বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

জুম ছেড়ে কাজুতে ঝুঁকছেন বান্দরবানের চাষিরা

সুফল চাকমা
প্রকাশিত: ২৯ মে ২০২২, ০৯:৫৫ এএম

শেয়ার করুন:

জুম ছেড়ে কাজুতে ঝুঁকছেন বান্দরবানের চাষিরা

বান্দরবান জেলা শহর থেকে ৮০ কিলোমিটার দুরে থানছি উপজেলায় রাস্তার ধারে দেখা মেলে ছোটবড় কাজু বাদামের বাগানের। থোকায় থোকায় ঝুলছে লাল, হলুদ রঙের পাঁকা কাজু বাদাম। স্থানীয়রা একে বলে থাম ফল, কেউ আবার কেসনাটও বলেন। ইংরেজিতে এর নাম— ক্যাশু নাট (cashew nut)।

কথা বলে জানা গেলে, অধিকাংশ চাষিই কাজু বাদাম সংগ্রহ করে বাজারজাত করা শুরু করেছেন, দামও ভালো পাচ্ছেন। পাহাড়ীরা এখন জুম চাষ থেকে স্থায়ী ফলদ বাগান চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। 


বিজ্ঞাপন


থানছি উপজেলার বলিপাড়া ইউনিয়নের বিদ্যামনি পাড়ার বাসিন্দা ফোসা উ মারমা (৬১) বলেন, একসময় শুধু জুম চাষ করেই জীবিকা নির্বাহ করতেন পাহাড়িরা। দিন দিন জুমের জায়গা সংকুচিত হওয়ার কারণে এখন পাহাড়ীরা স্থায়ী ফলদ বাগান করার দিকেই ঝুঁকছেন। 

‘পাহাড়ে কলা, আম, বরই, কাজু বাদাম ভালো উৎপাদন হয়। তাই তিনি কৌতুহলবশতঃ ১১-১২ বছর আগে পাঁচ একর জায়গায় কাজু বাদাম লাগিয়েছিলাম এবং ৪ বছরের মধ্যেই ফলন এসেছিল। একসময় বাগানেই পঁচে যেত, বিক্রি হতো না। খাওয়ার মতো লোকজনও নাই এমনিই পড়ে থাকতো। এখন দিন পাল্টেছে। কোম্পানির লোকজন এবং পাইকারী ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কাজু বাদামের খোঁজখবর নেন। অনেকে আবার  বাড়ির আঙিনা থেকেই কিনে নিয়ে যান।’

ফোসা জানান, গতবছর ৫০ মণ কাজু বাদাম প্রতি মণ ৩ হাজার টাকা করে বিক্রি করেছিলেন। ৪ বছর আগে কাজু বাদাম প্রতি মণ সাড়ে ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি করতেন। এ বছর ৮০ মণ পেয়েছেন। প্রতিমণ ৩ হাজার ৫ শ’ টাকা করে বাজারে বিক্রি করেছেন। 

গাছে ঠিকমত পানি দিতে পারলে ফলন আরো একটু বেশি হতো বলে মনে করেন তিনি।
cashew nutখোঁজ নিয়ে জানা গেল, বিদ্যামনি পাড়ায় ১৫-১৬ জনের কাজু বাগান আছে। সবাই কম বেশি লাভবান হচ্ছেন।  


বিজ্ঞাপন


থানছি সদর ইউনিয়নের থানদাক পাড়ার কাজু বাদাম চাষি উবামং মারমা বলেন, এ বছর ৪৫ মণ কাজু বাদাম হবে বলে আশাবাদী। তিনি জানান, ইতোমধ্যে প্রতিমণ তিন হাজার পাঁচশত টাকা করে ২০ মণ কাজু বাদাম বিক্রি করেছেন। গত বছর ৩৫ মণ পেয়েছিলেন, কিন্তু করোনার কারণে দাম কম ছিল। তখন প্রতি মণ তিন হাজার টাকায় বিক্রি করেছিলেন।

বলি পাড়া ইউনিয়নের বাগান পাড়ার বাসিন্দা কর্ণজয় ত্রিপুরা জানান, তার মাত্র ২ শ’ কাজু বাদাম গাছ আছে। এবছর ফলন ভালো হয়েছে। ১০-১২ মণ ফল পেতে পারেন বলে আশা করছেন তিনি। তাদের পাড়ায় ১০ পরিবার কাজু বাগান চাষি আছেন। 

তিনি বলেন, এলাকায় এখন কাজু বাদাম চাষের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। চাষিরা কাজু বাদাম চাষে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির স্বপ্ন দেখছেন। এখন ন্যায্য মূল্য পেলে ভালো হয়। সরকারের পক্ষ থেকে শুষ্ক মৌসুমে বাগানে পানি সেচ ও সার এর সহযোগীতা পেলে খুব ভালো হতো বলেও উল্লেখ করেন তিনি। 
 
এদিকে চাষিদের কাছ থেকে মণ প্রতি ৩৩ শ’ থেকে ৩৫ শ’ টাকা করে কাজু বাদাম কিনছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ এগ্রিকালচার প্রোডাক্টস লিমিটেড এর ফিল্ড কো-অর্ডিনেটর রেম্বো ত্রিপুরা।
cashew nutবান্দরবান কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সাত উপজেলায় দুই হাজার আটশত বিয়াল্লিশ জন কাজু বাদাম চাষি আছেন। মোট এক হাজার আটশত সাঁইত্রিশ হেক্টর জায়গায় কাজু বাদাম চাষ হচ্ছে। গত ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ১ হাজার ২১২ মেট্রিকটন উৎপাদন হয়েছিল। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে এক হাজার ৩২৩ মেট্রিক টন কাজুবাদাম উৎপাদন হওয়ার লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ১.৩১ মেট্রিক টন  উৎপাদন টার্গেট করা হয়েছে। 

সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী পর্যায়েও কাজুবাদাম এর চারা উৎপাদন ও বিপনন করা হয়। বান্দরবান সদর উপজেলা সুয়ালক ইউনিয়নে এলএ এগ্রো কোম্পানির নার্সারীর  ব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল জানান, তাদের নার্সারি থেকে বিশ্বের উন্নত জাতের M23 কাজু বাদামের চারা প্রতি পিস ১৫০ টাকা করে বিক্রি করছেন। গত বছর ১ লক্ষ চারা বিক্রি করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফত উপ-পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, পার্বত্য জেলা বান্দরবানে দিন দিন কাজুবাদামে আবাদ বৃদ্ধি হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতন থেকে চাষিদেরকে সার, কৃষি উপকরণসহ প্রদানসহ সার্বিক পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে কাজু বাদাম গাছে পানি সেচ ব্যবস্থা করার জন্য বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি। 

তিনি বলেন, চারা লাগানোর ৩-৫ বছরে ভালো ফলন দেয়। রোগবালাই কম। এ জেলার মাটি কাজু বাদাম ও কফি চাষের জন্য খুবই উপযোগী।

 প্রতিনিধি/এএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর