আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিলুপ্তির পথে দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী গরিবের ‘এসি বাড়ি’ খ্যাত মাটির ঘর। শীত-গ্রীষ্ম সব ঋতুতেই মাটির ঘর আরামদায়ক বাসস্থান। অতীতে এই এলাকার অধিকাংশ মানুষই মাটির ঘরে বসবাস করতো। অবস্থা সম্পন্ন মানুষ মাটির দোতালা ঘর বানাতেন।
![]()
বিজ্ঞাপন
দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলায় প্রায় প্রতিটি গ্রামেই এখনও কিছু কিছু মাটির তৈরি ঘর দেখা যায়। যার জানালা-দরজা কাঠের হলেও টালি অথবা খড়ের চালের বসতঘর। এক সময় এই এলাকার ধনী-গরিব সবাই সেই ঘরে বসবাস করতেন। তবে কালের বিবর্তনে আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিলুপ্ত হতে বসেছে মাটি দিয়ে তৈরি ঘর।
![]()
বর্তমানে মাটির ঘরের জায়গায় তৈরি হচ্ছে প্রাসাদসম অট্টালিকা। মাটির ঘরের স্থান দখল করে নিচ্ছে ইট-পাথরের দালান। একটু সুখের আশায় মানুষ কত কিছুই না করছে। তবুও মাটির ঘরের শান্তি ইট পাথরের দালান কোঠায় খুঁজে পাওয়া ভার।
![]()
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, এঁটেল বা আঠালো মাটি কাদায় পরিণত করে দুই-তিন ফুট চওড়া করে দেওয়াল তৈরি করা হতো। ১০-১৫ ফুট উঁচু দেয়ালে কাঠ বা বাঁশের সিলিং তৈরি করে তার ওপর খড়-কুটা অথবা ঢেউটিনের ছাউনি দেওয়া হতো। আর এই মাটির ঘর অনেক সময় দোতলা পর্যন্ত করা হয়। গৃহিণীরা মাটির দেওয়ালে বিভিন্ন রকমের আলপনা একে ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতেন।
আরও পড়ুন
ঘূর্ণিঝড় দানা: হেলে পড়েছে আমন ধান, দুশ্চিন্তায় লাখো কৃষক
এ ব্যাপরে দিনাজপুর সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী মানসি রায় ঢাকা মেইলকে বলেন, দাদা ও বাবার কাছে মাটির ঘরের কথা শুনেছি। আমাদের বাড়িও আগে মাটির ঘর ছিল। এই মাটির ঘরে থাকতে অনেক আরামদায়ক হয়ে থাকে। তবে দাদুর আমলে নাকি গ্রামের অনেকেই মাটির ঘরে বসবাস করতো।
![]()
বোচাগঞ্জ উপজেলার ভরলা গ্রামের সুবাসী বালা ঢাকা মেইলকে বলেন, জন্মের পর থেকেই মাটির ঘরেই বড় হয়েছি। এখনও মাটির ঘরেই থাকি। স্বামী মারা গেছে ছেলে ঢাকায় আছে তারা ইটের পাকা ঘর দিতে চায়। আমি পাকা ঘর দিতে দেই নাই। কারণ আমি যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন মাটির ঘরেই থেকে যাব।
![]()
একই গ্রামের শুভ রায় ঢাকা মেইলকে বলেন, আগে উপজেলার প্রতি বাড়িতেই মাটির ঘর ছিল। বর্তমানে মাটির ঘরের সংখ্যা খুবই কম। এ ছাড়া গ্রামের লোকজন এখন নানা কারণে অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল। তাই তারা এখন মাটির ঘরের পরিবর্তে ইটের ঘর দিচ্ছে।
![]()
সেতাবগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব শামসুল আলম ঢাকা মেইলকে বলেন, মাটির ঘর পরিবেশবান্ধব। এক সময় দিনাজপুর জেলায় প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই মাটির ঘর দেখা যেত। শৈশবে আমিও মাটির ঘরে থেকেছি। কিন্তু কালের বিবর্তনে এই বাসস্থান এখন আর নতুন করে তৈরি করতে দেখা যায় না। ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামীণ ঐতিহ্য মাটির ঘর।
প্রতিনিধি/এসএস

