয় চাহিদা পূরণ করে মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। এদিকে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় সুপারির দামও ভালো  পাচ্ছেন চাষিরা। সুপারি সাইজে বড়,  স্বাদ ও মানে সমৃদ্ধ হওয়ায় সারাদেশে ব্যাপক সুনাম রয়েছে এসব সুপারির।

জেলায় সবচেয়ে বেশি সুপারি উৎপাদন হয় উখিয়া উপজেলার সোনারপাড়া এবং টেকনাফের সাবরাং এলাকায়। স্থানীয় এক একটি হাটে অন্তত ৭০-৮০ লাখ টাকার সুপারি বিক্রি হচ্ছে।


বিজ্ঞাপন


চাষিরা জানান, পাঁচ বছর আগেও প্রতিটি কাঁচা সুপারি বিক্রি হতো ২ থেকে ৩ টাকায়। এখন ৬ থেকে ৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলে অতিথি আপ্যায়নে পানের খিলির ঐতিহ্য রয়েছে। বিয়েসহ সামাজিক নানা অনুষ্ঠানে রাখা হয় পানের বাটা। পানের সঙ্গে সুপারি মিশিয়ে তৈরি হয় পানের খিলি।

thumbnail_IMG-20241220-WA0008

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, জেলার উখিয়া, টেকনাফ, রামু, কক্সবাজার সদর, ঈদগাঁও,  চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় ৮ হাজার ৬৪৫ একর জমিতে সুপারি বাগান রয়েছে। কৃষি বিভাগ কাঁচা সুপারির পরিবর্তে শুকনা সুপারির হিসাব রাখে। কৃষি বিভাগের হিসাব মতে,  ৮ হাজার ৬৪৫ একর জায়গায় শুকনা সুপারি উৎপাদিত হবে ১২ হাজার ৯৬৭ মেট্রিক টন। প্রতি কেজি শুকনা সুপারির দাম ৩০০ টাকা ধরলে ১২ হাজার ৯৬৭ মেট্রিক টনের দাম হয় ৩৯০ কোটি টাকা। পাঁচ কেজি কাঁচা সুপারি থেকে পাওয়া যায় এক কেজি শুকনা সুপারি। তবে চাষিরা জানান, প্রতি একর জায়গায় কাঁচা সুপারি উৎপাদিত হয় ১৮ দশমিক ৫ মেট্রিক টন। কৃষকদের হিসাব মতে,  ৮ হাজার ৬৪৫ একর জায়গায় সুপারি উৎপাদন হবে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন, যার বাজারমূল্য প্রায় ৬০০ কোটি টাকা।

উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের ইনানী উপকূলের গ্রামগুলো সুপারি বাগানে ভরপুর। সম্প্রতি ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি গাছে সুপারি ঝুলে রয়েছে।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন

রাজবাড়ীতে পেঁয়াজের বীজে স্বপ্নের আবাদ

চাষি গিয়াস উদ্দিনের বাড়ির চারপাশে সুপারিগাছ আছে ৪৩০টি। প্রতিটি গাছে ৫০-২০০টি সুপারি ফলন হয়েছে।

চাষি গিয়াস উদ্দিন বলেন, অক্টোবর মাস থেকে গাছের সুপারি পাকতে শুরু করেছে। বেচাবিক্রিও তখন থেকে শুরু হয়। ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত গত দুই মাসে তিনি চার লাখ টাকার সুপারি বিক্রি করেছেন। গাছে আরও চার-পাঁচ লাখ টাকার সুপারি আছে। সব মিলিয়ে তিনি এবার ৯ লাখ টাকার সুপারি বিক্রি করার আশা করছেন। গত বছর বাগানের সুপারি বিক্রি করে সাত লাখ টাকা পেয়েছিলেন বলে জানান তিনি।

thumbnail_IMG-20241220-WA0009

ইনানী সমুদ্র সৈকতের পাশে সোনারপাড়া গ্রাম। এই গ্রামের প্রতিটি  ঘরে  সুপারি বাগান রয়েছে। গাছ থেকে সুপারি সংগ্রহ করে, সেসব সুপারি ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক (টমটম) এবং জিপ গাড়িতে বোঝাই করে বিক্রির জন্য আনা হয় সোনারপাড়া বাজারে। সপ্তাহের প্রতি রোববার ও বুধবার দুই দিন সুপারির বড় বাজার বসে। প্রতি হাটে অন্তত ৭০-৮০ লাখ টাকার সুপারি বিক্রি হয়।

