চাকরিচ্যুত প্রতিবন্ধী এস এম জিয়াউল কবির তুহিন। মা-বাবা হারানোর বুকভরা ব্যাথা নিয়েই মাধ্যমিক (এসএসসি) ও উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষা দেন। অকৃতকার্য হন (ফেল) দুইবার করে চারবার। তবে অদম্য তুহিন তিনবার করে চেষ্টায় উত্তীর্ণ হন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে। ভাগ্যে একটি চাকরি জুটলে দুমুঠো খেয়ে একমাত্র মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে জীবন সাজানোর পথের সন্ধান পান। কিন্তু কোনো নোটিশ ছাড়াই হঠাৎ চাকরিচ্যুতির খবরে সেই পথ বন্ধ হয়ে গেছে তার।
শারীরিক প্রতিবন্ধী তুহিনের বাসা রাজশাহী নগরীর চৌদ্দপাই এলাকায়। বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণাগার (বিসিএসআইআর) রাজশাহীতে মাস্টাররোলে কর্মরত ছিলেন তিনি। ২০১৯ সালের ৩১ জুলাই কোনো নোটিশ ছাড়াই প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত তুহিনসহ ৫৩ জন কর্মচারীকে বরখাস্ত করেন তৎকালীন পরিচালক ইবরাহিম হোসেন। চাকরিচ্যুতদের মধ্যে দুজন বিধবা নারীও ছিলেন। চাকরিচ্যুত সকলের অবস্থা শোচনীয় হলেও প্রতিবন্ধী তুহিনের পরিস্থিতি ভীষণ করুণ।
বিজ্ঞাপন
![]()
জানা গেছে, চাকরিচ্যুতির পর কর্মচারিরা প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্নজনের কাছে চাকরিতে পুনর্বহালের জন্য আকুতি নিয়ে যান। কিন্তু ইতিবাচক কোনো ফল তারা পাননি। নিরুপায় হয়ে কর্মচারিরা একসঙ্গে রাজপথে আন্দোলনে নামেন ২০২০ সালে। চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে প্রতিষ্ঠানটির সামনে এবং নগরীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে মানববন্ধন ও সভা-সমাবেশ করেন বেশ কয়েকবার। রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে তুহিনও রাজপথে অবস্থান করেন। কিন্তু হৃদয় গলেনি তৎকালীন কর্মকর্তাদের। ওই সময় একজন সংসদ সদস্য প্রতিষ্ঠানটির পরিচালককে ফোন করেন। অন্তত প্রতিবন্ধী তুহিনকে কর্মস্থলে ফেরানোর আশ্বাস দেন পরিচালক। কিন্তু পরিচালকের দায়িত্ব থেকে বিদায়ের আগে নিজের বাড়ির কাজের লোককে নিয়োগ দিয়ে যান ইবরাহিম। কর্মচ্যুতই রয়ে যান তুহিনসহ ৫৩ কর্মচারি।
চৌদ্দপাই এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, স্ত্রী ও কলেজপড়ুয়া একমাত্র মেয়েকে নিয়ে চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন প্রতিবন্ধী তুহিন। ভিক্ষাবৃত্তিতে না নেমে কাজ করে সংসার চালাতে চান তিনি। কিন্তু অন্যায়ভাবে তাকে চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। চাকরিচ্যুতির পর থেকে তার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেছে। দুই হাত ও হাঁটুতে ভর দিয়ে কোনোমতে চলাফেরা করেন।
![]()
বিজ্ঞাপন
চাকরিচ্যুত প্রতিবন্ধী এস এম জিয়াউল কবির তুহিন ঢাকা মেইলকে বলেন, গত ৫ বছরে ম্যালা (অনেক) জনের দুয়ারে গেছি। কিন্তু চাকরি ফিরে পাইনি। ২০২১ সালের ৬ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর অফিসের একটি নম্বরে এসএমএস পাঠাই। এরপর সেখান থেকে কল আসে, কথা বলি। পরে জেলা প্রশাসকের অফিস থেকে আমাকে ডাকা হয়। পরদিন ৭ অক্টোবর জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলাম। তাকে সব খুলে বলি। তিনি সব শোনেন এবং আশ্বস্ত করেন। কিন্তু এখনো তো চাকরি ফিরে পেলাম না।
একপর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে তুহিন বলেন, আমার জীবন তো আর দশজন মানুষের মতো না। মা-বাবাকে হারিয়ে পরীক্ষা দিয়েছি। ফেল করেও লেখাপড়া বন্ধ করিনি। চাকরি পেয়েও বাদ দিয়ে দিয়্যাছে। একটা কর্ম পাইলে তাও মেয়েডার মুখে হাসি ফুটাতে পারতাম। কেউ যদি করুণা করে হলেও একটা চাকরি দিত। আর কত কষ্ট কইরবো? কষ্টে কষ্টেই কেটে গেল জীবনডা।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণাগার (বিসিএসআইআর) রাজশাহীর ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. মো. সেলিম খান ঢাকা মেইলকে বলেন, তাদের চাকরিচ্যুতির সময় অন্য পরিচালক ছিলেন। তবে বিষয়টি আমি অবগত। তারা মাস্টাররোলে ছিলেন। প্রতিবন্ধী তুহিনের বিষয়টিও শুনেছি। তাদের ব্যাপারে অডিট আপত্তি রয়েছে।
প্রতিনিধি/টিবি

