নারীর প্রেমের টানে সুদূর চীন থেকে সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে এসেছেন চেং নাং নামের এক যুবক। এখানে আসার পরে উপজেলার বিয়ারা গ্রামের নারী এবং এক সন্তানের জননী অন্তরা খাতুনের সঙ্গে মুসলিম রীতিতে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন তিনি।
গত ২২ নভেম্বর নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন করেন তারা। বিয়ে শেষে চেং নাং অন্তরা খাতুনের বাবা আব্দুর রশিদের বাড়িতে আসেন গত রোববার। আজ সোমবার (২ ডিসেম্বর) বিষয়টি জানাজানি হলে চীনা জামাইকে একনজর দেখতে উৎসুক জনতা ভিড় জমান।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বনিবনা না হওয়ায় গত ঈদুল আযহায় স্বামীকে ডিভোর্স দেন এক কন্যা সন্তানের জননী অন্তরা খাতুন। এরপরই চলে যান গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতে। সেখানে একটি রেস্টুরেন্টে চীনা যুবক চেং নাং-এর সঙ্গে দেখা হয়। সেখানে অন্তরাকে দেখে পছন্দ করেন চেং নাং। পরে মোবাইল নম্বর ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাবের আদান-প্রদান করা হয়। তারপর শুরু হয় প্রেম-ভালবাসা। এরপর চেং নাং বিয়ের প্রস্তাব দেন অন্তরাকে। পরে পারিবারিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমেই তাদের বিয়ে হয়। ভিনদেশি জামাতা পেয়ে খুশি অন্তরার পরিবারও। আজ সন্ধ্যার পরেই তারা ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন বলেও জানা গেছে।
অন্তরা খাতুন বলেন, আমার মেয়েকে নিয়ে গাজীপুরের একটা রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলাম। সেখানে চেং নাং এবং তার বন্ধুরাও যান। আমাকে দেখে সে পছন্দ করেন। তখন নম্বর আদান-প্রদান হয়। তারপর প্রেমের সম্পর্কে জড়াই আমরা।
তিনি বলেন, আমি ডিভোর্সি মেয়ে এবং আমার একটা ৯ বছরের মেয়ে আছে জেনেও সে আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়। পরে আমি বিষয়টি নিয়ে আমার পরিবারের সঙ্গে কথা বললে তারা রাজি হন। আমি চেং নাংকে বলি আমাকে বিয়ে করতে হলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে হবে। পরে সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে আমরা বিয়ে করি। আমি চেং নাংকে বিয়ে করে খুশি।
অন্তরা আরও জানান, চেং নাং এখন বাংলা শিখছেন এবং আমিও চায়না ভাষা শেখার চেষ্টা করছি। তবে কথাবার্তা এখনও ট্রান্সলেট করে আদান-প্রদান করি। আমি তাকে আমার পূর্বের বিয়ের কথা বলেছি। তিনি আমার মেয়েকেও দেখেছেন। সব মেনে নিয়েই তিনি বিয়ে করেছেন। আমরা দু’জনে এখন সুখেই আছি।
বিজ্ঞাপন
নিজের অনুভূতির কথা জানতে চাইলে চীনা যুবক চেং নাং বলেন, আমার বাড়ি চীনের হুনান প্রদেশে। আমার বাবার কারখানা আছে। বন্ধুদের সঙ্গে বাংলাদেশে ঘুরতে আসি। অন্তরাকে দেখে আমার ভালো লাগে। আমরা দু’জন কথাবার্তা বলি। একসঙ্গে অনেক সময় কাটাই। এরপর আমরা বিয়ে করি। আমি অন্তরাকে বিয়ে করে খুশি। আমার পরিবারও খুশি।
চেং নাং বিয়ের বিষয়টি তার মা-বাবাকে জানিয়েছেন। এখন শীঘ্রই স্ত্রীকে নিয়ে দেশে যাবেন বলে তিনি জানান।
অন্তরা খাতুনের বাবা আব্দুর রশিদ বলেন, প্রথমে আমাদের সন্দেহ ছিল যে তারা অ্যাডজাস্ট হতে পারবে কিনা। কিন্তু তারা যেহেতু অ্যাডজাস্ট হয়েছেন, তখন আর দ্বিমত করি নাই। এরপর বিয়ের সম্মতি দিয়েছি। এখন আলহামদুলিল্লাহ আমরা খুশি।
অন্তরার মা বলেন, মেয়ে করবে সংসার, ভাগ্যে ছিল হয়ে গেছে। আমি দোয়া করি - তারা সুখে সংসার করুক।
আমিনুল ইসলাম নামের এক প্রতিবেশী বলেন, এমন ঘটনা আমাদের কাজিপুরে এটাই প্রথম। গতকাল তারা বাড়িতে এসেছে। লোকজন ভিড় করছে তাদের একনজর দেখতে।
প্রতিনিধি/ এমইউ