বেশির ভাগ সুপারি সরবরাহ হয় কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, বগুড়া, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট, নোয়াখালী, ফেনীসহ বিভিন্ন জেলাতে।

গত বুধবার দুপুরে সোনারপাড়া বাজারে গিয়ে দেখা যায় লাল সুপারিতে ভরপুর বাজার। প্রতি পণ (৮০টি)  সুপারি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৪৫০ টাকায়।

আরও পড়ুন

কমলা চাষে জাহাঙ্গীর আলমের সাফল্য

সুপারি চাষি মহিউদ্দিন বলেন, সকাল সাতটা থেকে সুপারি বিক্রি শুরু হয়। দুপুর ১২টা পর্যন্ত তিনি ১০ লাখ টাকার সুপারি বিক্রি করেছেন। গত বছর প্রতি পণ সুপারি বিক্রি করেন ২৮০-৩৮০ টাকায়। এবার ১০০-১৫০ টাকা বেশি পাচ্ছেন। তিনি বলেন, সোনারপাড়ার সুপারি আকারে বড়, স্বাদেও মজা। এই সুপারি ঢাকা ও রাজশাহী অঞ্চলে ৭-৮ টাকায় বিক্রি হয়।

সুপারি কিনতে আসা ঢাকার ব্যবসায়ী আমির জাফর বলেন, সোনারপাড়ার সুপারির ভেতরে কষ কম থাকে, আকারেও বড়। ১০-১৫টি সুপারিতে এক কেজি ওজন হয়। বড় আকারের সুপারি বিদেশে রফতানি করা হয়

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি রাসেল চৌধুরী বলেন, উখিয়া উপজেলার হলদিয়া পালং, জালিয়াপালং, ইনানী, সোনারপাড়া, রুমখা, মরিচ্যা, চেপটখালীসহ অন্তত ১২-১৫টি গ্রামে সুপারির চাষ হয়। ধারণা করা হচ্ছে চলতি মৌসুমে অন্তত ৬০ কোটি টাকার সুপারি বিক্রি হবে।

thumbnail_IMG-20241220-WA0006

সোনারপাড়ার পাশাপাশি মরিচ্যা, কোটবাজারেও সুপারি বিক্রি করতে দেখা যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, এবার সুপারির দাম ভালো পাওয়ায় অনেকে নতুন করে সুপারির বাগান করছেন।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে টেকনাফ মডেল থানার সামনের বাজারে গিয়ে দেখা যায় সুপারি বিক্রি চলছে জোরেশোরে। উপজেলার সাবরাং, শাহপরীর দ্বীপ, নয়াপাড়া, মুন্ডারডেইল, আছারবনিয়া, হোয়াইক্যং, বাহারছড়া, শামলাপুর, জাহাজপুরা, বড় ডেইল গ্রামের অন্তত ১৩টি বাজারেও একই চিত্র। এসব বাজারে প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার সুপারি বিক্রি হয়।

স্থানীয়  চাষি আব্দুল আজিজ বলেন, সাবরাং ইউনিয়নের অন্তত ৪০০ পরিবারে সুপারি বাগান রয়েছে। ৯০ ভাগ পরিবার সুপারি বিক্রির আয়ের ওপর নির্ভরশীল। প্রতি সপ্তাহে এসব গ্রাম থেকে ২০-২৫ ট্রাক সুপারি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ হয়।

thumbnail_IMG-20241220-WA0005

ব্যবসায়ীরা বলেন, টেকনাফ, রামু, ঈদগাঁও, চকরিয়ার অন্তত ২৩টি বাজার থেকে শতাধিক ব্যবসায়ী সুপারি কেনেন। সপ্তাহে গড়ে ২২৫ ট্রাক সুপারি দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছেন। আগামী জানুয়ারি মাস পর্যন্ত সুপারির বেচাবিক্রি চলবে।

জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদফতরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশীষ কুমার বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার সুপারির  ফলন ভালো হয়েছে। সুপারির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া ভারত ও মিয়ানমার থেকে সুপারি পাচার বন্ধ থাকায় স্থানীয় চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। তিনি বলেন, সারাবছর গাছে সুপারি ফলন হলেও সুপারি উৎপাদনের ভরা মৌসুম ধরা হয় সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চার মাস। শুকনো সুপারির চেয়ে কাঁচা সুপারি বিক্রিতে চাষিরা বেশি লাভবান হন।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর