মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ঘূর্ণিঝড় দানা: সাতক্ষীরা উপকূলে বৃষ্টি শুরু, বেড়িবাঁধ নিয়ে শঙ্কা

জেলা প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা
প্রকাশিত: ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০১:২৪ পিএম

শেয়ার করুন:

প্রধান উপদেষ্টার একান্ত সচিব হলেন কুমিল্লার মোজাম্মেল হক

ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে সাতক্ষীরা উপকূলে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। বুধবার (২৩ অক্টোবর) বেলা বারোটা থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিপাত চলতে থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আর নদীতে পানি বৃদ্ধিতে পাওয়ায় বেড়িবাঁধ নিয়ে উৎকণ্ঠা বাড়ছে উপকূলীয় এলাকার মানুষের মধ্যে।

উপকূলবাসীর আশঙ্কা ঘূর্ণিঝড় ডানা আঘাত হানলে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে আবারও এলাকা প্লাবিত হবে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে নদ-নদীর জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে ভেঙে যেতে পারে দুর্বল বেড়িবাঁধ। এজন্য উপকূলের বিভিন্ন এলাকার জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে চিন্তিত সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলা মানুষ।


বিজ্ঞাপন


এদিকে, ঘূর্ণিঝড় দানা মোকাবিলায় প্রস্তুতি হিসেবে বুধবার বিকেল চারটায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সভার আহ্বান করেছে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি।

thumbnail_VideoCapture_20241023-131653

সাতক্ষীরার আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী বলেন, ঘূর্ণিঝড় দানার কারণে সাতক্ষীরায় দুই নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যাতে বলা হয়েছে। দুপুর ১২টা থেকে যে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে তা চলমান থাকবে।

তিনি বলেন, আগামীকাল রাতে উপকূলী এলাকায় আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় দানা। তবে সাতক্ষীরা এলাকায় কতটা আঘাত হানবে এটি এখন বলা সম্ভব হচ্ছে না।


বিজ্ঞাপন


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাতক্ষীরা জেলার উপকূলীয় শ্যামনগর উপজেলার উপকূলীয় এলাকার কৈখালী, গাবুরা, সোরা, লেবুবুনিয়া, নাপিতখালী, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী, রমজাননগরসহ বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

একইভাবে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের কুড়িকাউনিয়া, হরিষখালী, চাকলা, বিছট, দয়ারঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবন্থায় রয়েছে। বেশ কিছুদিন আগে কপোতাক্ষ নদের পানি কুড়িকাউনিয়া ও খোলপেটুয়া নদীর পানি হরিষখালী ও বিছট এলাকায় বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে প্রবশে করায় এসব নদ-নদীর তীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারি জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঘূর্ণিঝড় দানা আঘাত হানার শঙ্কায় ফের চিন্তিত হয়ে পড়েছে শ্যামনগর ও আশাশুনির ভাঙন কবলিত এসব এলাকার মানুষ।

thumbnail_20241023_124405

শ্যামনগর উপজেলার সাবেক প্রকৌশলী আফজাল হোসেন বলেন, উপকূলের মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবি টেঁকসই বেড়িবাঁধ। এলাকাবাসীর জোরালো দাবি সত্ত্বেও এখনও টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি। যার কারণে দুর্যোগ আসলেই আতঙ্কে বুক কাঁপে উপকূলবাসীর।

শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুর এলাকার নাসির উদ্দিন বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পান, ইয়াস ও রেমালের পর জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কারে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কাজ করেছে। তবে কিছু এলাকায় কাজ না করায় ফের ঘূর্ণিঝড় ডানার কারণে আতঙ্ক বেড়ে গেছে সেসব এলাকার মানুষের।

গাবুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিএম মাসুদুল আলম বলেন, চারপাশে কপোতাক্ষ নদ ও খোলপেটুয়া নদী দ্বারা বেষ্টিত তার ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের গাবুরা, নাপিতখালী, জেলেখালী, তিন নম্বর পোল্ডারসহ বিভিন্ন এলাকায় উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। সাগরে নিম্নচাপের প্রভাব হলে কপোতাক্ষ নদ ও খোলপেটুয়া নদীর জোয়ারের উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। জোয়ারের সময় বাঁধের কানায় কানায় পানি ওঠে। ইউনিয়নের কয়েকটি স্থানে বেড়িবাঁধের অবস্থা খুবই নাজুক ও ঝুঁকিপূর্ণ। তবে এখানে কপোতাক্ষ নদের তীরে বেড়িবাঁধে মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। যেটা শেষ হলে ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ উপকৃত হবে। তবে এখনও পর্যন্ত মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় ফের ঘূর্ণিঝড় আতঙ্কে তার ইউনিয়নের মানুষ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে।

আরও পড়ুন

ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলো গভীর নিম্নচাপ

তিনি দ্রুত গাবুরা ইউনিয়নের ঝুকিপূর্ণ এলাকাগুলো অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে মগা প্রকল্পের আওতায় এনে কাজ শুরু করার দাবি জানান।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুটি বিভাগের আওতাধীন জেলায় ৬৮৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ৯টি পয়েন্টের সাড়ে ৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দীন জানান, তার বিভাগের আওতাধীন ৩৮০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ৬টি পয়েন্টে আড়াই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। আপদকালীন কাজের আওতায় ঝুঁকিপূর্ণ এসব বেড়িবাঁধের মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া গোটা গাবুরা ইউনিয়নে প্রায় ২৯ কিলোমিটার উপকুল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য মেগা প্রকল্পের আওতায় ৪৮টি প্যাকেজ তৈরি করা হয়েছে। প্রায় অর্ধেক প্যাকেজের কাজ চলমান থাকলেও হরিশখালী ও দৃষ্টিনন্দনের ২৬ নম্বর প্যাকেজের কাজ করার জন্য অদ্যবধি কোনো ঠিকাদার পাওয়া যায়নি।

তিনি আরও বলেন, আপাতত নদী ভাঙনের তেমন কোনো সমস্যা না থাকলেও অতিরিক্ত জোয়ারের পানি যেন ছাপিয়ে বাঁধের ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য একাধিক টিম কাজ করছে। আর যেসব জায়গাতে বেড়িবাঁধের অবস্থা নাজুক সেখানেও সংস্কারের কাজ চলছে। এছাড়াও আমরা পর্যাপ্ত জিও ব্যাগ, জিও ফিল্টার, জি পলেস্টার মজুদ করে রেখেছি। যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে তৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।

thumbnail_20241023_125818

সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ মনিরুল ইসলাম জানান, তার বিভাগের আওতাধীন প্রায় সাতক্ষীরা জেলায় ৩০৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি পোল্ডারের ৩টি পয়েন্টে ২ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। সট টেন্ডারের মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে এসব ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া আগাম প্রস্তুতি হিসাবে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যাক জিও ব্যাগ, ফিল্টার ও জি পলেস্টার মজুদ রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের আগাত বার্তা পাওয়ার পর থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের ওপর নজর রাখা হয়েছে। আমাদের লোকজন তাদেও স্ব স্ব এলাকায় কাজ করছেন। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় তারা প্রস্তুত রয়েছেন।

প্রসঙ্গত, সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় সিডর, এরপর ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলা, ২০১৩ সালের ১৬ মে মহাসেন, ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই কোমেন, ২০১৬ সালের ২১ মে রোয়ানু, ২০১৭ সালের ৩০ মে মোরা, ২০১৯ সালের ৩ মে ফণী, ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর বুলবুল, ২০২০ সালের ২০ মে আম্পান, ২০২১ সালে ২৬ মে ইয়াস, ২০২২ সালের ১২ মে অশনি এবং ২০২৩ সালের ১৪ মে ‘মোখা’ আঘাত হানে।

সর্বশেষ সাতক্ষীরা উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। এটি ২০২৪ সালের ২৬ মে সন্ধ্যা থেকে ২৭ মে সকাল নাগাদ স্থলভাগ অতিক্রম করে। এসময় বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় খুলনার কয়রা, সাতক্ষীরার আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন। যার ক্ষত শুকায়নি এখনও।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর