পাঁচ বছর আগেও যারা ঋণের বোঝা নিয়ে পালিয়ে বেড়াতেন, আজ তারা শত কোটির মালিক! অবিশ্বাস্য মনে হলেও, এটি বাস্তব। সাবেক গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের ছোট ভাই মোস্তাফিজুর রহমান রবিন এবং তার পরিবারের সদস্যরা অবৈধ উপায়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। একসময় যারা সরকারি প্রকল্পের ভাগ-বাটোয়ারা, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে টাকা কামিয়েছেন, আজ তাদের হাতে রয়েছে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, ব্যাংক ব্যালান্স এবং ব্যবসা। প্রশ্ন উঠছে—এত অল্প সময়ে এত সম্পদ কিভাবে অর্জন করলেন তারা?
জাকির হোসেনের মন্ত্রিত্বের সময় তার ছোট ভাই রবিন ছিলেন এলাকায় 'স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী'। তিনি থানা, উপজেলা এবং অন্যান্য সরকারি অফিসগুলোতে ব্যাপক প্রভাব খাটাতেন। বিশেষ করে, সরকারি প্রকল্পগুলোর ভাগ-বাটোয়ারা, ঠিকাদারি ব্যবসা, জমি দখল এবং চাঁদাবাজির মাধ্যমে তিনি বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেন। তার নেতৃত্বে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন, যা তার ভাই মাসুম পরিচালনা করতেন, গ্রামের পর গ্রাম বিলীন হয়ে গিয়েছিল। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে রবিন এবং তার পরিবার বিপুল অর্থের মালিক হয়ে ওঠে।
বিজ্ঞাপন
জাকির হোসেনের স্ত্রী সুরাইয়া সুলতানা, যিনি মহিলা লীগের নেত্রী ছিলেন, সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প থেকে বিশেষ সুবিধা আদায় করতেন। তিনি কখনোই তার কর্মস্থলে উপস্থিত থাকলেও হাজিরা খাতা আপডেট করে বেতন উত্তোলন করতেন। তার নামেই রৌমারী, ঢাকা, লন্ডনসহ একাধিক বাড়ি এবং বিলাসবহুল গাড়ি রয়েছে।
এছাড়া, প্রতিমন্ত্রীর অন্যান্য চাচাত ভাই ও পরিবারের সদস্যদের অবৈধ সম্পদ অর্জনের ঘটনা উন্মোচিত হয়েছে। আকতার আহসান বাবু এবং মশিউর (ফশিউর) নামের চাচাত ভাইয়েরা কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পের মাধ্যমে বিপুল অর্থ কামিয়েছেন। রবিনের অন্যান্য ভাই, রাশেদ, মাসুম, এবং মাজেদুল, এনামুলসহ অনেকেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে সম্পদ অর্জন করেছেন।
প্রতিমন্ত্রীর চাচাত ভাই সিক্ত মণ্ডলের নেতৃত্বে এক সন্ত্রাসী বাহিনী কাজ করত। এই বাহিনীর সদস্যরা প্রায় প্রতিদিন জমি দখল, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, টেন্ডারবাজি ও অন্যান্য অবৈধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকত। সিক্ত মণ্ডলসহ তার বাহিনী ছিল এক ধরনের অপরাধী সিন্ডিকেট, যা বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছিল।
এদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও এখনও কার্যকর কোনো তদন্ত বা আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বর্তমান পরিস্থিতি থেকে স্পষ্ট যে, তাদের বিপুল সম্পদের উৎস ও এসব অবৈধ কার্যকলাপের পেছনে রয়েছে এক ধরনের রাজনৈতিক প্রভাব এবং দুর্নীতি। এই ঘটনা জনমনে প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে—কীভাবে এত অল্প সময়ে এতো সম্পদ অর্জন সম্ভব হল?
বিজ্ঞাপন
জাকির হোসেনের পরিবার এবং তাদের সঙ্গী অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর তদন্ত এবং বিচার বিভাগীয় পদক্ষেপ নেয়া এখন সময়ের দাবি। সরকারের উচিত এদের শাস্তির আওতায় এনে আইনের প্রতি জনগণের আস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।
প্রতিনিধি/একেবি