বিগত সরকারের জুলুম, নির্যাতন আর হামলা মামলায় দীর্ঘ দিন ঘর ছাড়া ছিলেন শ্রমিক দল নেতা কাজল ফকির। তৎকালীন পুলিশ সুপার হারুনের সময় একটি বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে ডিবি পুলিশ তার ওপর নির্যাতন চালায়। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর নতুন অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলেও এখনো নানাভাবে নিগৃহীত ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ কাজল ফকিরের। বিশেষ করে বিএনপির একটি পক্ষ তার নামে ভুয়া ও বিকৃত তথ্য দিয়ে তাকে কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডকে ভুল বুঝিয়ে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংসের পাঁয়তারা করছেন বলে অভিযোগ তার।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শ্রীপুর উপজেলা শ্রমিক দলের আহ্বায়ক হিসেবে দীর্ঘদিন রাজনীতি করছেন কাজল ফকির। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় পুলিশ ও ক্ষমতাসীনদের কারণে হামলা, মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বিগত সরকারের আমলে গাজীপুর পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদের সময়কালে একটি বিরোধপূর্ণ জমিকে কেন্দ্র করে বিবাদীদের পক্ষ হয়ে ২০১৭ সালে ডিবি পুলিশ তাকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশ রিমান্ডে থাকাবস্থায় তার কাছে ১০ কোটি টাকা দাবি করা হয়। তিনি তাদেরকে ৭০ লাখ টাকা পরিশোধ করেন। তারপরও পুলিশ বিভিন্ন সময় মামলার স্বাক্ষীদের গ্রেফতার ও হয়রানি করে। এক পর্যায়ে এসপি হারুন কাজল ফকিরের নামে ১০টি মামলা দায়ের করে। এছাড়া গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগে তার নামে আরও ১৯টি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় দীর্ঘ দিন ফেরারি ছিলেন কাজল ফকির। শিকার হয়েছেন অবর্ণনীয় দুর্ভোগের।
বিজ্ঞাপন
ছাত্র জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন তিনি। কিন্তু তারপরও তার ও তার পরিবারের ওপর থেকে দুর্যোগের মেঘ কাটেনি।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের শ্রীপুরে ঝুট ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ভাঙচুরের ঘটনার পর শ্রমিক দল, কৃষক দল ও ছাত্রদলের তিন নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃত তিনজনের মধ্যে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের শ্রীপুর উপজেলা শিল্পাঞ্চল কমিটির আহ্বায়ক কাজল ফকিরকেও সংগঠনের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে যুক্ত থাকার অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়। তবে এ ঘটনায় কাজল ফকির নিজে জড়িত ছিলেন না বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও মামলার বাদী নিশ্চিত করেছেন।
ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্বে পদ হারানো কৃষক দল নেতা আবুল কালাম বলেন, এসকিউ সেলসিয়াস কারখানার ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্বে কাজল ফকির সম্পৃক্ত ছিলেন না। কিন্তু তারপরও তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
একই দাবি করেন মারামারি ঘটনায় দায়ের করা মামলার বাদী শাহাদাত হোসাইন পাপ্পু। তিনি বলেন, এসকিউ সেলসিয়াস কারখানার সামনে ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ঘটনায় কাজল ফকিরের সম্পৃক্ততা নেই। এঘটনায় দায়ের করা মামলায় তার নাম নেই।
বিজ্ঞাপন
এ ব্যাপারে কাজল ফকির আক্ষেপ করে বলেন, ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, জমি জবর দখল বা কোনো দখল বাণিজ্যের সঙ্গে আমি সম্পৃক্ত নই। তারপরও আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংসের জন্য একটি পক্ষ সব সময় মিথ্যা ও বিকৃত তথ্য দিয়ে আসছে। কেন্দ্রকে ভুল বুঝিয়ে আমাকে বহিষ্কার করিয়েছে।
বিএনপির হাইকমান্ডকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের যদি নূন্যতম সম্পৃক্ততা থাকে তবে আমি সংগঠনের শাস্তি মাথা পেতে নেব। বিগত পতিত সরকারের আমলে ২৯টি মামলা খেয়েছি, পলাতক জীবন যাপন করছি। এখন দলের সুদিনে আমার প্রতিপক্ষের লোকজন একের পর এক মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য উপস্থাপন করে চলছে।
প্রতিনিধি/টিবি