চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে জিম্মি থাকা এক দম্পত্তিকে উদ্ধারে গিয়ে হামলা ও লাঞ্ছিত হয়েছেন পুলিশের এক উপ-পরিদর্শক। এসআই মেহেদি হাসানের নাম জানা গেলেও অন্য পুলিশ সদস্যদের নাম জানা যায়নি।
এদিকে পুলিশের ওপর আক্রমণের সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ৪৫ সেকেন্ডের ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে একটি আম বাগানে অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ-শিশু চিৎকার, চেচাঁমেচি ও ছোটাছুটি করছে। সেখানে হঠাৎই দেখা গেছে পুলিশের উপ-পরিদর্শক মেহেদী হাসান প্রাণপণে দৌড়ে পালাচ্ছেন এবং দুই পাশ থেকে দুজন ব্যক্তি তার ওপর হামলা করছে। পেছন থেকে শিশুসহ কয়েকজন এসআই মেহেদীকে তাড়া করছে। পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা হয়নি এসআই মেহেদির। এসময় আক্রমণকারীদের প্রতিআক্রমণ করতে দেখা যায়। এরপর তাকে ঘিরে ধরে আবারও মারধর করছে বিক্ষুব্ধরা। একপর্যায়ে এসআই মেহেদী নিজেকে রক্ষা করতে আক্রমনকারীদের লাথি মারতে দেখা যায়।এসময় তিনি পড়ে যান এবং পুনরায় উঠে দৌড় দিয়ে নিজে রক্ষার চেষ্টা করেন। তবে এস আই মেহেদিকে মারধর করার সময় অন্য পুলিশ সদস্যদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এদিকে রাতেই পুলিশ ঘটনাটি মিমাংশা করেছে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। তবে পুলিশকে পেটানোর বিষয়টি অস্বীকার করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুলিশ সুপার রেজাউল করিম।
বিজ্ঞাপন
জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় এলাকবাসী জানান, শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট ইউনিয়নের বিশ্বনাথপুর মিয়াপাড়া গ্রামের আনরুল ইসলামের মেয়ের সঙ্গে বিয়ে হয় শাহবাজপুর ইউনিয়নের সালামপুর গ্রামের সাহেব আলীর ছেলে বেলালের। পরে স্বামী-স্ত্রীর বনিবনা না হওয়ায় শনিবার (২ নভেম্বর) মেয়ে পক্ষের লোকজন ছেলে পক্ষের বাড়িতে যায় এবং রাতে ছেলে পক্ষের বাড়িতে অবস্থান করে। পরদিন মেয়ে পক্ষের লোকজন থানায় অভিযোগ করে, ছেলে পক্ষের লোকজনকে মেয়ে পক্ষের লোকজনকে জিম্মি করে রেখেছেন। অভিযোগ পেয়ে রোববার (৩ নভেম্বর) বিকেলে ঘটনাস্থলে আসেন শিবগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে ৫ পুলিশ সদস্য। এসময় দুই পক্ষের লোকজনের রোষানলে পড়ে ছেলে পক্ষের লোকজন পুলিশকে মারধর করে।
তবে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে করে শিবগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মেহেদি হাসান বলেন, আমাদের মারধর করা হয়নি। আমি পা পিচ্ছিলে পড়ে গিয়েছিলাম। পরে আটকে থাকা ব্যক্তিদের উদ্ধার করে নিয়ে এসেছি। এগুলো হয়েই থাকে।
বিজ্ঞাপন
শাহবাজপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আব্দুস সালাম জানান, অভিযোগ পেয়ে পুলিশ আটকে থাকা ব্যক্তিদের উদ্ধার করতে এসে এমন ঘটনা ঘটেছে। একজন পুলিশ সদস্যকে মারধর করতে ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে। লাঞ্ছিতও করা হয়েছে।
শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিজামুল হক রানা জানান, আমি একটু বাইরে আছি। তবে শুনেছি, সেখানে একটা ঘটনা ঘটেছে এবং ধস্তাধস্তির হয়েছে। পরে সেখানেই সেই সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে।
শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম কিবরিয়া জানান, রাকা নামে এক নারী আমাদের অভিযোগ করেন, তার মামাতো ভাই এবং ভাবীকে মামাতো বোনের শ্বশুরবাড়ির লোকজন আটকে রেখেছে। এই অবস্থায় তাদের উদ্ধারের জন্য আমাদের পুলিশের একটি টিম সেখানে যায়। এরপর দুপক্ষের লোকজনের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এসময় এসআই মেহেদি হাসান তাদের থামাতে গিয়ে পড়ে যায়। তবে পুলিশকে মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেন ওসি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুলিশ সুপার রেজাউল করিম পুলিশকে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, পুলিশের ওপর কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। পরিবারিক ঝামেলার অভিযোগ পেয়ে পুলিশ সেখানে গিয়েছে। পুলিশের সঙ্গে কোনো ঝামেলা হয়নি। ভিডিতে এসআই মেহেদী হাসানের ওপর হামলার বিষয়ে তিনি বলেন ভিডিওটা আমিও দেখেছি, সেখানে পুলিশকে হামলা বা মারধরের কোনো ঘটনা নেই।
প্রতিনিধি/এসএস