রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

করাচি থেকে ৭১২ কন্টেইনার নিয়ে এলো সেই জাহাজ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৪৮ এএম

শেয়ার করুন:

করাচি থেকে ৭১২ কন্টেনার নিয়ে এলো সেই জাহাজ

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর গত ৫৩ বছরে পাকিস্তান থেকে সরাসরি কোনো জাহাজ আসেনি চট্টগ্রাম বন্দরে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে পর গত ১৩ নভেম্বর হঠাৎ প্রথমবারের মতো করাচি হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর ফেলে পানামার পতাকাবাহী জাহাজ এমভি ইউয়ান জিয়ান ফা ঝং।

জাহাজটিতে পোশাকশিল্পের কাঁচামাল কাপড়, রং, খেজুর, জিপসাম, পুরোনো লোহার টুকরা, মার্বেল ব্লক, কপার ওয়্যার, রেজিনসহ বিভিন্ন পণ্য ছিল।


বিজ্ঞাপন


এ নিয়ে দেশে ও দেশের বাইরে বিভিন্ন মহলে শুরু হয় বিভিন্ন জল্পনা-কল্পনা। এ ঘটনার রেশ শেষ হতে না হতে ৩৮ দিনের মাথায় শনিবার (২১ ডিসেম্বর) রাতে ফের করাচি থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে জাহাজটি।

দ্বিতীয়বারের মতো করাচি থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা জাহাজটিতে ৮২৫ টিইইউএস কন্টেনার রয়েছে। এর মধ্যে সরাসরি করাচি থেকে আসে ৭১২ কন্টেনার। এসব কন্টেনারে রয়েছে ভোগ্যপণ্য, গার্মেন্টস এক্সেসরিজসহ বিভিন্ন ধরনের মালামাল।

করাচি-চট্টগ্রাম সরাসরি জাহাজ চলাচল করায় পাকিস্তান থেকে পণ্য আনা-নেওয়া অনেক সহজ ও স্বস্তিদায়ক হয়েছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সেই জাহাজ আসার খবরে ফের ঘুম হারাম ভারতের। এমন মন্তব্য করেছেন জাহাজটির পরিচালন সংস্থা শিপিং কোম্পানি রিজেন্সি লাইনস লিমিটেডের মুখপাত্র মাশহুর আলম।

তিনি বলেন, জাহাজটিতে কী কী আনা হচ্ছে সেটি কাস্টমস থেকে পরিষ্কারভাবে জানা যাবে। তবে এটি নিশ্চিত, চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিনিয়ত যে সব পণ্য আসে, সে সব পণ্যই আনা হচ্ছে। বন্দর দিয়ে নিয়মবহির্ভূত কোনো পণ্য খালাস তো হতেই পারে না। তাই এটি নিয়ে যেন কোনো ভুল খবর না ছড়ায়।


বিজ্ঞাপন


মাশহুর আলম বলেন, পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে নিয়মিত পণ্য আসে। ওখান থেকে জাহাজ এলে সমস্যা কী, সেটাই আমরা বুঝতে পারছি না। করাচির সঙ্গে তো নৌ-বাণিজ্যে সরকারি কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। জাহাজটি নিয়ে ভারতের এতো মাথা ব্যথা কেন সেটাও তো বুঝতে পারছি না। ভারত আসলে কী চায়, সেটা সম্প্রতি পরিষ্কার হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের মুখপাত্র ও উপ-কমিশনার সাইদুল ইসলাম জানান, আইজিএমের ঘোষণা অনুযায়ী জাহাজটিতে থাকা ৮২৫ টিইইউএস কন্টেনারের মধ্যে ২৮৫ টিইইউএস কন্টেনারে পরিশোধিত চিনি, ১৭১ টিইইউএস কন্টেনারে ডলোমাইট, ১৩৮ টিইইউএস কন্টেনারে সোডা অ্যাশ, ৪৬ টিইইউএস কন্টেনারে গার্মেন্টসের কাপড়ের রোল, ২০ টিইইউএস কন্টেনারে আখের গুড়, ১৮ টিইইউএস কন্টেনারে আলু এবং ২০ টিইইউএস কন্টেনারে পুরোনো লোহার টুকরা, রেজিন ও কাপড় রয়েছে।

এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে জাহাজটিতে বোঝাই করা কন্টেনারে খেজুর, লুব অয়েল, মার্বেল পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য রয়েছে। জাহাজটি আজ বন্দরের নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালে বার্থিং নেবে। পণ্যগুলো খালাসের পর জাহাজটি ফিরতি পথে ১২০০ টিইইউএস পণ্য বোঝাই ও খালি কন্টেনার নিয়ে আগামী ২৪ ডিসেম্বর বন্দর ছেড়ে যাবে।

