খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কেসিসির সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক, খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাবেক শেখ হারুনুর রশীদ ও খুলনা জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম মাহাবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা হয়েছে।
রোববার (৬ অক্টোবর) দুপুরে অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আনিচুর রহমানের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন ডাকবাংলা মোড়ের ব্যবসায়ী শেখ মেরাজ হোসেন।
বিজ্ঞাপন
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. বাবুল হাওলাদার বলেন, আদালতে মামলা দয়েরের পর আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে শুনানি শেষে ডেপুটি কমিশনার সিআইডি খুলনাকে সরাসরি তদন্তের নির্দেশ নিয়েছেন এবং মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন চলতি বছরের ৮ ডিসেম্বর। আসামিদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ঘুষ, প্রতারণা, জীবননাশের হুমকির মামলাটি দায়ের করেছেন ব্যবসায়ী শেখ মেরাজ হোসেন। মামলায় তিনজন আসামি। ১ নম্বর আসামি হলেন- খুলনা জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম মাহাবুবুর রহমান, ২ নম্বর জেলা পরিষদদের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ ও ৩ নম্বর কেসিসির সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক।
মামলার এজাহারের বরাদ দিয়ে বাদী মেরাজ হোসেন বলেন, আমার বাবা শেখ মো. আবুল হোসেন জেলা পরিষদ থেকে আনুমানিক ২৮ বছর আগে ডাকবাংলো মোড়স্থ জেলা পরিষদের মার্কেটের নিজ তলায় অফিস ঘর যথানিয়মে লিজ নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করে আসছিলেন। তার বয়স এবং অসুস্থতার কারণে আমি বড় সন্তান হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা শুরু করি। আমার বাবা ২০১৮ সালের ২৩ এপ্রিল আইনের বিধান মোতাবেক আমার অনুকূলে লিখিতভাবে আমাকে দায়িত্ব দেন। খুলনা সিটি কর্পোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করে উক্ত প্লট তথা স্থাপনায় বিদ্যুৎ সংযোগ গ্রহণ করে যাবতীয় আইন-কানুন মেনে ‘এ হোসেন এন্টারপ্রাইজ’ নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রায় এক কোটি টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করে ২ জন কর্মচারী নিয়োগ করি। আসামি মাহাবুবুর রহমান আমার বাবাকে ২০২৩ সালের ২০ জুন জেলা পরিষদের কার্যালয়ে ডেকে দাফতারিক কাজে প্রয়োজনের কথা বলে তপশিল বর্ণিত বন্দোবস্তকৃত জমির মূল কাগজপত্র তার কাছে জমা দিতে বলেন। আমার বাবা আমাকে সঙ্গে নিয়ে ২৯ জুন জেলা পরিষদের কার্যালয়ে গিয়ে তপশিল বর্ণিত সম্পত্তির যাবতীয় মূল কাগজপত্র হস্তান্তর করেন।
পরবর্তীতে ২ নম্বর আসামি জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যানের সঙ্গে পরস্পর যোগসাজসে এবং ২ নম্বর আসামির প্রত্যক্ষ মদদে ১ নম্বর আসামি প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে আমার বাবার হস্তান্তরকৃত মূল কাগজপত্র ফেরত প্রদান করতে বিভিন্ন প্রকার তালবাহানা করেন। আমার বাবা আমাকে নিয়ে একাধিকবার ২ নম্বর আসামির সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সমাধান হয়নি, বলেন মেরাজ হোসেন।
তিনি আরও বলেন, এরপর ওই বছর ১২ জুলাই ১ নম্বর আসামি ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন এবং বলেন অন্যথায় কাগজপত্র ফেরত দেওয়া হবে না। ওই সম্পতি জেলা পরিষদ থেকে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের অধীন হস্তান্তর হওয়ার কারণে উক্ত সম্পত্তির মালিক এখন খুলনা সিটি কর্পোরেশ হওয়ায় ৩ নম্বর আসামি সাবেক কেসিসি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেককেও ১০ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হবে। টাকা না দিয়ে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে আমাকে এবং আমার সঙ্গের লোকদের জীবনের মায়া ত্যাগ করতে হবে। পরে আমরা ভীত হয়ে ১ নম্বর আসামির কাছে অনুনয়-বিনয় করলে ১ নম্বর আসামি রিভলবার প্রদর্শন করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে বলেন এবং ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দিতে বলেন। এ বিষয়ে আমি ৩ নম্বর আসামির সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমার সঙ্গে কোনো কথা বলবেন না বলে জানান।
বিজ্ঞাপন
ওই চাঁদা এবং ঘুষের দাবি পূরণ না করায় ১ নম্বর আসামি আমার কাগজপত্র এখনো ফেরত দেননি এবং ২০২৩ সালের ২১ জুলাই রাত ১০ দিকে তার লোক দিয়ে হাতুড়ি-শাবল, ছানিসহ দেশীয় বিভিন্ন প্রকার অস্ত্র ও যন্ত্রপাতি দিয়ে তপশিল বর্ণিত সম্পত্তিতে থাকা দোকান ভেঙে দেন। এতে দোকানে থাকা ৫৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। এরূপ কর্মকাণ্ডে আমাদের রাস্তায় বসে পরার অবস্থা হয়েছে, যোগ করেন মেরাজ হোসেন।
প্রতিনিধি/ এজে