চট্টগ্রাম নগরে একটি পূজামণ্ডপের অনুষ্ঠান মঞ্চে ইসলামি সংগীত পরিবেশনের ঘটনায় চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির ৬ সদস্যসহ সাতজনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। শুক্রবার (১১ অক্টোবর) চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদ্যাপন কমিটির অর্থ সম্পাদক সুকান্ত বিকাশ মহাজন বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির সদস্য শহীদুল করিম, নুরুল ইসলাম, আবদুল্লাহ ইকবাল, মো. রনি, গোলাম মোস্তফা ও মো. মামুন গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে নগরের রহমতগঞ্জের জেএম সেন হলে দুর্গাপূজার অনুষ্ঠান মঞ্চে উঠে গান করেন। মামলায় এই ছয়জনের সঙ্গে তাদের অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ করা চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদ্যাপন কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্তকেও (ঘটনার পর বহিষ্কৃত) আসামি করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
তাদের মধ্যে দুজনকে রাতে নগরের পৃথক স্থান থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা হলেন— তানজিমুল উম্মাহ মাদরাসার শিক্ষক শহীদুল করিম এবং দারুল ইরফান একাডেমির শিক্ষক নুরুল ইসলাম।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে জেএম সেন হল প্রাঙ্গণে মহানগর পূজা উদ্যাপন কমিটি স্থানীয় বিভিন্ন শিল্পীগোষ্ঠীর মাধ্যমে সন্ধ্যার পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকজন পূজামণ্ডপে আসতে শুরু করেন এবং অনুষ্ঠান উপভোগ করতে থাকেন। ইতিপূর্বে পূজা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্ত (ঘটনার পর বহিষ্কৃত) চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির একদল শিল্পীকে অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করার কথা বলেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার দিন (গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়) চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির একদল শিল্পী অনুষ্ঠানে আসেন এবং দুটি গান পরিবেশন করেন। এর মধ্যে একটি গানের ভাষার শব্দচয়নে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত আনার মতো মনে হওয়ায় পূজা উদ্যাপন কমিটি তাৎক্ষণিক গান বন্ধ করতে গিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা চিন্তা করে বন্ধ করেনি। ইতিমধ্যে পরিবেশন করা একটি গান (গজল) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্নভাবে বিভিন্নজনের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া আসতে থাকে। বর্তমানে ওই গজলকে ঘিরে চট্টগ্রামের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে চাপা উত্তেজনা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। আসামিরা একই উদ্দেশ্যে প্রতিহিংসাবশত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও অনূভূতিকে অবমাননা করে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে গোলমাল সৃষ্টি করতে বিদ্বেষমূলক শব্দচয়ন করে গজলটি পরিবেশন করে। যার ফলে সারা দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিবে চট্টগ্রাম মহানগরের রহমতগঞ্জে জেএমসেন হল পূজামণ্ডপপে ইসলামি সংগীত পরিবেশনের ঘটনায় পূজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি লায়ন আশীষ ভট্টাচার্য ও সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের দফতর সম্পাদক শচীন্দ্র নাখ বাড়ৈই স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। একই ঘটনায় চট্টগ্রাম মহানগরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজল দত্তকে পরিষদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, পূজা উদযাপন পরিষদ গত ১০ অক্টোবর আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। এই অবাঞ্ছিত ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ অত্যন্ত ব্যথিত হয়েছেন। পূজা উদযাপন পরিষদ এ ঘটনা বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছে।
বিজ্ঞাপন
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে জেএমসেন হল পূজামণ্ডপপে দুটি ইসলামি সংগীত পরিবেশন করে চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি নামে একটি সংগঠনের ৬ শিল্পী। এ সংক্রান্ত একটি গানের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জনমনে চরম প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। পরবর্তী সময়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে গান পরিবেশনকারী দুই শিল্পীকে গ্রেফতার করে।
শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ-কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) রইছ উদ্দি বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে প্রতিদিনের ন্যায় জেএমসেন হল পূজামণ্ডপপে শিল্পীদের মাধ্যমে সন্ধ্যার পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকজন পূজামণ্ডপপে আসেন এবং অনুষ্ঠান উপভোগ করতে থাকেন।
পূজা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজল দত্ত চট্টগ্রাম কালচারাল অ্যাকাডেমির একদল শিল্পীকে অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করার জন্য অনুরোধ করেন। তার অনুরোধের প্রেক্ষিতে ঘটনার সময় ওই সংগঠজের সদস্য শহীদুল করিম, মো. নুরুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ ইকবাল, রনি, গোলাম মোস্তফা ও মো. মামুন পূজার অনুষ্ঠানে আসেন এবং দুটি ইসলামি সংগীত পরিবেশ করেন।
এর মধ্যে একটি গানের ভাষায় শব্দ চয়ন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। গানটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ঘটনাস্থলে উপস্থিত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়াসহ উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে অভিযান চালিয়ে দু‘জনকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত বাকিদের আটকের চেষ্টা চলছে। গ্রেফতার দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপ-কমিশনার রইছ উদ্দিন বলেন, এই দলকে আমন্ত্রণ জানানো পূজা উদযাপন কমিটির নেতা সজল দত্তকেও খোঁজা হচ্ছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
ঘটনার বিষয়ে চট্টগ্রাম কালচারাল অ্যাকাডেমির সভাপতি সেলিম জামান জানিয়েছেন, মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজল দত্তের আমন্ত্রণে সেখানে গান দুটি পরিবেশন করা করেছে শিল্পীরা। এগুলো সম্প্রীতির সংগীত। এরমধ্যে একটি হচ্ছে আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম.... এবং শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম...। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতেই সজল দত্তকে দায়িত্ব থেকে বরখাস্তের ঘোষণা দেন চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি লায়ন আশীষ কুমার ভট্টাচার্য।
প্রতিনিধি/এইউ