সাইদুল ইসলাম বলেন, পাকিস্তান থেকে তো সব সময়ই নিয়মিত পোশাকশিল্পের কাঁচামাল ও রাসায়নিক, খনিজ পদার্থ, ক্লিংকার ও বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য আসে। এবারও জাহাজটিতে এসব পণ্য থাকতে পারে। তাই পাকিস্তান থেকে কোন জাহাজ আসছে বা কী পণ্য আসছে, সেটিকে আমরা আলাদা করি দেখি না।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, দুবাই থেকে পাকিস্তানের করাচি হয়ে আসা এমভি ইউয়ান জিয়ান ফা ঝং নামের কন্টেনার জাহাজটি শনিবার রাতে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছে। রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে জাহাজটিকে নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালের দুই নম্বর বার্থে বার্থিং দেওয়া হয়। জাহাজটিতে প্রথমবারের চেয়ে প্রায় তিন গুণ কন্টেনার রয়েছে।

শিপিং এজেন্সি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীর পারিবারিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কর্ণফুলী লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান রিজেন্সি লাইনস লিমিটেডের পরিচালনাধীন এমভি ইউয়ান জিয়ান ফা ঝং নামের পণ্যবাহী জাহাজ করাচি থেকে সরাসরি প্রথম চট্টগ্রাম বন্দরে আসে ১১ নভেম্বর। জাহাজটি থেকে ৩৭০ একক কন্টেনার নামানো হয় চট্টগ্রাম বন্দরে। এর মধ্যে পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে আনা হয়েছে ২৯৭ একক কন্টেনার। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আনা হয়েছে ৭৩ একক কন্টেনার।

পরবর্তীতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, পাকিস্তানের ১৮টি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের ছয় হাজার ৩৩৭ টন পণ্য আনা হয়। পাকিস্তান থেকে সবচেয়ে বেশি আনা হয়েছে সোডিয়াম কার্বনেট বা সোডা অ্যাশ, যা টেক্সটাইলসহ বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এতে মোট ১১৫ কন্টেনারে রয়েছে সোডা অ্যাশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আমদানি পণ্য হলো খনিজ পদার্থ ডলোমাইট। ডলোমাইট রয়েছে ৪৬ কন্টেনারে। মোট ৩৫ একক কন্টেনারে আনা হয়েছে চুনাপাথর। ম্যাগনেশিয়াম কার্বোনেট আনা হয়েছে ছয় কন্টেনারে। এছাড়া কাচ-শিল্পের কাঁচামাল ভাঙা কাচ আনা হয়েছে ১০ কন্টেনারে। শতভাগ রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্পের কাঁচামাল কাপড়, রং ইত্যাদি রয়েছে ২৮ কন্টেনারে। একটি কন্টেনারে রয়েছে গাড়ির যন্ত্রাংশ। পরে ৩২৮ টিইইউএস পণ্য নিয়ে আসা জাহাজটি ১২ নভেম্বর বন্দর ছেড়ে গিয়েছিল।

গত শনিবার দিবাগত রাতে জাহাজটি দ্বিতীয়বারের মতো চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য ১১৩ টিইইউএস কন্টেনার নিয়ে জাহাজটি প্রথমে পাকিস্তানের করাচি বন্দরে পৌঁছে। ওখান থেকে ৭১২ টিইইউএস কন্টেনার নিয়ে জাহাজটি গত ১১ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের পথ ধরে।

আমদানিকারকদের ভাষ্য, পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য চলে আসছে অনেক আগে থেকে। তবে এত দিন দুই দেশের মধ্যে সরাসরি কোনো জাহাজ চলাচল ছিল না। ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্ট হয়ে তৃতীয় কোনো দেশ থেকে পণ্য আনা-নেওয়া করা হতো। এতে ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্টে জাহাজ ধরার বিষয়ে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের উদ্বেগ ছিল। ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্টে চার দিন থেকে এক মাস পর্যন্ত পণ্য আটকা পড়ে থাকার ঘটনা ঘটতো। এতে গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের বড় ধরনের ক্ষতির কবলে পড়তে হতো।

সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু হওয়ায় এখন করাচি থেকে কোনো কন্টেনার বোঝাই করা হলে তা চট্টগ্রামে নির্দিষ্ট দিনে পৌঁছার এবং চট্টগ্রাম থেকে ফিরতি পথেও নির্ধারিত সময়ে করাচি পৌঁছা নিশ্চিত হওয়ায় - ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের অস্বস্তি কেটে গেছে। ব্যবসায়ীরা আরও বলেন, গার্মেন্টস এক্সেসরিজ বা ভোগ্যপণ্য আমদানির জন্য একটি নতুন সোর্স তৈরি হলো; যা প্রতিযোগিতামূলক দরে পণ্য আমদানির ক্ষেত্র প্রসারিত করবে।

প্রতিনিধি/ এমইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর