সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ফকির লালন শাহ ছিলেন বৈষম্যবিরোধী: ফরিদা আখতার

জেলা প্রতিনিধি, কুষ্টিয়া
প্রকাশিত: ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:১০ এএম

শেয়ার করুন:

ফকির লালন শাহ ছিলেন বৈষম্যবিরোধী: ফরিদা আখতার

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, ‘ফকির লালন শাহ ছিলেন বৈষম্যবিরোধী। ১৩৪ বছর আগেই তিনি সকল বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলে গেছেন। জাত গেল জাত গেল বলে, এ কি আজব কারখানা গান গেয়েছেন। সব লোকে কই লালন কি জাত সংসারে গান গেয়েছেন।’ 

বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) রাতে বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১৩৪ তম তিরোধান দিবস উপলক্ষ্যে তিন দিনব্যাপী আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও গ্রামীণ মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউরিয়াতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।


বিজ্ঞাপন


ফরিদা আখতার বলেন, ফকির লালন সম্রাট ছিলেন না। তিনি ছিলেন সাধক। তাঁর বাণী সমাজের সকল ক্ষেত্রে বিদ্যমান। আমরা যদি লালনকে ভালবাসি বলি, তাহলে নারীর উপর অন্যায়, অত্যাচার, নির্যাতন করতে পারি না। কৃষিকাজে বিষ দিয়ে, নদীতে বিষ দিয়ে মাছ মারতে পারি না।’ 

উপদেষ্টা পরিষদ কাজে অবহেলা করলে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়ে ফরিদা আখতার বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি ঠিকঠাক কাজ করতে না পারে। আপনারা আমাদের ধরবেন। এই যে ছাত্র জনতার রক্তের উপর আমরা যে সরকার গঠন করেছি। দাঁয়িত্ব পেয়েছি। তা দায়সারা হতে পারে না।’

লালন একাডেমীর প্রতি লালন শাহের সকল বাণী সংরক্ষণ ও গবেষণার করারও দাবি জানান তিনি। সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগীতায় অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে জেলা প্রশাসন। অনুষ্ঠানে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক শারমিন আখতারের সভাপতিত্বে অন্য অতিথিরা বক্তব্য দেন। আলোচনা সভা শে‌ষে বাউল ও লালন একাডেমির শিল্পীরা সেখানে লালনের গান পরিবেশন করেন।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউরিয়ার বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের মাজার প্রাঙ্গনে গিয়ে দেখা যায়, কালী নদীর তীরে বিশাল মাঠে শতাধিক অস্থায়ী দোকান বসেছে। গান শোনার ফাঁকে সেখানে মানুষ কেনাকাটা করছেন। প্রবেশপথ, আখড়াবাড়ি (বারামখানা) ও মেলার মাঠ চত্বর কোথাও যেন তিল পরিমাণ জায়াগা ফাঁকা নেই। লালন সাধু-ভক্তদের পদচারণায় মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে।  এমন দৃশ্য দেখা যায়।


বিজ্ঞাপন


এর আগে গুরু শিষ্যের ভাব বিনিময় ও অধিবাসের মধ্যদিয়ে শুরু হয় ফকির লালন শাহের ১৩৪ তম তিরোধান দিবসের সাধুসঙ্গ। 

আজ শুক্রবার সকালে বাল্যসেবা ও দুপুরে পূর্ণ সভার মধ্যদিয়ে এ সাধুসঙ্গ শেষ হবে বলে জানান বয়োজ্যেষ্ঠ হৃদয় সাধু। তিনি বলেন, লালন শাহের প্রতি প্রেম-ভালবাসার টানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তবৃন্দ ছুটে এসেছেন। তাঁদের পদচারণায় মুখরিত আখবাড়ি মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। সাধু-ভক্তরা বলছেন, এ বছর উৎসব শুরুর সপ্তাহখানেক আগে থেকে প্রচুর মানুষ আসছে। শুরুর দিনে পা ফেলার জায়গা ফাঁকা নেই। মায়ার টানে, আত্মার টানে সাধু-ভক্তরা ছুটে আসছেন ধামে। আখড়াবাড়ি প্রাঙ্গণ বাদ্যযন্ত্র ও গানে গানে মুখর হয়ে উঠছে। লালন শাহের মাজারের সহকারী খাদেম রিপন শাহ বলেন, মানবতা ও অসাম্প্রদায়িকতার যে বাণী লালন সাঁইজি প্রচার করে গেছেন তাঁর জীবদ্দশার তা আজও ফাল্গুন ধারার মতো প্রবাহমান।

১২৯৭ বঙ্গা‌ব্দের প‌হেলা কার্তিক লালন সাঁই কুষ্টিয়ার কুমারখালীর চাপড়া ইউনিয়নের ছেঁউড়িয়া গ্রামে মৃত্যুবরণ করেন। এর পর থেকে আখড়াবাড়ি চত্বরে তাঁর ভক্ত-অনুসারীরা তাঁদের সাঁইজিকে স্মরণ করে আসছেন। লালন একাডেমি প্রতিবছর ছেঁউড়িয়ায় একাডেমি চত্বরে লালন স্মরণোৎসবের আয়োজন করে।

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর