অফিস-আদালত, বাসা-বাড়ি যেখানেই হোক আপ্যায়নে আর কিছু না হোক এক কাপ চা লাগবেই। চা বাঙালির রসনা বিলাসের এক অপরিহার্য সঙ্গী হয়ে উঠেছে। চায়ের যেমন আছে কদর তেমনি চায়ের রয়েছে ভিন্নতা। সিলেটের সাত কালারের চায়ের কথা সবাই জানি। শুধু সাত কালারের চা নয়, বাড়ির কাছে মোড়ের টং দোকানের চা-ও অনেকের কাছে প্রিয়। আর শীতকালে ধোয়া ওঠা দুধ চা বা বিভিন্ন মসলায় তৈরি লাল চায়ের কদর সবখানে। কিন্তু কুমিল্লার চকবাজারের 'চায়ের আড্ডা'র ৬২ রকমের চা অন্যরকম সাড়া ফেলেছে।
![]()
বিজ্ঞাপন
মালাই দিয়ে চা, চকলেট দিয়ে চা, আবার তেঁতুল দিয়ে অথবা মরিচ দিয়ে তৈরি চা। কুমিল্লা নগরের চকবাজার এলাকার রনি সাহার ‘চায়ের আড্ডা’ দোকানে মেলে ৬২ রকমের চা। শুধুমাত্র চা বিক্রি করেই স্বাবলম্বী রনি সাহা। রনি সাহার চায়ের আড্ডা দোকানটি শুধু শীতকালেই যে চা প্রেমীদেরকে উষ্ণতা দেয় তা নয় গরমকালেও চা প্রেমীরা এখানে চায়ের স্বাদ নেয়ার জন্য ভিড় জমান।
![]()
প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত এই চায়ের দোকান খোলা থাকে। বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে চা পান করতে আসেন অসংখ্য চা প্রেমী মানুষ। তবে দিনের চেয়ে রাতে এখানে চা বিক্রি হয় বেশি।
![]()
বিজ্ঞাপন
কুমিল্লা নগরের আমির দিঘির পশ্চিম পাড়ের শাপলা মার্কেটে চায়ের আড্ডা নামে রনির দোকানটি অবস্থিত।
![]()
চকবাজার-গোমতী নদী যাওয়ার সড়ক পথে চকবাজারের শাপলা মার্কেটের সামনে ব্যস্ততম স্থানে এই ‘চায়ের আড্ডা’ নামে দোকানটি। কেউ মাটির পেয়ালায় চা পান করেন, কেউ ওয়ানটাইম গ্লাসে, কেউ কাঁচের গ্লাসে। দোকানে ছয়জন কর্মচারী। তাদের ফুরসত নেই। ভোক্তাদের উপচে পড়া ভিড়, একেকজনের একেক রকম চায়ের ফরমাশ।

রাত ১২টা হলেও তখন দেখা যায় তরুণেরা বসে আছেন চা নিয়ে। কেউ চুমুক দিচ্ছেন, কেউ হাতে নিয়ে দেখছেন, কেউ সেলফি তুলছেন।
‘চায়ের আড্ডা’ দোকানের দেয়ালে সাঁটানো চায়ের নামের দীর্ঘ তালিকা চোখে পড়ে। এগুলোর মধ্যে আছে স্পেশাল মনপুরা চা, ইরানি চা, চকলেট চা, তাজ চা, স্পেশাল বাহাদুর মালাই চা, সুলতান চা, কাজু মালাই তান্দুরি চা, কাজু ক্রিম মালাই চা, কাজু স্ট্রবেরি চা, ক্রিম মালাই চা, মাসালা তান্দুরি চা, স্পেশাল দুধ মাসালা, জাফরানের দুধ চা, খেজুর–নারিকেলের চা ইত্যাদি।
![]()
চায়ের আড্ডা দোকানের মালিক রনি সাহা তার স্বপ্নের চায়ের দোকানের গল্পটা মেলে ধরেন। বলেন, ১৫ বছর বাহরাইন, দুবাই ও কলকাতায় ছিলাম। তখন দেখতাম, একেক দেশে একেক রকমভাবে চা বানানো হয়। এসব চা খেতে ভিন্ন স্বাদ। এরপর মনে হলো, দেশে গিয়ে আমি এ ধরনের একটি চায়ের দোকান দেব। ছয় বছর আগে চকবাজারের কুমিল্লা আলীয়া মাদরাসা লাগোয়া একটি ছোট আকারের দোকান ভাড়া নিই। এরপর চালু করি চকবাজার শাপলা মার্কেটের সামনে চায়ের দোকান ক্যাফে হাউজ। একপর্যায়ে স্থান সংকুলান হচ্ছিল না। এক বছর আগে ১২ হাজার টাকা মাসিক ভাড়ায় দোকান নিই। দোকানের নাম দিই ‘চায়ের আড্ডা’। তখন ৯ লাখ টাকা বিনিয়োগ করি। দোকানে এখন ছয়জন কর্মচারী। সব মিলিয়ে দোকানে প্রতি মাসে খরচ হয় ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। কর্মচারীদের সর্বোচ্চ বেতন আছে ২০ হাজার টাকা। এ ছাড়া চা পাতা, দুধ, চকলেট, নানা উপকরণ কেনা বাবদ খরচ আছে। প্রতিদিন গড়ে ৮০০ থেকে ১ হাজার কাপ চা বিক্রি হয়।
![]()
কুমিল্লা নগরের কাটাবিল এলাকার বাসিন্দা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মাহমুদা আহসান ঢাকা মেইলকে বলেন, চা আমার অত্যন্ত প্রিয় একটি আইটেম। প্রায়ই এখানে চা পান করতে আসি। ভালো লাগে। আমি স্পেশাল মালাই বাহাদুর চা খেয়েছি, সেটি স্বাদে অতুলনীয়।
চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজের শিক্ষার্থী তাইফুর বলেন, কুমিল্লায় নানার বাড়িতে বেড়াতে আসলে চায়ের আড্ডার চা খেতে এখানে আসি। এখানকার চায়ের আড্ডার চা এর গুনগতমান অনেক ভালো। তাই নানার বাড়িতে আসলেই এখানে চা খেতে আসি।
রনি সাহার বাড়ি কুমিল্লা নগরের সাহাপাড়া এলাকায়। বিজয় সাহা ও কাজল রানী সাহার দুই ছেলের মধ্যে রনি সাহা বড়। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে। রনি বলেন, এই চায়ের দোকান থেকে আমার প্রতি মাসে সব খরচ বাদ দিয়ে লাখের ওপরে লাভ থাকে। আমার দোকানে চা ভোক্তার সামনে বানানো হয়। উপকরণ ঠিকমতো দিচ্ছি কি না, সেটা ভোক্তা নিজ চোখে দেখতে পারেন।
প্রতিনিধি/এসএস

