সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

গাইবান্ধায় ৭০০ বছরের পুরনো ‘গায়েবি মসজিদ’

তোফায়েল হোসেন জাকির
প্রকাশিত: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৫ পিএম

শেয়ার করুন:

গাইবান্ধায় ৭০০ বছরের পুরনো ‘গায়েবি মসজিদ’

গাইবান্ধার ইতিহাস-ঐতিহ্যের ‘বড় জামালপুর শাহী জামে মসজিদ’। এটি কবে-কখন নির্মিত তা সঠিক জানা নেই কারও। অনেকে এটি গায়েবী মসজিদ হিসেবে জানেন। তবে ধারণা করা হয়- প্রায় ৭শ বছর আগে এই মসজিদ নির্মিত হয়েছে।

এক সময়ে মূল কাঠামো এ মসজিদে ৬০ জন মুসল্লির বেশি নামাজ আদায় করা যেতো না। সেটি ধীরে ধীরে বর্ধিত করে এখন সহস্রাধিক মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করছেন।


বিজ্ঞাপন


ইতিহাসের এই শাহী জামে মসজিদটি জেলার জামালপুর ইউনিয়নের বড় জামালপুর গ্রামে অবস্থিত। এটির পাশে রয়েছে পীরে কামেল হজরত শাহ জামাল (রহ.) এর মাজার। এছাড়াও একটি ফাজিল মাদরাসা ও এতিমখানাও রয়েছে।

gaibandha_2

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইংরেজ শাসন আমলে মসজিদটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে মাটির নিচে চাপা পড়ে যায়। মসজিদ এলাকায় লোকবসতি না থাকায় বনজঙ্গল আচ্ছন্ন হয়ে মসজিদটি ঢাকা পড়ে যায়। বিগত ৬০ দশকের প্রথম দিকে গাইবান্ধা মহকুমা প্রশাসক হক্কানি কুতুবউদ্দিন নামে এক ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি এসডিও হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর স্থানীয় লোকদের কাছে মসজিদটির ইতিকথা শোনেন। লোকজনের কথা শুনে তিনি স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় মসজিদটি অনুসন্ধান করতে থাকেন। কিন্তু মসজিদটির জায়গায় বিশাল বট গাছ গজিয়ে ওঠায় মসজিদটি বটবৃক্ষের আড়ালে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল। হঠাৎ একদিন প্রচণ্ড এক ঝড়ে বট গাছটি ভেঙে পড়লে স্থানীয় লোকজন মসজিদটি দেখতে পায়। সেই থেকে মানুষ মসজিদটিকে গায়েবি মসজিদ হিসেবে অবহিত করতে থাকে।

জনশ্রুতি আছে, মসজিদটি উদ্ধারের কিছুদিন পর সিলেটের কামেল ব্যক্তি হজরত শাহ্ জামাল (রহ.) স্বপরিবারে এ এলাকায় আগমন করেন। তিনি মসজিদটি দেখাশুনা শুরু করেন। সেই থেকে মসজিদটির নামকরণ হয় জামালপুর শাহী জামে মসজিদ।


বিজ্ঞাপন


এই মসজিদের ইতিহাস প্রসঙ্গে লোকমুখে প্রচলিত আছে, তৎকালীন সময়ে সৈয়দ ভোম আলী ভারতের শিলিগুড়ি থেকে সুলতান মাহমুদের আমলে হযরত খাঁজা মঈন উদ্দিন চিশতির নির্দেশে ইসলাম প্রচারের জন্য এই এলাকায় এসে হজরত শাহ জামালের সঙ্গে মিলিত হন।

সম্ভবত: তারাই এই মসজিদ নির্মাণ করেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ হিসেবে মসজিদটি সোয়া প্রায় ৭০০ বছর আগে নির্মিত।

gaibandha_3

এরপর হজরত শাহ জামালের নামানুসারে ইউনিয়ন ও গ্রামের নামকরণ করা হয়েছে- জামালপুর। এই মসজিদের উত্তর পাশে রয়েছে পীরে কামেল হজরত শাহ জামাল (রহ.)-এর মাজার।

মসজিদের জমির কাগজপত্র খতিয়ে দেখা যায়, ৪০ সনের রেকর্ড অনুযায়ী মসজিদের ১৬ শতক জমির মালিক ছিলেন বড় জামালপুর গ্রামের মরহুম খন্দকার আবদুল মজিদ গং। পরবর্তীতে মসজিদের নামে জমিটি লিখে দেন তারা। ফলে এ মসজিদের দাতা আবদুল মজিদ গং বলে জানা গেছে।

মসজিদটির স্থানীয় মুসল্লি জেলাল আকন্দ বলেন, এই মসজিদে দূর-দূরান্ত থেকে ধর্মপ্রাণ মানুষ নামাজ পড়তে আসেন। কেউ কেউ মান্নত করে নগদ টাকা ও মিষ্টি-পায়েসসহ অন্যান্য জিনিসপত্র দেন। 

gaibandha_1

আনোয়ার হোসেন নামের আরেক মুসল্লি বলেন, মসজিদটি বাহির থেকে অনেক বড় মনে হলেও মূল মসজিদের ভেতরে শুধুমাত্র দুই কাতারে ৬০ জন মুসল্লি নিয়ে নামাজ আদায় করা যায়। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে এলাকার লোকজন মসজিদের মূল অবকাঠামো ঠিক রেখে সামনের দিকে (সংযুক্ত) মসজিদ ৩য় তলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছ। এখন প্রায় সহস্রাধিক মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।

মসজিদ কমিটির সম্পাদক আজহার আলী সরকার, আগের চেয়ে মসজিদটির অনেক প্রসার করা হয়েছে। ধর্মপ্রাণ মানুষের সাহায্য-সহযোহিতা ও মান্নতের অর্থ ইত্যাদি দিয়ে স্থানীয়দের আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে মসজিদ পরিচালনা করা হয়। মসজিদের আরও অনেক কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। দানশীল ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা পেলে দ্রুত কাজ সম্পন্ন করা যাবে।

gaibandha_4

প্রতি শুক্রবার দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসা মানুষরা মসজিদে মান্নতের গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, চাল, মিষ্টি ও নগদ টাকা নিয়ে আসেন এবং পোলাও করে শিন্নি বিতরণ করেন এখানে। কথিত আছে, যে কেউ যে কোনো নিয়তে মান্নত করলে আল্লাহর অশেষ রহমতে তা পূরণ হয় বলে জানিয়েছেন- জামালপুর শাহী জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি খন্দকার আবদুল্লাহ আল মামুন।

প্রতিনিধি/ এজে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর