বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

হাতিয়ায় সংরক্ষিত বন কেটে বিরানভূমি, চলছে রমরমা বালু ব্যবসা

ছায়েদ আহমেদ, হাতিয়া (নোয়াখালী)
প্রকাশিত: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:১৮ পিএম

শেয়ার করুন:

হাতিয়ায় সংরক্ষিত বন কেটে বিরানভূমি, চলছে রমরমা বালু ব্যবসা

নোয়াখালীর হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যানের চর ওছমান এখন বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে। সংরক্ষিত বনভূমি এখন প্রায় সম্পূর্ণ উজাড় হয়ে গেছে এবং সেখানে চলছে নানা ধরনের অবৈধ কার্যক্রম। বনের অবশিষ্ট কিছু গাছও কাটা হচ্ছে এবং সেখানে ধান চাষ করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি মাইলজুড়ে চলছে বালু ব্যবসা, এবং চরগুলোতে গরু, মহিষ ও ভেড়া চরানো হচ্ছে। এই ব্যাপারে কেউ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না, যেন অরক্ষিত রাজ্যের মতো পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

হাতিয়া উপজেলার ১০নং জাহাজমারা ও ১১নং নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে প্রতিবেদক দেখতে পান, বনের উপর বনদস্যুরা কুঠার দিয়ে গাছ কাটছে এবং দিনেদুপুরে তারা গাছ নিয়ে যাচ্ছে। ঘটনা জানার পর জাহাজমারা রেঞ্জ কর্মকর্তা ছাইফুর রহমানকে অবহিত করা হয়। তিনি বলেন, “গাছ কাটা নতুন কিছু নয়, তবে দিনে কাটা খুবই দুঃখজনক।”


বিজ্ঞাপন


কর্তনকারী বনদস্যুরা ক্যামেরা দেখে পালিয়ে যায়, তবে স্থানীয়রা নাম প্রকাশ করতে চায়নি। স্থানীয় সোহান এবং সোহেল জানান, যারা গাছ কেটে জমি দখল করেছে, তারা রাতের বেলা গাছ কেটে রেখে যায় এবং দিনের বেলা অন্যরা নিয়ে যায়। রবিন নামক এক ১০ বছর বয়সী জেলে বলেন, “বাগান দখলকারীরা গাছ কেটে ধান চাষ করে, আর গাছের বাকল ছেটে দিলে গাছ মারা যায়।”

hatiya2

বালি ব্যবসায়ী কালু মিয়া এবং আলমগীর জানান, যারা বনের জায়গা দখল করে গাছ কাটছে, তাদের কাছে তারা বালি রেখে দিচ্ছে।

গেল বছরের শুরুতে চরটির অবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক হলেও, এখন সেই বনভূমির পরিস্থিতি অনেক খারাপ হয়ে গেছে।


বিজ্ঞাপন


এদিকে, বনভূমি দখল করার জন্য সরকারি ভূমি অফিস নানা কৌশল অবলম্বন করে বনভূমি ভিন্ন ভিন্ন নামে বন্দোবস্ত দিচ্ছে। যদিও হাইকোর্টে বনভূমি দখল নিরসনের জন্য একটি রিট পিটিশন (৭১৪৫/২০১৪) করা হয়েছে, তবুও সরকারি বনভূমি গাছ কেটে জমি দখল করে বন্দোবস্ত দেওয়া হচ্ছে।

নোয়াখালী উপকূলীয় বনবিভাগের একটি স্মারকে বলা হয়েছে, ২০১৭-১৮ থেকে ২০২১-২২ পর্যন্ত জাহাজমারা রেঞ্জ কর্তৃক ২১ লাখ ৪৪ হাজার ২৯ একর বনভূমি এবং ৪০ হাজার ৩৯০ একর জাতীয় উদ্যান এলাকার অধিকাংশ জমি দখলদারদের কারণে সংকুচিত হয়ে গেছে।

hatiya3

হাতিয়া উপজেলা ভূমি অফিসের নামে বন্দোবস্ত দেওয়ার কৌশলও রয়েছে। গেজেটভুক্ত বিভিন্ন চরের নাম পরিবর্তন করে জমি বন্দোবস্ত দেওয়া হচ্ছে, যেমন চর ইউনুসের সাথে সংযুক্ত চর হেয়ার নামকরণ করা হয়েছে চর মাহিদ, চর বাহাউদ্দিনকে দমার চর নাম দেওয়া হয়েছে, এবং চর রওশন এর পাশের জমি চর মিজান নামে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। এইভাবে বনভূমি ধ্বংস হচ্ছে এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।

এ পরিস্থিতিতে স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন, বনভূমি ধ্বংস এবং জীববৈচিত্র্যের সংকটের জন্য এই উজাড়টাই দায়ী। অনেক আগে যেখানে অগণিত হরিণের বিচরণ ছিল, এখন সেখানে কোনো হরিণই দেখা যায় না।

বন ধ্বংসের ব্যাপারে জাহাজমারা বিট কর্মকর্তা বোখারী আহমদ জানান, ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ২৮টি বন মামলা হয়েছে এবং একটি পুলিশ এজাহারও দায়ের করা হয়েছে।

হাতিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মং এছেন বলেন, "ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।"

নোয়াখালী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু ইউসুফ বলেন, "প্রতিদিন গাছ কাটার ঘটনা ঘটছে, আমরা তদন্ত টিম পাঠিয়ে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।"

প্রতিনিধি/এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর