সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

শ্বাসরোধে মুনতাহার মৃত্যু, এক নিষ্পাপ প্রাণের অকাল পরিণতি

জেলা প্রতিনিধি, সিলেট
প্রকাশিত: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৩ পিএম

শেয়ার করুন:

শ্বাসরোধে মুনতাহার মৃত্যু, এক নিষ্পাপ প্রাণের অকাল পরিণতি

সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার বীরদল ভাড়ারিফৌদ গ্রামে ৩ নভেম্বর সকালে নিখোঁজ হওয়া পাঁচ বছরের মুনতাহা আক্তারের লাশ আজ উদ্ধার হয়েছে। তার মৃত্যু রহস্য উন্মোচন করে পুলিশ জানায়, শিশু মুনতাহাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। নিষ্পাপ এই শিশুটির অকাল পরিণতি সারাদেশে শোক ও ক্ষোভের ঝড় তুলেছে।

নিখোঁজের এক সপ্তাহ পর লাশ উদ্ধার
এক ওয়াজ মাহফিল থেকে মুনতাহা বাড়ি ফিরে যাওয়ার পরপরই নিখোঁজ হয়ে যায়। প্রথম দিকে পরিবারের সদস্যরা তাকে খুঁজতে শুরু করেন এবং বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়া পোস্টের মাধ্যমে সহায়তা চান। নিখোঁজের সাত দিন পর, আজ ভোরে বাড়ির পাশের একটি ডোবায় শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশের শরীরে কাদা ছিল এবং গলায় রশিজাতীয় কিছু পেঁচানো ছিল, যা শ্বাসরোধের চিহ্ন হিসেবে দেখা গেছে।


বিজ্ঞাপন


পুলিশের বক্তব্য
কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল আওয়াল সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘প্রাথমিক তদন্তে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, মুনতাহাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। শিশুটির লাশ উদ্ধার হওয়ার পর আমরা দ্রুত স্থানীয় এক নারী, মর্জিয়া আক্তারকে আটক করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে জানা গেছে যে, মুনতাহাকে প্রাইভেট পড়াতেন মর্জিয়া আক্তার। সম্প্রতি মুনতাহার পরিবার মর্জিয়াকে পড়ানোর কাজ থেকে বাদ দিয়েছিল, যা থেকে ঘটে এই হত্যাকাণ্ড।’

ওসি আরও বলেন, ‘মুনতাহাকে হত্যা করার পর, মর্জিয়া আক্তার তার লাশ একটি ডোবায় পুঁতে রাখে। পরে, তার মা লাশটি অন্য জায়গায় সরাতে গিয়ে স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়েন। আমরা দ্রুত তদন্ত শুরু করেছি এবং আরো একাধিক সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি।’

আরও পড়ুন—

শক্ত প্রতিক্রিয়া 
মুনতাহার হত্যাকাণ্ডে শোকের মাতম চলছে সিলেটসহ সারাদেশে। ফেসবুকে তার হাস্যোজ্জ্বল ছবি শেয়ার করে অনেকেই হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিকার এবং দ্রুত বিচার দাবি করেছেন। সমাজকর্মী, সাংবাদিক এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা একে ‘মানবতার জন্য কলঙ্কজনক ঘটনা’ বলে মন্তব্য করেছেন। প্রবাসী সিলেটবাসীও মুনতাহার মৃত্যুর ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন, তাদের মাঝে ক্ষোভ এবং ক্ষতিপূরণের দাবি স্পষ্ট।এই হত্যাকাণ্ডের পর এক প্রশ্ন উঠেছে—কীভাবে একজন নিষ্পাপ শিশুকে নির্মমভাবে হত্যা করা সম্ভব? মুনতাহার অকাল পরিণতির ঘটনায় সরকারের প্রতি দাবি উঠেছে, শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ফৌজদারি আইনে আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

জানাজায় হাজারো মানুষের উপস্থিতি
মুনতাহার জানাজায় হাজারো মানুষ অংশ নেয়। মুনতাহার পরিবার এবং গ্রামবাসীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন, এই নিষ্পাপ প্রাণের অকাল পরিণতি তাদের মনের গভীরে আঘাত দিয়েছে। জানাজার পর, মুনতাহাকে তার নিজ গ্রামে দাফন করা হয়।

মুনতাহার হত্যার বিরুদ্ধে সারাদেশের প্রতিবাদ
মুনতাহার এই নির্মম মৃত্যু শুধু তার পরিবারের জন্য নয়, সারাদেশের জন্য এক বড় আঘাত। শিশুর মৃত্যু এবং হত্যাকারীর শাস্তির দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সারা দেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ‘কীভাবে একজন শিশুর এমন নির্মম মৃত্যু হতে পারে?’

বিচারের দাবি এবং এই ঘটনার ন্যায়সঙ্গত প্রতিকার চেয়ে দেশের জনগণ একসাথে সোচ্চার হয়েছেন। শিশুদের নিরাপত্তা এবং বিচার ব্যবস্থার উন্নতির জন্য আরও কঠোর আইন ও ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তীব্র হয়ে উঠেছে।

মুনতাহার অকাল মৃত্যু তার পরিবারের জন্য এক অপূরণীয় শূন্যতা রেখে গেলেও, তার স্মৃতিতে প্রতিজ্ঞা করা হচ্ছে যে, দেশের প্রতিটি শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হবে। এই নির্মম হত্যাকাণ্ড যেন আর কোনো শিশুকে শিকার না হতে হয়, সেজন্য সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি এবং কঠোর আইন প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর