সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

বান্দরবান সদর পর্যটন কেন্দ্রে উপচে পড়া ভিড়, তিন উপজেলায় চরম হতাশা

সুফল চাকমা, বান্দরবান
প্রকাশিত: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:০৯ এএম

শেয়ার করুন:

বান্দরবান সদরের পর্যটন কেন্দ্রে উপচে পড়া ভিড়, তিন উপজেলায় চরম হতাশা

বান্দরবান সদরের পর্যটন কেন্দ্রগুলো এখন পর্যটকে ভরপুর। শীত মৌসুমে চাঙ্গাভাব হোটেল-মোটেলগুলো। রুম বুকিং আশাব্যঞ্জক হওয়ায় খুশি ব্যবসায়ীরা। আবাসিক হোটেলগুলোতে ২১ থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত শতকরা ৭০ থেকে  ৯০ শতাংশ কক্ষ আগাম বুকিং নিয়েছেন ভ্রমণ প্রত্যাশীরা। নীলাচল, মেঘলা, প্রান্তিক লেক, শৈল প্রপাত, চিম্বুক নীলগিরিসহ সদরের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় এখন। অপর দিকে রোয়াংছড়ি, রুমা ও  থানচি ভ্রমণে বিধিনিষেধ থাকায় পর্যটক শূন্য হয়ে হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন তিন উপজেলার পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

thumbnail_20241218_143103


বিজ্ঞাপন


রোববার (২২ ডিসেম্বর) বান্দরবান সদর, রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচি, রেমাক্রি এলাকার পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরেজমিনে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া যায়। ব্যবসায়ীরা জানান, দীর্ঘদিন পর বান্দরবান সদর এলাকার ব্যবসায়ীরা পর্যটকদের ভালো সাড়া পেয়েছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বড়দিনের ছুটি  উপলক্ষে আগামী ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত অধিকাংশ হোটেলের ৭০ থেকে  ৯০ শতাংশ কক্ষ আগাম বুকিং নিয়েছেন বান্দরবান ভ্রমণ প্রত্যাশীরা। এ নিয়ে অনেকটাই স্বস্তি ফিরেছে পর্যটন ব্যবসায়ী পাড়ায়। অপরদিকে নিরাপত্তাজনিত কারণে রোয়াংছড়ি, রুমা ও  থানচি উপজেলায় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় ভরা মৌসুমেও পর্যটকের উপস্থিতি না পেয়ে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। ফলে পর্যটন ব্যবসায় হতাশ হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন এই এলাকার অনেক ব্যবসায়ী।

IMG-20241031-WA0010

স্থানীয়রা জানায়, ২০২২ সালে ১৮ অক্টোবর থেকে রুমা-রোয়াংছড়ি ও থানচিতে সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানে নিরাপত্তাজনিত কারণে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে স্থানীয় প্রশাসন। ক্রমান্বয়ে বান্দরবান সদর, আলীকদমও নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়। পরবর্তীতে ক্রমান্বয়ে নিষেধাজ্ঞা শিতিল করা হলেও পুনরায় ২০২৪ সালের ৮ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত জেলার ৭টি উপজেলা ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। ৬ নভেম্বর বান্দরবান সদর, লামা, আলিকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি ৪টি উপজেলা থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলেও রুমা-রোয়াংছড়ি-থানচি উপজেলায় নিষেধাজ্ঞা এখনও বহাল রাখা হয়। যার ফলে রোয়াংছড়ি উপজেলার দেবতাকুম, রুমা উপজেলার রহস্যঘেরা বগালেক, থানচি উপজেলার তমাতুঙ্গী, ডিম পাহাড়, রাজাপাথর, তিন্দু, রেমাক্রীফলস এলাকায় এই ভরা মৌসুমে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় থাকার কথা থাকলেও চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছে ওই এলাকার পর্যটক নির্ভর ব্যবসায়ীরা।

আরও পড়ুন

স্বাভাবিক নিয়মে আজ থেকে সাজেক যেতে পারবেন পর্যটকরা

অন্যদিকে জেলা সদর থেকে ৩৩ কিলোমিটার দূরে শিলবান্ধা পাড়ারের কাছে দেবতা খুম, পর্যটকদের খুবই আর্কষণীয় পছন্দের পর্যটন স্পট। বর্তমানে পর্যটক শূন্য শুনশান নিরবতা। বেক্ষ্যং ইউনিয়নের ৪ নাম্বার ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য ও শিল বান্ধা পাড়ার বাসিন্দা চিং নু মং মারমা বলেন, আগে তো পর্যটক আসার কারণে কলা, পেঁপে মুরগি পর্যটকদের কাছে বিক্রি করে এলাকার মানুষ কিছু টাকা পয়সা পেত, আয় করতো।  বর্তমানে দেবতাখুমে পর্যটক নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে এলাকাবাসীর আয়-রোজগার নেই। দোকানপাট সব বন্ধ। এলাকার মানুষ কষ্টে আছে। তাই পর্যটন স্পট দেবতাখুম ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানান।

thumbnail_20241218_120229

রেমাক্রী ফলসে দোকানদার উসাই মং মারমা বলেন, প্রতিবছর ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল-মে মাস পর্যন্ত সাঙ্গু নদীর তীরে সাময়িক শুকনো মৌসুমে দোকান দেওয়া হয়। পর্যটক আসলে বেঁচাবিক্রি হবে এই আশায় তিনিও একটি দোকান দিয়েছেন। এই ব্যবসা থেকে যা আয় হতো তা দিয়ে দুই ছেলেমেয়ের লেখাপড়া, পরিবারের ভরণপোষণ হতো, কিন্তু প্রায় আড়াই বছরের অধিক সময় ধরে পর্যটক শূন্য রেমাক্রী ফলস। বেঁচা-বিক্রি নেই, আগে দৈনিক তিন হাজার টাকার ব্যবসা হলেও এখন পর্যটক না আসার কারণে দৈনিক ৫০০ টাকারও বিক্রি নেই। দুই ছেলে মেয়ের লেখা-পড়া, পরিবারের ভরণপোষণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। তাই সরকারের কাছে অতিদ্রুত থানচি এলাকায়  পর্যটক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার আবেদন জানান তিনি।

thumbnail_20241218_142334(0)

বান্দরবান হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিন  জানান, বান্দরবান সদর এলাকায় ৭০টি আবাসিক হোটেলে ৬ হাজার পর্যটকের ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। পর্যটকের ভালো সাড়া পাওয়ায় ২১ ডিসেম্বর থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সব হোটেল মিলে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া আগত পর্যটকদের সার্বিক সেবা ও সহযোগিতা দিতে সব হোটেল-রিসোর্ট  মালিকদের নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। তার পাশাপাশি দেবতাখুম, তমাতুঙ্গী, ডিম পাহাড় ও রেমাক্রিফলস ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে পর্যটকের আগমন আরও বাড়বে বলে জানান তিনি।

বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে রুমা-থানচি ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক মনে হলে এসব এলাকা ভ্রমণে আরোপিত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা হবে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর