পদ্মাসেতু রেল প্রকল্পে ভাঙ্গা-নড়াইল-যশোর বা খুলনা রুটে ট্রেন চলাচলের দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
এই রুটে কিভাবে ট্রেন চালানো হবে, তা এখনও আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। যশোরসহ বিভিন্ন অঞ্চলের ভিন্ন ভিন্ন দাবিগুলো বিবেচনায় নিয়ে ট্রেন সিডিউল নির্ধারণের চেষ্টা চলছে।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (২০ নভেম্বর) ঢাকায় রেল ভবনের সভাকক্ষে মতবিনিময়কালে এ কথা জানান রেল সচিব আবদুল বাকী।
রেল ভবনের সচিবের সভাকক্ষে বৃহত্তর যশোর রেল যোগাযোগ উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির এক প্রতিনিধি দলের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়।
মতবিনিময় সভার শুরুতে পরিচয় পর্ব শেষে বৃহত্তর যশোর রেল যোগাযোগ উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব ইঞ্জি. রুহুল আমিন বৃহত্তর যশোরাঞ্চলের দাবিসমূহ যুক্তি সহকারে তুলে ধরেন। তিনি বেনাপোল-যশোর-ঢাকা রুটে ২টি ও দর্শনা-যশোর-ঢাকা রুটে ২টি ট্রেন দেওয়ার দাবিসহ ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন।
মতবিনিময় সভার সভাপতি রেল সচিব আবদুল বাকী বলেন, দাবিগুলোর যৌক্তিকতা রয়েছে। তবে আমরা সবদিক নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছি। আমাদের ভুল বুঝবেন না। রেলে প্রতিদিন ২ লাখ লোক চলাচল করার ব্যবস্থা রয়েছে, কিন্তু প্রতিদিন ৩০ লাখ বার টিকিটের চাহিদা রয়েছে। যদি ১০ লাখ ব্যক্তিকেও ধরি, তাহলেও চাহিদা ১০ লাখ, তবে ব্যবস্থা আছে মাত্র ২ লাখ। এই পরিস্থিতি আমাদের রেলের, বিষয়টি মাথায় রাখবেন।
বিজ্ঞাপন
তবে তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমানে রেলে কোচের (বগি) সংকট রয়েছে। ফলে সবার দাবি একসঙ্গে পূরণ করা সম্ভব নয়। তবে ভারত থেকে ৩০০ কোচ আমদানির প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এই বগিগুলো আসলে, ধাপে ধাপে জনগণের চাহিদা ও গুরুত্ব বিবেচনায় দাবিগুলো পূরণ করা হবে।
মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, ‘পদ্মাসেতু রেল প্রকল্পে ভাঙ্গা-নড়াইল-বেনাপোল বা ভাঙ্গা-নড়াইল-খুলনা রুটে ট্রেন চলাচল কবে শুরু হবে, তা বলা যাচ্ছে না। নতুন বগি ট্রেন না পাওয়া পর্যন্ত এই রুটে ট্রেন চালানো সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। আপনাদের মত রাজবাড়ী কুষ্টিয়ায় বিক্ষোভ হচ্ছে। চলমান ট্রেনগুলোর রুট পরিবর্তন করলে বিক্ষোভ আরও বৃদ্ধি পাবে। বিক্ষোভ বৃদ্ধি করা বা জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলা আমাদের কাজ নয়। আমরা ভাবছি, চলমান ট্রেনগুলোর রুট ঠিক রেখে একটি নতুন ট্রেন খুলনা-নড়াইল-ঢাকা, ঢাকা-নড়াইল-যশোর, যশোর-নড়াইল-ঢাকা রুটে চালানো যায় কিনা। আমরা বিভিন্ন ভাবনা যাচাই-বাছাই করছি এবং সুষম বণ্টনের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। রেলকে রক্ষা করার চেষ্টা করছি।’
সভায় বিসিকের সাবেক চেয়ারম্যান ও যশোরের কৃতী সন্তান মাহবুবুর রহমান যশোর জেলার দাবির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে বলেন, ‘ব্রিটিশ ভারতের প্রথম জেলা যশোর, যেটি সবদিক দিয়ে সব সময় বঞ্চিত। মেডিকেল কলেজ পেলেও হাসপাতালটি আজও পায়নি, সিটি করপোরেশন পায়নি, অনেক দেরিতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েছি। ঢাকা নগরকে পরিবেশ ও জনচাপ থেকে রক্ষার জন্য নিজ নিজ এলাকা থেকে ঢাকায় অফিস করার জন্য ট্রেনের সময়সূচি তৈরির জন্য অনুরোধ করি।’
বৃহত্তর যশোর রেল যোগাযোগ উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ আন্তঃনগর ট্রেনে সুলভ বগি যুক্ত করার দাবির যুক্তি তুলে ধরেন। যুগ্ম আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান ভিটু যশোর-ঢাকা পদ্মাসেতু লিংক প্রকল্পের জন্য চীন থেকে ক্রয়কৃত ১০০ কোচ কোথায় জানতে চান। ফারাজী আহমেদ সাঈদ বুলবুল বলেন, ‘সংবাদপত্রে খবর এসেছে যে প্রকল্প উদ্বোধনের দিন উৎসব নয়, বিক্ষোভ হবে বৃহত্তর যশোরে— বিষয়টি বিবেচনায় নেবেন।’
বৃহত্তর যশোর রেল যোগাযোগ উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির প্রতিনিধি দলে ছিলেন বিসিকের সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান, উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ, সদস্য সচিব ইঞ্জি. রুহুল আমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান ভিটু, যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আমিনুর রহমান হিরু, যুগ্ম আহ্বায়ক ফারাজী আহমেদ সাঈদ বুলবুল, সাবেক অধ্যক্ষ শাহিন ইকবাল, সাঈদ নাসির উদ্দিন আহমেদ সেফার্ড, যুগ্ম সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান মিলন ও কোটচাঁদপুর কমিটির আহ্বায়ক আগা খান।
প্রতিনিধি/একেবি