‘শুধু বর্ষার মৌসুমের জন্য নাঈম চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা ছিল ৬ গন্ডা (৪৮ শতক) আর জোর করে নিয়ে নিল ১ একর ৬০ শতক। পুরো জমিতে বাঁশের চালির ঘের দেওয়ার সময় বাঁধা দিতে গেলে আমাকে পুলিশ দিয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয় চেয়ারম্যানের কেরানি। তখন তাদের ক্ষমতা ছিল। তাই বেশি কিছু বলতেও পারিনি। আমি একলা মানুষ, সমাজের কেউ কিচ্ছু বলেওনি। এখন রবিশস্য করার সময়, কিন্তু বালি দিয়ে পুরো জমি দখলে থাকায় চাষবাস করারও লক্ষণ দেখি না।’ কথাগুলো বলছিলেন আবুল হোসেন প্রকাশ বুদ্ধিমাঝি নামের এক অশীতিপর বৃদ্ধ।
![]()
বিজ্ঞাপন
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার চরকিং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাঈম উদ্দিন অল্প জমিতে বালি রাখার নামে পুরো জমি গ্রাস করে নেওয়ায় এভাবেই নিজেদের অসহায়ত্বের কথা জানালেন বুদ্ধিমাঝি ও তার পরিবার। ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড কিল্লা বাজার সংলগ্ন তিন ফসলি জমিটি বর্তমানে বাঁশ-জালের ঘেরের মধ্যে বালি পূর্ণ থাকায় শীতকালীন ফসল কিংবা রবিশস্য করার আসাও ছেড়ে দিয়েছেন স্থানীয় ভুক্তভোগী অসহায় পরিবারটি।
![]()
শনিবার (১৬ নভেম্বর) বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কিল্লা বাজার মসজিদ সংলগ্ন জমিতে বিশাল আয়তনের বাঁশ-জালের চালি দিয়ে ঘের তৈরি করে বালু আটকিয়ে ঢিবি করে রাখা হয়েছে। নিকটতম নদীর কূল থেকে বালু ওঠানোর কাজে ব্যবহৃত লম্বা পাইপের সংযোগ জমির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। আর সেখান থেকে অপর পাইপ সংযোগ রাস্তার মাঝ দিয়ে অন্যত্র নেওয়া হচ্ছে। এতে পথচারীদের হাঁটতে চলতে বড্ড অসুবিধা হচ্ছে।
![]()
বিজ্ঞাপন
স্থানীয়দের থেকে জানা যায়, কিল্লা বাজার থেকে পাশ্ববর্তী রাস্তা সংস্কারের জন্য নদী থেকে বালু উত্তোলন করে বুদ্ধিমাঝির কৃষি জমিতে এনে রাখা হয়। বুদ্ধিমাঝির দান করা মসজিদের ছোট পুকুরটিও বালি ফেলে জোরপূর্বক ভরাট করা হয়। এতে জমির মালিক বাঁধা দিলে তাকে ভয়ভীতি ও হেনস্থা করা হয়।
![]()
পার্শ্ববর্তী ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার মনির উদ্দিন জানান, আমাদের জাগলার চরের পাশ থেকে বালি উত্তোলন করে নিরীহ বুদ্ধিমাঝির জমি দখলে নিয়েছে নাঈম চেয়ারম্যান। তারা তাদের কাজ করবে এতে আমাদেরতো অসুবিধা নাই। কিন্তু বালি তুলে নদী তীরের ক্ষতি এবং আরেকজনের জমি দখলে নেওয়া তো অন্যায়।
![]()
ভুক্তভোগী আবুল হোসেন ওরফে বুদ্ধিমাঝির ছেলে আকবর অভিযোগ করে বলেন, নাঈম চেয়ারম্যান আমার বাবার সঙ্গে তিন মাসের জন্য ৬ গন্ডা জমি ভাড়া নেওয়ার কথা বলে ১৬০ শতক দখল করে। সেসময় তাদের ক্ষমতা ছিল বলে আমরা কিছু বলতে পারিনি। প্রশাসনসহ সব মহলে জানাজানির পর আমাদেরকে কিছু টাকা দিয়েছে। কিছুদিন আগে তারা জোরাজোরি করে আমাদের থেকে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষরও নিয়ে নেয়। সাংবাদিকদের জানানোর কারণে আমাদেরকে হুমকি-ধমকি দেয়। জমিটিও সহজে তারা খালি করবে না বলে।
![]()
এ বিষয়ে চরকিং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাঈম উদ্দিন মুঠো ফোনে জানান, তাদেরকে ৬০ হাজার টাকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। জনস্বার্থে রাস্তা সংস্কারের জন্য বাইরে থেকে বালি আনা হচ্ছে।
![]()
উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিল্টন চাকমা জানান, অভিযুক্তরা বলছে তারা নাকি বাইরে থেকে বালি ক্রয় করছে এবং ওই জমিটি ভাড়া করেছে। এরপরও যদি অসঙ্গতি পায় তবে আইনগত ব্যবস্থা নেব।
প্রতিনিধি/এসএস

