বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করার জন্য সুপরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টির ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি বলেন, এই ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে কিছু অপশক্তি দেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অশান্তি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেলে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার সাকুয়াই ইউনিয়নের বন্দেরপাড়া রাধা গোবিন্দ হরি বাসর এবং বিলডোরা ইউনিয়নের পলাশকান্দা কালি মন্দির পরিদর্শনকালে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
বিজ্ঞাপন
এসময় প্রিন্স হালুয়াঘাটে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া মন্দিরের প্রতীমা ভাঙচুরের ঘটনাকে অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক এবং রহস্যজনক হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, ‘হালুয়াঘাটের শান্তিপূর্ণ জনপদে এমন ঘৃণ্য ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। বিগত ৫৪ বছরের ইতিহাসে এই ধরনের বর্বরতা কোনোদিন কেউ ঘটানোর সাহস পায়নি।’
তিনি এই ঘটনাকে একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করে বলেন, ‘এটি দেশের ধর্মীয় সম্প্রীতি এবং স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করার একটি চেষ্টার অংশ।’
প্রিন্স আরও বলেন, ‘ধর্মীয় সংঘাত সৃষ্টির মাধ্যমে কিছু মানুষ ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়। তারা ধর্মের নামে সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করে অশান্তি ছড়াতে চায়। তবে তারা জানে না, এসব ষড়যন্ত্র সফল হবে না।’ তিনি সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার এবং ধর্মীয় সহিষ্ণুতা বজায় রাখার আহ্বান জানান। ‘ধর্মের নামে সংঘাত সৃষ্টি করা মানুষ নামের অমানুষ, নরপিচাশ,’ বলেন প্রিন্স।
এসময় তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বিচ্ছিন্ন ঘটনা হলেও এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় যারা জড়িত তাদেরকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। ইতোমধ্যে পুলিশ দুজনকে আটক করেছে এবং এই ঘটনার পেছনে যারা ইন্ধন দিয়েছে তাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা হবে বলে তিনি জানান।
বিজ্ঞাপন
প্রিন্স বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য যে, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের কিছু মিডিয়া বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন ও নিপীড়নের কল্পকাহিনী প্রচার করছে। যদিও বাংলাদেশে এর কোনো সত্যতা নেই, তবুও দেশের অভ্যন্তরে কিছু দুর্বৃত্ত এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে ভারতীয় মিডিয়ার কল্পকাহিনীর সত্যতা প্রমাণ করার চেষ্টা করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এগুলো বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক শাসনের আকাঙ্খার বিরুদ্ধে একটি মাস্টার প্ল্যানের অংশ।’
তিনি সকল ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রের মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সবাই ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে একত্রিত হয়েছে। আমাদের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা অব্যাহত থাকবে এবং কোনো ষড়যন্ত্রে তা নস্যাৎ করা যাবে না।’ তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের মনোবল অটুট রেখে তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
এসময় তিনি প্রশাসন, সেনাবাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, বিএনপি এবং অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সর্বসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান, ‘সকল ষড়যন্ত্র এবং চক্রান্তের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে এবং নজরদারি জোরদার করতে হবে।’
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন পুজা উদযাপন কমিটির সভাপতি ভজন সরকার, সজল সরকার, রঞ্জন সরকার, প্রবোধ সরকার, বিপ্লব সরকার, সুমন সরকার, সুভাষ সরকার, সুব্রত পাল, সাকুয়াই ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার ইউনুস খান, সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান, শহীদুল হক খান সুজন প্রমুখ।

এসময় ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য আবু হাসনাত বদরুল কবির, বিএনপি নেতা সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই, বিএনপি নেতা কাজী ফরিদ আহমেদ পলাশ, সাবেক চেয়ারম্যান মোনায়েম হোসেন খান খোকন, চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান, সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান, বিএনপি নেতা শামসুল আলম শামস, শহীদুল হক খান সুজন, সায়েদুল ইসলাম, সাদেকুর রহমান, আবুল কালম, আবদুস সালাম, ছাত্র দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম শাহীন, মির্জা সারোয়ার হোসেন তায়েব, রাইসুল ইসলাম রাফিন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আলিমুল ইসলাম, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান দুলাল, যুগ্ম আহ্বায়ক প্রভাষক খালেদুজ্জামান আউলিয়া, শরিফুল ইসলাম জাহিদ, ছাত্রদল নেতা আল মামুন, আল আমিন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিনিধি/একেবি

