সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও তার ভাই টিপু সারাদেশের মতো চাঁদপুরেও টাকার বিনিময়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগে থেকেই নিয়োগের পর বেকায়দায় পড়েছেন চাঁদপুর সদরের ফরক্কাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইলিয়াছ। তিনি এক বছরের অধিক সময় নিয়োগ পেলেও এমপিও স্থানান্তর করতে পারেননি। নিয়োগকালীন সময়ে বিদ্যালয়ের তৎকালীন কমিটির সভাপতি এম আর শামীম ছিলেন অবৈধ সভাপতি, এমন অভিযোগ এনে উচ্চ আদালতে মামলা করেন অভিভাবক সদস্য প্রার্থী মো. হাসান খান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এম আর শামীম ছিলেন দীপু মনির খুবই ঘনিষ্ঠ। যে কারণে দুইবার সভাপতি মনোনীত হন শামীম। তবে তাকে সভাপতি হিসেবে মেনে নিতে পারিনি কমিটির কেউ কেউ। পরেরবার সভাপতি হয়ে মো. ইলিয়াছকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। মামলাসহ বিভিন্ন কারণে প্রধান শিক্ষক ইলিয়াছ বহু চেষ্টা-তদবির করেও তার এমপিও স্থানান্তর করতে পারেনি। তিনি শিক্ষা অফিস ম্যানেজ করে তার কাগজপত্র কুমিল্লা আঞ্চলিক অফিসে প্রেরণ করেন।
বিজ্ঞাপন
আরও জানা গেছে, অভিভাবক সদস্যের মামলার কারণে এই বিদ্যালয়ের কমিটির যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিত করে উচ্চ আদালত। ফলে মাউশির নিয়মানুসারে মামলা চলাকালীন সময়ে কোনো শিক্ষক অথবা কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া যাবে না। আর এই পরিস্থিতির শিকার হন প্রধান শিক্ষক ইলিয়াছ।
এদিকে সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর থেকে বিদ্যালয়ে যেতে পারেননি প্রধান শিক্ষক ইলিয়াছ। গত ৬ আগস্ট থেকে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তালা দেয় বহিরাগত লোকজন। এমন তথ্য জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক ও কমিটির সদস্য দ্বিনেশ। তিনি বলেন, আমি গত দুই বছর বিদ্যালয়ের ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পালন করছি। বিদ্যালয়ের ফান্ডে টাকা না থাকায় শিক্ষকরা গত ১২ মাস কোনো সম্মানী নিতে পারেননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক বলেন, প্রধান শিক্ষক ইলিয়াছ ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে প্রধান শিক্ষক হয়েছেন। টাকার এই সুবিধা গ্রহণ করেছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির ভাই টিপুসহ সভাপতি এমআর শামীম। এসব কারণে বিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে, মামলা হয়েছে। মামলা চলমান অবস্থায় প্রধান শিক্ষক তার এমপিও স্থানান্তর করতে পারেননি।
প্রধান শিক্ষক ইলিয়াছের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, তিনি বিদ্যালয়ের আয়ের উৎস থেকে লাখ লাখ টাকা ভাউচারের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন। কিন্তু শিক্ষকদের সম্মানী দিতে পারেননি।
বিজ্ঞাপন
এসব বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মো. ইলিয়াছ মিয়া বলেন, যারাই আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করুক না কেন এসব অভিযোগ সত্য না। তারা মিথ্যা অভিযোগ করেছে। আমি নিয়মের বাহিরে কোনো কাজ করিনি। আমার সব কাজের তথ্যপ্রমাণ আছে।
প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়ে সাবেক সভাপতি এম আর শামীম বলেন, আমি দুইবার সভাপতি ছিলাম। আমার সাথে দীপু মনি ও তার ভাইয়ের সাথে সু-সম্পর্ক ছিল। কিন্তু কোনো টাকা লেনদেন হয়নি। প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হয় ২০২৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর। নিয়োগে আমি যদি কোনো টাকা নিয়ে থাকি তাহলে প্রমাণ করুক। প্রমাণিত হলে আমার যা শাস্তি হয় হবে।
চাঁদপুর জেলা শিক্ষা অফিসার প্রাণ কৃষ্ণ দেবনাথ বলেন, এই বিদ্যালয়ের বিষয়ে অনেক অভিযোগ। প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পর তার এমপিও করতে দেরি হচ্ছে। কারণ, মামলা আছে। প্রধান শিক্ষকের কাগজপত্র সঠিক থাকলে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠাতে বাধ্য। আমাদের বিষয়ে কেউ ভুল তথ্য দিতে পারে। কিন্তু কাজের জায়গায় আমরা পুরোপুরি স্বচ্ছ। আজকেও ওই বিদ্যালয় থেকে আমার কাছে অভিযোগ এসেছে।
প্রতিনিধি/এমএইচটি