বগুড়ায় নিখোঁজ মাহাদী হাসান (৪) নামের এক শিশুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এসময় স্থানীয় জনগণ শিশুটিকে হত্যার অভিযোগে তহমিনা নামের এক নারীকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে। তহমিনা ওই শিশুটির মামী। তার ঘরের পাশ থেকে বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করা হয়, এবং একটি চিরকুটও পাওয়া যায়, যেখানে মুক্তিপণ হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছিল।
মাহাদী হাসান বগুড়া শহরের নিশিন্দারা ধমকপাড়ার শফিকুল ইসলামের ছেলে।
বিজ্ঞাপন
তহমিনার বাড়ি শিবগঞ্জ উপজেলার জানগ্রামে। তিনি দ্বিতীয় স্বামী আলিফের সঙ্গে নিশিন্দারা ধমকপাড়ায় ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতেন।
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মঈন উদ্দীন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
শিশুটির বাবা শফিকুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) বেলা ১১টার পর থেকে মাহাদী হাসানকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। সারাদিন বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। সন্ধ্যার দিকে বগুড়া সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। রাতভর পাড়া প্রতিবেশী বিভিন্ন স্থানে খোঁজ খবর করতে থাকে। শুক্রবার সকাল ৬টার দিকে আলিফের আরেক ভগ্নিপতি তহমিনার ঘরের পিছনে একটি বস্তায় মাহাদী হাসানের লাশ দেখতে পান। এসময় তহমিনা সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছিলেন।
এছাড়া, তহমিনার বাড়ির পিছনের দরজা খোলা দেখে আরও সন্দেহ হয়। পরে প্রতিবেশীরা তার ঘর তল্লাশি করে একটি চিরকুট উদ্ধার করে। সেখানে লেখা ছিল, ‘তোমার সন্তানকে ভালভাবে দেখতে হলে গলির মধ্যে পাঁচ লাখ টাকা রেখে যাও।’
বিজ্ঞাপন
স্থানীয়রা জানান, চিরকুট উদ্ধার হওয়ার পরও তহমিনা হত্যার বিষয়ে কিছু না বলায় তাকে গণপিটুনি দেওয়া শুরু করে। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী তাকে উদ্ধার করে পুলিশ হেফাজতে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। এসময় স্থানীয়দের বাঁধার মুখে পুলিশ লাশ উদ্ধার না করেই ফিরে আসে।
স্থানীয়রা আরও জানান, তহমিনার স্বামী আলিফ উদ্দিন বগুড়া সদরের ঘোলাগাড়ি গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি গ্রিল মিস্ত্রি। আলিফ উদ্দিন তহমিনাকে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। তহমিনার দুই সন্তান রয়েছে, যারা তার বাবার বাড়ি শিবগঞ্জ উপজেলার জানগ্রামে রয়েছে। তিন মাস আগে আলিফ ও তহমিনা ধমকপাড়া এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। গত ১৫ দিন ধরে আলিফ ধমকপাড়ায় ভাড়া বাসায় থাকেন না। নিহত শিশু মাহাদী হাসানের মা রুবি বেগম আলিফের খালাতো বোন।
পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় থানায় সাধারণ ডায়েরি হওয়ার পর পুলিশ তৎপরতা শুরু করে। আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে দেখতে পাওয়া যায়, বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তহমিনা শিশুটির হাত ধরে চারমাথা বাস টার্মিনালের দিকে যাচ্ছিলেন। কিছুক্ষণ পর ওই পথ ধরেই তাকে শিশু মাহাদীসহ বাসার দিকে ফিরে যেতে দেখা যায়। এরপর রাতে পুলিশ তহমিনাকে দুই দফা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
শুক্রবার সকালে শিশুটির বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার হওয়ার পর পুলিশ ও সেনাবাহিনী সদস্যরা গণপিটুনি থেকে তহমিনাকে উদ্ধার করলেও এলাকাবাসীর বাঁধার মুখে শিশুটির লাশ রেখে ফিরে আসে। বেলা ১২টার দিকে একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয়দের সহযোগিতায় শিশুটির লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মঈন উদ্দীন বলেন, তহমিনা নামের ওই নারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। কিছুটা সুস্থ হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে শিশু হত্যার বিষয়ে তথ্য বের করা হবে।
প্রতিনিধি/একেবি