টাঙ্গাইলের মধুপুরে এক আদিবাসী শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ ঘটনাটি মিমাংসার নামে ১০ হাজার টাকায় ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
পরে বিষয়টি সমাধান না হওয়ায় শিশুটির পরিবার গত শুক্রবার (৮ নভেম্বর) মধুপুর থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করে।
বিজ্ঞাপন
পুলিশ প্রাথমিক তদন্ত করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মধুপুর থানায় গত সোমবার ১১ নভেম্বর অভিযোগটি এফআইআর হিসেবে নথিভুক্ত করে।
এদিকে, বুধবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ধর্ষণের শিকার ওই শিশুর মেডিকেল পরীক্ষা জন্য টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এর আগে মামলার পর গত মঙ্গলবার ১২ নভেম্বর বিকেলে টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোছা. রুমি খাতুন শিশুটির জবানবন্দি গ্রহণ করেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, মধুপুর উপজেলার শোলাকুড়ি ইউনিয়নের ভেদুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কয়েকজন গত ৭ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) ভেদুরিয়া গ্রামের সেলেশটিন নকরেকের বাড়ির আঙিনায় খেলা করছিল। খেলার এক ফাঁকে সেলেশটিন নকরেকের ছেলে মিশর ডিউ (২৫) ছয় বছরের এক নারী শিশু শিক্ষার্থীকে চিপস দেওয়ার কথা বলে তার ঘরে ডেকে নেয়।
এরপর ওই নারী শিশু শিক্ষার্থীর মুখ চেপে ধরে পরনের কাপড় খুলে ধর্ষণ করে। ওই শিক্ষার্থী বাড়িতে গেলে পরনের হাফপ্যান্টে রক্ত দেখে তার মা জানতে চাইলে শিক্ষার্থী মায়ের কাছে সবকিছু খুলে বলে। পরে তার মা সেলেশটিন নকরেকের কাছে তার ছেলে মিশর ডিউয়ের কুকর্মের কথা জানায়। ওই সময়ই মিশর ডিউ বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার হুমকি দেয়।
বিজ্ঞাপন
ওই শিক্ষার্থীর বাবা-মা পরিবার ও বংশের লোকজনদের সঙ্গে পরামর্শ করে। পরামর্শের এক পর্যায়ে দুলাল কুবি নামে এক মাতব্বর বিষয়টি পারিবারিকভাবে মীমাংসার উদ্যোগ নেয়। পরে ধর্ষকের পরিবারের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টায় নামকাওয়াস্তে সামাজিক বৈঠক বসায়।
এদিকে, শিশুর শারীরিক পরীক্ষার জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের পক্ষ থেকে ৩ সদস্য একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। হাসপাতাল গঠিত মেডিকেল বোর্ডে আরএস (গাইনি) চিকিৎসক ডা. সাদিয়া সিদ্দিকাকে সভাপতি এবং মেডিকেল অফিসার ডা. মোছা. নাসরিন সুলতানাকে সদস্য এবং মেডিকেল অফিসার ডা. আবিদা সুলতানাকে সদস্য সচিব করা হয়েছে।
মেডিকেল বোর্ডের সভাপতি ডা. সাদিয়া সিদ্দিকা জানান, ওই শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করে নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা চলছে- এরপর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মতামত দিলে বুধবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় মেডিকেল পরীক্ষা করা হয়।
শিশুর মা ও বাবা জানান, সেলেশটিন নকরেক তাদের প্রতিবেশি ও সম্পর্কে চাচা। তার ছেলে মিশর ডিউ বখাটে প্রকৃতির ছেলে। চিপস দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের মেয়েকে ডেকে ঘরে নিয়ে মিশর ডিউ মুখ চেপে ধরে নির্যাতন চালিয়েছে। তারা মিশর ডিউয়ের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।
এ ঘটনায় শোলাকুড়ি ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আমরুশ সিমসাং জানান, খবর শুনে তিনি ওই নারীশিশুর বাড়িতে গিয়েছিলেন। তিনি এ বিষয়ে প্রথমে চিকিৎসা নিতে বলেছেন এবং পরে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। আদিবাসীদের নিয়মানুযায়ী পারিবারিকভাবে তারা মীমাংসার উদ্যোগ নিয়ে ছিলেন। কিন্তু কোনো মীমাংসা হয়নি। পরে তারা থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
স্থানীয় মাতব্বর দুলাল কুবি জানান, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। বিষয়টি সমাধানের জন্য আদিবাসী প্রথা অনুযায়ী মাহরাং (শনি পূজা) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরে ‘মাহরাং’ অনুষ্ঠান করে তারা অভিযুক্ত মিশর ডিউকে রেহাই দেন। পরে শিশুটির পরিবার থানায় মামলা করেছেন বলে তিনি শুনেছেন।
এ বিষয়ে শোলাকুড়ি ইউপি চেয়ারম্যান রুস্তম আলী জানান, এ বিষয়ে কেউ তাকে জানায়নি। বিষয়টি নিয়ে পরিষদে সদস্যদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছিল, সেই আলোচনার মাধ্যমে তিনি জানতে পেরেছেন।
এ ব্যাপারে মধুপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এমরানুল কবির জানান, আদিবাসী শিশুকে ধর্ষণের বিষয়ে শিশুটির বাবা বাদী হয়ে থানায় মিশর ডিউকে একমাত্র আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। ইতোমধ্যে টাঙ্গাইলের সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট মোছা. রুমি খাতুন শিশুটির জবানবন্দি গ্রহণ করেছেন। শিশুটির মেডিকেল পরীক্ষা করার জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
প্রতিনিধি/এসএস