বাংলাদেশে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ইস্যুতে ভারতে চলমান প্রতিবাদ কর্মসূচির কারণে সিলেটের দুটি স্থলবন্দর ও দুটি শুল্ক স্টেশনে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। এর ফলে আরও একটি স্থলবন্দরে আমদানি কমে গেছে। এই পরিস্থিতিতে উভয় সীমান্তের বন্দর ও স্টেশনে কোটি কোটি টাকার পণ্য আটকা পড়েছে। চলমান অচলাবস্থার কারণে ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
বন্ধ থাকা স্থলবন্দরগুলোর মধ্যে রয়েছে সিলেটের তামাবিল ও শেওলা স্থলবন্দর এবং শুল্ক স্টেশনগুলোর মধ্যে সিলেটের জকিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার চাতলাপুর শুল্ক স্টেশন।
বিজ্ঞাপন
তবে হবিগঞ্জের বাল্লা স্থলবন্দর এবং সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বড়ছড়া শুল্ক স্টেশন স্বাভাবিক রয়েছে। এছাড়া সিলেটের ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দর স্বাভাবিক থাকলেও পাথর আমদানি কমে গেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
সিলেটের প্রধান স্থলবন্দর তামাবিল দিয়ে পাথর ও কয়লাসহ মাঝেমধ্যে ফলমূল আমদানি-রফতানি করা হয়। পাথর আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি আতিক হোসেন জানিয়েছেন, ইসকন ইস্যুর কারণে আমদানি-রফতানি বন্ধ রয়েছে। তিনি জানান, বিয়ানীবাজারের শেওলা স্থলবন্দরের বিপরীতে ভারতের সুতারকান্দিতে পাথরসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী অন্তত ২০০ ট্রাক আটকা পড়েছে। শেওলা স্থলবন্দরেও একই অবস্থা।
তামাবিল স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান ঢাকা মেইলকে জানিয়েছেন, আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকায় বন্দরে বর্তমানে কোনও কার্যক্রম নেই। আন্দোলনের আগ থেকে বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
সিলেটের জকিগঞ্জ শুল্ক স্টেশন দিয়ে আমদানি-রফতানি গত সোমবার থেকে বন্ধ রয়েছে। ওই দিন করিমগঞ্জ শুল্ক স্টেশন এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করেন ভারতের সনাতনী ঐক্য মঞ্চ সংগঠনের সদস্যরা। তাদের ‘চল বাংলাদেশ’ কর্মসূচির কারণে মঙ্গলবারও কোনও পণ্য বাংলাদেশে আসতে পারেনি।
বিজ্ঞাপন
জকিগঞ্জ শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ভারতের শ্রীভূমি (করিমগঞ্জ) শুল্ক স্টেশনে বিক্ষোভকারীরা বিক্ষোভ করে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের এলসি করা মালামালের গাড়ি ফেরত দিয়েছেন। জানা গেছে, সোমবার সেখানে কিছু পণ্য আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। করিমগঞ্জে ফল ও কাঁচামাল বোঝাই অনেক ট্রাক আটকা পড়েছে।
সিলেটের বিয়ানীবাজারের শেওলা স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত শনিবার থেকে শেওলা স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বন্ধ রয়েছে। ভারতের করিমগঞ্জ জেলার সুতারকান্দি স্থলবন্দরের প্রায় ৩ কিলোমিটার ভেতরে ওই দিন বিক্ষোভ করেন সেখানকার বাসিন্দারা। তারা সুতারকান্দি স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করলে বিএসএফ, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের বাধা দেয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, বিক্ষুব্ধ জনতাকে ঠেকাতে বিএসএফ লাঠিচার্জ করছে। আমদানিকারক কমর উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ থেকে আরএফএলের দুটি ট্রাক পণ্য নিয়ে গেলেও ভারত থেকে কোনও ট্রাক আসেনি। মঙ্গলবার পোর্টের কার্যক্রম একেবারে বন্ধ রয়েছে।
২৭ নভেম্বর থেকে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার চাতলাপুর শুল্ক স্টেশন দিয়ে ভারতের কৈলাশরে আমদানি-রফতানি বন্ধ রয়েছে। কৈলাশরের রাস্তায় লাল কাপড় দিয়ে বাঁশের বেড়া দেওয়া হয়েছে। ওই স্টেশন দিয়ে মাছ, প্লাস্টিকের পণ্য, জুস, আদা, সাতকরা ও ফলমূল আমদানি বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন বলে জানিয়েছেন শমশেরনগর আমদানিকারক রুবেল আহমদ।
তিনি জানান, প্রথমদিন সকালে ভারতের কৈলাশে পাঠানোর জন্য ৬টি গাড়ি মাছ খুলনা, সাতক্ষীরা ও যশোর থেকে চাতলাপুর শুল্ক স্টেশনে নিয়ে আসা হয়েছিল, কিন্তু ইসকনের বাধার কারণে তা পাঠানো সম্ভব হয়নি। জুড়ির ব্যবসায়ী নাজমূল আলম লিজন জানান, ফলমূল আমদানি করার জন্য এলসি করে বিপাকে পড়েছেন তারা। সেখানকার ইসকন সদস্যরা তাদের গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে।
জুড়ি বটুলী শুল্ক স্টেশনের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শাওন দে জানান, ২৮ নভেম্বর থেকে মালামাল আমদানি-রফতানি হচ্ছে না। তবে লোকজনের আসা-যাওয়া স্বাভাবিক রয়েছে। চাতলাপুর শুল্ক স্টেশনের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান জানান, সপ্তাহে ২০-২৫টি গাড়ি পণ্য নিয়ে আসত, কিন্তু সপ্তাহখানেক ধরে শুল্ক স্টেশনে কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি রাজস্ব আয়েও বিঘ্ন ঘটেছে।
এদিকে সিলেটের ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দর দিয়ে পাথর আমদানি কমে গেছে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারক মোর্শেদ আলম। তাহিরপুরের শুল্ক স্টেশনের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। হবিগঞ্জের বাল্লা স্থলবন্দরও স্বাভাবিক রয়েছে।
প্রতিনিধি/একেবি

