শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

থমকে গেছে গাড়ি বিক্রি, আমদানিও তলানিতে!

এম আই খলিল, চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:১৬ পিএম

শেয়ার করুন:

থমকে গেছে গাড়ি বিক্রি, আমদানিও তলানিতে!

শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর দেশের বাজারে থমকে গেছে গাড়ির ব্যবসা। একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে বিলাস বহুল গাড়ি বিক্রি। ফলে তলানিতে গাড়ি আমদানিও। শুক্রবার (১১ অক্টোবর) এ তথ্য জানান চট্টগ্রামসহ দেশের গাড়ি আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে— জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু থেকে গাড়ির ব্যবসায় ধস নামে। ফলে গাড়ি বিক্রির শোরুমগুলো সেই যে বন্ধ হয়েছে, তার অধিকাংশই আর খোলা হয়নি। 

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের গাড়ি ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান বলেন, আন্দোলনের পর তার শোরুমে একটি গাড়িও বিক্রি হয়নি। এতে প্রায় কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। চলমান অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে ব্যবসায়িক কার্যক্রমে ধীরগতি আসায় বিলাসবহুল পণ্যের পেছনে অনেকে এতো টাকা খরচ করার অবস্থায় নেই। 


বিজ্ঞাপন


অন্য আরেক গাড়ি ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, গত জুলাই থেকে বিলাসবহুল গাড়ির বিক্রি অনেক কমেছে দেশে। কারন রাজনৈতিক পালাবদলে অর্থনীতি নিয়ে মানুষ শঙ্কিত। রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত দামি গাড়ির ক্রেতা হয়ত পাওয়া যাবে না।    
 
একই কথা বলেছেন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোটার্স অ্যান্ড ডিলারস এসোসিয়েশনের (বারভিডা) সভাপতি হাবিব উল্লাহ ডন। তিনি বলেন, বাজারে একেবারেই কমে গেছে গাড়ি বিক্রি। যার প্রভাব পড়েছে আমদানিতেও। ফলে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে একেবারেই কমে গেছে বিলাস বহুল গাড়ির আমদানি। একই অবস্থা মোংলা বন্দরেরও। 

বারভিডার তথ্যমতে— চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২০২৩ সালে আগের বছরের তুলনায় গাড়ি আমদানি কমে গেছে প্রায় ২২ শতাংশ। আর ৫ বছরের ব্যবধানে দেশের গাড়ি আমদানি কমেছে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ। ৫ বছর আগে ২০১৯ সালে সব ধরনের কার আমদানি হয়েছিল ৬১ হাজার ৪৬৭টি। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে কার আমদানি কমে ৬০.৭০ শতাংশ।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২০২৩ সালে সবধরনের কার আমদানি হয়েছে ২৪ হাজার ১৫০টি। ২০২২ সালে গাড়ি আমদানির পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৮৮০টি। অর্থাৎ ২০২৩ সালে ২০২২ সালের তুলনায় গাড়ি আমদানি কম হয়েছে ৬ হাজার ৭৩০টি বা ২১.৭৯ শতাংশ।

ব্যবসায়ীরা জানান, বাংলাদেশে দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছরের স্বৈরাচারী শাসনের অবসানের পর বিলাসবহুল সেডান ও ইম্পোটার্স ইউটিলিটি ভেহিকেল কেনাবেচা কমে নেমেছে প্রায় ৯৫ শতাংশে। টয়োটার ল্যান্ড ক্রুজার, পাজেরো ও হ্যারিয়ার সিরিজের গাড়িও বিক্রি নেই। যদিও ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রতি মাসে ৮০০-র মতো গাড়ি কেনাবেচার রেকর্ড ছিল দেশে। 


বিজ্ঞাপন


গাড়ির ব্যবসা থমকে যাওয়ার রেকর্ড মিলে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) এক পরিসংখ্যানেও। এতে দেখা গেছে, চলতি বছরের শুরু থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসে প্রায় ৭৩৪টি এসইউভি নিবন্ধিত হয়েছে সারাদেশে। যার মধ্যে সাধারণ গাড়ি হিসেবে সেডান গাড়ি গণ্য করায় অন্যান্য দামি গাড়ির নিবন্ধনের বিষয়ে আলাদা পরিসংখ্যান নেই। এছাড়াও নতুন গাড়ি নিবন্ধনে দেরি করা ব্যক্তিরা এসব পরিসংখ্যানে বাদ পড়েন।

এর আগে করোনা মহামারির সময় থমকে যায় বৈশ্বিক বাণিজ্য। ব্যবসায়ীরা তখন কোনো কূল-কিনারাই করতে পারেননি। ওই সময়ে নিত্যপণ্যের ব্যবসায়ীরা কিছুটা ব্যবসা করতে পারলেও গাড়ি ও লাক্সারি গাড়ির বিক্রি ছিল শূন্যের কোঠায়। এরপর দেশের বাজারে গাড়ির ব্যবসা কিছুটা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর আবারও কমতে থাকে গাড়ির ব্যবসা। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর একেবারে থমকে গেছে গাড়ির ব্যবসা।  

চট্টগ্রাম মহানগরের আগ্রাবাদ চৌমুহনী এলাকায় রমনা কার শোরুমের স্বত্ত্বাধিকারী মোহাম্মদ সাদেক বলেন, আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেশি হওয়ায় দামি গাড়ির দাম আরও বেড়েছে। ফলে গত দুই মাসে এসব গাড়ির দাম ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা বেড়ে গেছে। এতে গাড়ি বিক্রি থমকে গেছে। 

তবে সুখবর যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিন দিন ভালো হচ্ছে। ডলারের দামও কিছুটা কমেছে। এতে আগামীতে ক্রেতারা শোরুমে আসতে হয়তো স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন। এক্ষেত্রে দেশের অর্থনীতি দ্রুত পুনরুদ্ধারের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন মোহাম্মদ সাদেক।

নগরীর মুরাদপুর এলাকায় গাড়ির ব্যবসা করেন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। একসময় তার শোরুমে বিলাসবহুল গাড়িসহ হাইয়েস, ওয়াগন, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন গাড়িতে ভরপুর থাকত। কিন্তু বর্তমানে তার শোরুম অনেকটাই ফাঁকা। 

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শতভাগ মার্জিনে গাড়ি আমদানি সম্ভব হচ্ছে না। এলসিই খুলতে পারছি না। এ ছাড়া গাড়ির দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতাও নেই। একসময় বিদেশি গাড়ি, বিশেষ করে জাপানি গাড়ির বেশ চাহিদা ছিল। এখন সেটিও কমে গেছে। এ ছাড়া গাড়ির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্রেতা কমেছে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশের ৬০ শতাংশ গাড়ি আমদানি করা হয় মোংলা বন্দর দিয়ে। বাকি ৪০ শতাংশ হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। আমদানি হওয়া গাড়ির প্রায় ৭৫ শতাংশই রিকন্ডিশনড বা পুরাতন গাড়ি। ১ থেকে ৫ বছরের পুরনো এসব গাড়ি আমদানি খাতে বিনিয়োগ প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। এ খাত থেকে বছরে কাস্টমসের শুল্ক বাবদ আয় হয় প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। আমদানির বাকি ২৫ শতাংশ গাড়িগুলো ‘ব্র্যান্ড নিউ’। 

প্রতিনিধি/এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর