জয়পুরহাটে বাণিজ্যিকভাবে কমলা চাষ করে ব্যাপক সফলতা পাচ্ছেন উদ্যোক্তা ইমরান হোসেন উজ্জ্বল। বর্তমানে তার বাগানের গাছে গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে কমলা। ছেয়ে গেছে পুরো বাগান হলুদে হলুদে। যা দেখতেও আসছেন সাধারণ মানুষ। অনেকে বাগান দেখতে এসে কমলা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় এখন তার দেখাদেখি অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন এই চাষে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমন বাগান আরও গড়ে উঠলে একদিকে যেমন বেকারত্ব দূর হবে, অন্যদিকে কমবে অন্য দেশ থেকে আমদানি নির্ভরতা। পাশাপাশি বিষমুক্ত কমলা খেতে পারবেন সাধারণ মানুষ।
বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার ভিকনী গ্রামের ইমরান হোসেন উজ্জ্বল ক্ষুদ্র ব্যবসা করতেন। করোনার সময় ব্যবসায় মন্দার কারণে বিপাকে পড়েন তিনি। সে সময় ইউটিউবে কমলা চাষের ভিডিও দেখে উদ্বুদ্ধ হন তিনি। পরে এক বিঘাতে জমিতে প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ করে ১০০টি বারী কমলা-২ এর চারা রোপণ করেন। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রথম মৌসুমেই তার বাগানের খরচ উঠে যায়। বর্তমান তার বাগান ভরে গেছে হলুদ রঙের কমলায়। যা খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু। প্রতিদিন বাগান থেকেই কমলা কিনতে আসছেন ক্রেতারা। চলতি মৌসুমে বাগান থেকে ১০০ মণ কমলা বিক্রির আশা ইমরানের।
আরও পড়ুন
ইমরান হোসেন উজ্জ্বল বলেন, ব্যবসায় মন্দার কারণে দোকান বন্ধ হওয়ার পর কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। এমন অবস্থায় ইউটিউবে ভিডিও দেখে কমলার চাষ করার সিদ্ধান্ত নেই। এরপর বাড়ির পাশের পতিত এক বিঘা জমিতে প্রায় দেড় লাখ খরচ করে ১০০টি কমলার চারা রোপণ করি। এরপর প্রতিবছর ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। বর্তমানে বাগান কমলায় ভরে গেছে। ফলনও অনেক ভালো হয়েছে। কমলা বাজারে নিয়ে যাওয়ার সুযোগই পাচ্ছি না। ক্রেতারা বাগান থেকেই কিনে নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিকেজি কমলা আড়াইশো টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। এ বছর বাগান থেকে প্রায় ১০০ মণ কমলা ৫ লাখ থেকে ৮ লাখ টাকায় বিক্রি হবে বলে আশা করছি। পাশাপাশি আমি চারাও বিক্রি করছি।
বিজ্ঞাপন

আক্কেলপুরের শান্তা এলাকার মুনিরা সুলতানা নামে ক্রেতা বলেন, অন্য দেশ থেকে যেসব কমলা আসে সেগুলোতে দেখা যায় ফরমালিন দেওয়া থাকে। কিন্তু এই বাগানে ফরমালিন মুক্ত কমলা পাওয়া যাচ্ছে শুনে কিনতে এসেছি। বাচ্চাদের জন্য ফ্রেশ কমলা কিনেছি। পাশাপাশি বাগানটাও অনেক সুন্দর, দেখলে মন ভরে যায়।
আক্কেলপুর উপজেলা পরিষদের এলাকার তানহা নামে একজন বলেন, কমলা বাগান দেখতে এসেছিলাম। বাগানজুড়ে হলুদ রঙে অনেক সুন্দর লাগছে। কমলা খেয়েছি, অনেক মিষ্টি। এজন্য বাসার জন্যও কিনেছি।

ভিকনী গ্রামের রায়হান আলী নামে একজন বলেন, এই কমলার বাগানটা যেমন সুন্দর তেমন কমলাগুলো খেতেও সুন্দর। বাজারের কমলার চাইতে এই কমলা অনেক বেশি মিষ্টি।
একই গ্রামের মোস্তাকিম বিল্লাহ বলেন, আমি একজন শিক্ষার্থী। পড়াশুনার পাশাপাশি এরকম কমলার বাগান করার ইচ্ছা আমারও আছে। এজন্য আমি এখানে এসেছিলাম পরামর্শ নেওয়ার জন্য।
আক্কেলপুর উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি অফিসার কামনাশিস সরকার বলেন, লেবু জাতীয় ফল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় আমরা ইমরান হোসেনকে একটি প্রদর্শনী দিয়েছিলাম। যা এতোদিন পরে এসে সফলতার মুখ দেখেছে। মানুষজন দেখে উৎসাহিত হচ্ছে। কমলা চাষে মাটি ও সারের একটা বিষয় থাকে। এজন্য যারা এ ধরনের ফসল চাষ করতে চান, তাদের প্রথমেই একটা প্রশিক্ষণ নেওয়ার দরকার। আমরা ইমরানকেও প্রশিক্ষণ দিয়েছি। পাশাপাশি তাকে অন্যান্য সহযোগিতাও করা হচ্ছে।
প্রতিনিধি/এসএস

