ফিলিস্তিনে ইসরাইলি বর্বরতা ও ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র তুলে ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আঁকা হয়েছে একটি ‘ক্যালিগ্রাফি’। এর নাম দেয়া হয়েছে ‘তুফান’। এটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সব চেয়ে বড় ও ব্যয়বহুল ‘ক্যালিগ্রাফি’।
ইতোমধ্যে ক্যালিগ্রাফিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। অনেকেই ক্যালিগ্রাফিটি তাদের ফেসবুকে পেইজে প্রোফাইল পিকচার বানিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
গত ৫ আগষ্ট সরকার পতনের পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন ভবনের দেয়ালে ছবি আঁকেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা। এর মধ্যে একটি ক্যালিগ্রাফি বেশ সুনাম ও প্রশংসা অর্জন করে। যার নাম ছিলো “স্বাধীনতার সূর্যোদয়”। পরে বৃহত্তর পরিসরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর আধুনিক সুপার মার্কেটের দেয়ালে অঙ্কন করা হয় একটি আরবি শব্দের ক্যালিগ্রাফি। যেটি তখনকার জন্য ছিলো সবচেয়ে বড় ও ব্যায় বহুল। যেটি অঙ্কনে সহযোগীতা করেছিলো “ক্লিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া” নামক একটি সংগঠন।
চলতি মাসের (অক্টোবর) ১০ তারিখ অঙ্কন করা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সবচেয়ে বড় ক্যালিগ্রাফি ‘তুফান’। এটি অঙ্কন করতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ‘তুফান’ নামক এই ক্যালিগ্রাফিটি অঙ্কন করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফরিদপুর জেলার দুজন মাদরাসা ছাত্র। এদের নাম মোঃ ওমর ফারুক ও উসাইদ মুহাম্মদ।
ওমর ফারুকের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। সে জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদরাসার দাওরায় হাদিস বিভাগের ছাত্র। উসাইদ মুহাম্মদ ঢাকার লালবাগের একটি মাদরাসা থেকে তাকমিল ফিল হাদিস (মাস্টার্স) বিভাগ শেষ করে বর্তমানে এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে অধ্যয়ন করছেন।
ওমর ফারুকের বাবা মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন সরকার একজন পুলিশ পরিদর্শক এবং মাতা ফিরোজা বেগম একজন গৃহিনী।
বিজ্ঞাপন
উসাইদ মুহাম্মদ পরিবারের সাথে ঢাকার মোহাম্মদপুরে বসবাস করেন। বাবা হারুন অর রশীদ অটো মেকানিক, মা হালিমা বেগম গৃহিণী।
মোঃ ওমর ফারুক জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যখন শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন তখন থেকে নতুনভাবে দেশ স্বাধীনতা পায়। তখন থেকে সারাদেশেই দেয়ালে দেয়ালে চিত্রাঙ্কনের মাধ্যমে প্রতিবাদের চিত্র তুলে ধরা হয়। তেমনিভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শহরের বিভিন্ন দেয়ালে বেশ কয়েকটি ক্যালিগ্রাফি আঁকা হয়। তার চিত্রাঙ্কনের অন্যতম সাথী ছিলো ফরিদপুরের উসাইদ মুহাম্মদ।
ওমর ফারুক জানান, ‘তুফান’ ক্যালিগ্রাফিটি আঁকা হয়েছে শহরের শিমরাইলকান্দির পাওয়ার হাউজ এলাকায়। এটি আঁকা হয় মহান স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় বিধ্বস্ত পুরাতন পাওয়ার হাউজের একটি ভবনে। যুদ্ধের সময় ধ্বংস হওয়া এই ভবনটি দেখে ফিলিস্তিনের ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতির কথা মাথায় আসে। আর সেই বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই ওই ভবনে ফিলিস্তিনের বর্তমান পরিবেশ তুলে ধরার জন্য গত ৫ অক্টোবর ক্যালিগ্রাফির কাজ শুরু করি। বিশাল জরাজীর্ণ ভবনে ফিলিস্তিনের বিধ্বস্ততা ফুটিয়ে তুলতে হিমশিম খেতে হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৪/৫ ঘণ্টা কাজ করি। অঙ্কনের শেষ ২ দিন নির্ঘুম হয়ে কাজ করেতে হয়েছে। শেষ দুইদিন সকাল ৮ টা থেকে শুরু করে পরের দিন ভোর সকাল ৬টা অবদি কাজ করেছি। এভাবেই নিরলস পরিশ্রমের পর দীর্ঘ ৭ দিনে কাজটি সমাপ্ত করতে পেরেছি।
তিনি বলেন, ছবিটিতে লক্ষ করলে দেখবেন যে ফিলিস্তিনের যে বিষয়গুলো রয়েছে যেমন—আল আকসা মসজিদ, ইসরায়েলি হামলায় বিভিন্ন দালান-কোঠা ভেঙে বিধ্বস্ত হয়ে পড়া, ধোয়া উড়ছে। সেই ভবনের নিচে একজন সৈন্য হাতে ফিলিস্তিনের পতাকা নিয়ে ভবনের উপরে উঠছে।
চিত্রশিল্পী ওমর ও উসাইদের সহোদর সাঈদ সালমান জানান, চিত্রটি অঙ্কনের আগে ১ মাস বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে হয়েছে। এই ভবনটিতে আল আকসার পরিবেশ কিভাবে ফুটিয়ে তুলা যায় সেটি বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে আলোচনা করি। বিষয়টি এতো সহজ ছিলো না। এত বড় ভবনে এমন একটি অঙ্কনের খরচ ছিলো ব্যয় বহুল। এলাকার লোকজনের সহযোগীতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীকে এমন একটি ক্যালিগ্রাফি উপহার দিতে পেরেছি। এতে আমরা গর্ববোধ করছি।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী হোসেন রাশেদ সরকার বলেন, আল আকসা মসজিদের ছবিটি একটি চমৎকার দৃশ্য। ইতোমধ্যে ছবিটি নিয়ে সকলেই অনেক প্রশংসা করছেন। আর যারা ছবিটি এঁকেছেন তারা ‘স্বাধীনতার সূর্যোদয়’ নামের একটি প্রশংসিত ক্যালিগ্রাফিতি এঁকেছেন। ভাঙা একটি ভবনে এত সুন্দর চিত্র হতে পারে সেটি অনেকের জন্য শিক্ষণীয়। যারা এঁকেছেন আর যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের সকলকে জানাই অনেক অনেক ধন্যবাদ।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহবায়ক অ্যাডভোকেট আবদুন নুর বলেন, ছাত্র-জনতা নতুন একটি বিজয় এনেছে বলে মনে করি। আর সেই বিজয়ে নতুন সূর্যোদয় হবে সেটা সকলেরই আশা।
মো. ওমর ফারুক ও উসাইদ মুহাম্মদ ‘তুফান’ নামে যে ক্যালিগ্রাফিটি অংকন করেছেন তা প্রশংসার দাবিদার।
প্রতিনিধি/একেবি

