বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন সাকিব মাহমুদুল্লাহ। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেট ছিল তার প্রিয় খেলা, আর সেই স্বপ্নের পথে হাঁটতে গিয়ে তিনি অর্জন করেছিলেন সুনাম। তবে, এক ভয়াবহ ঘটনার পর এখন সাকিবের একমাত্র লড়াই—চোখের আলো ফিরে পাওয়া।
সৈয়দপুর পৌর শহরের কাজীপাড়া মহল্লার বাসিন্দা সাকিব, বর্তমানে রংপুর কারমাইকেল কলেজে ব্যবস্থাপনা বিভাগে পড়াশোনা করছেন। তার বাবা আকবর আলী ছিলেন মাংস ব্যবসায়ী এবং মা আছিয়া খাতুন গৃহিণী। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে সাকিব সবার ছোট।
বিজ্ঞাপন
ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি গভীর ভালোবাসা ছিল সাকিবের। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি নিয়মিত ক্রিকেট অনুশীলন করতেন এবং স্থানীয় বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে প্রশংসা অর্জন করেন। খেলা যত উন্নত হতে থাকে, ততই তার স্বপ্ন উঁচুতে উঠে। জাতীয় দলের জন্য খেলার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। জেলা ক্রিকেট দলে প্রথম বিভাগে বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে খেলা শুরু করেন। খেলার আয় দিয়ে নিজের পড়াশোনার খরচও চালাতেন।
কিন্তু ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই সৈয়দপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে সাকিবের জীবন একেবারে পাল্টে যায়। পুলিশের ছররা গুলির আঘাতে তার দুটি চোখে গুলি লাগে। চিকিৎসা শেষে তার বাঁ চোখের দৃষ্টি পুরোপুরি চলে গেছে, আর ডান চোখেও কিছুই পরিষ্কার দেখতে পান না। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার চোখের আলো ফিরিয়ে আনতে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন, কিন্তু তার পরিবার এ ধরনের বড় অঙ্কের খরচ বহন করতে অক্ষম।
সাকিব জানান, তার বাবা একদিন তাকে জাতীয় দলে খেলতে দেখতে চেয়েছিলেন। বাবার সেই স্বপ্ন পূরণ করতে সাকিব শৈশব থেকে কঠোর পরিশ্রম করেছেন। কিন্তু বাবার মৃত্যু (২০১৭) পরও সাকিব থেমে যাননি, তিনি তার বাবার দেখানো পথে এগিয়ে যান। তবে, পুলিশ গুলির আঘাত তাকে বাধাগ্রস্ত করেছে, আর আজ তার চোখের আলো ফিরে পেতে চিকিৎসা সহায়তার প্রয়োজন।
সাকিব বলেন, ‘বাবা চেয়েছিলেন আমি একদিন ক্রিকেটে দেশের জন্য কিছু করি। কিন্তু এখন আর আমার মাঠে ফিরে যাওয়ার আশা নেই। শুধু চোখের আলো ফিরে পেতে চাই। আমি চাই, সরকার ও দেশের মানুষ আমার সাহায্যে এগিয়ে আসুক।’
বিজ্ঞাপন
সৈয়দপুর উপজেলার সাবেক ক্রিকেটার মোক্তার সিদ্দিকী বলেন, ‘সাকিব ছোটবেলা থেকেই আমার কাছে অনুশীলন করেছে। সে আমাদের সিটি ক্রিকেট ক্লাবের নিয়মিত খেলোয়াড় ছিল। এখন তার চিকিৎসার জন্য সাহায্য প্রয়োজন। তার পরিবার এত বড় খরচ বহন করতে পারবে না, তাই আমি সরকারের কাছে সাহায্যের আহ্বান জানাচ্ছি।’
এ বিষয়ে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নূর-ই-আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘ছাত্র আন্দোলনের আহতদের তালিকা হাসপাতাল থেকে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সাকিবের চিকিৎসা নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তার পরিবার কাগজপত্র নিয়ে যোগাযোগ করলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সাকিব মাহমুদুল্লাহ আজ মাঠে ফেরার আশা নিয়ে লড়াই করছেন তার চোখের আলো ফিরে পাওয়ার জন্য। তার স্বপ্ন ছিল ক্রিকেটে দেশের জন্য কিছু করা, তবে আজ সেই স্বপ্নের পথে চোখের আলো ফিরে পেলে হয়তো আবারও মাঠে ফিরে আসবেন।
প্রতিনিধি/একেবি

