টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে করে অন্তত ৭০টি গ্রামের রাস্তা-ঘাট, বসতভিটা, দোকানপাটসহ লোকালয় ডুবে গেছে। যার কারণে প্রায় ১৬ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
সর্বশেষ গতকাল বিকাল পর্যন্ত মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর পানি বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরামে নদী রক্ষা বাঁধের ভাঙ্গনে ৩ বার বন্যায় বহু ক্ষয়ক্ষতির কবলে পড়েছে স্থানীয়রা। বন্যার পানির তোড়ে এক সাইকেল আরোহী পানিতে ভেসে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরামে সড়ক যাতায়াত বন্ধ রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরামে ১ জুলাই রাতে নদী রক্ষা বাঁধের ভাঙ্গনে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এর পরই ৩ আগস্ট পুনরায় বন্যায় ৪৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে ২৮ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। এতে করে সাধারণ মানুষের দূর্ভোগ প্রকট আকার ধারণ করে। সর্বশেষ টানা বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলের চাপে মঙ্গলবার ( ২০ আগস্ট) পূনরায় লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে সবকিছু তলিয়ে দেয়। এতে করে প্রায় ১৬ হাজার পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়ে।
স্থানীয়রা জানান, জুলাই ও আগস্ট মাসের শুরু দিকে ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধ মেরামত শেষ হওয়ার আগেই ফের বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পূর্বের ভাঙ্গা অবস্থায় থাকা ১২টি স্থানে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে থাকে। এছাড়াও বহুস্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেসে পানি ঢুকতে থাকে। এতে করে হাট বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাড়ি ঘর, মাছের খামারসহ রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে যায়।
পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা হাবিব জানান, পরশুরাম উপজেলায় বন্যায় আগেই বেড়িবাঁধের ১২টি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছিল। গত কয়েকদিনের অতিবৃষ্টি এবং ভাঙনের স্থান দিয়ে উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে পরশুরাম উপজেলায় পৌরসভা এবং তিনটি ইউনিয়নের প্রায় ৪০টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
অপরদিকে ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া ভূঁইয়া জানান, মুহুরী, সিলোনিয়া, কহুয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ফুলগাজী উপজেলার ফুলগাজী ইউনিয়নের, মুন্সিরহাট ইউনিয়নের, আমজাদহাট ইউনিয়নের ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা ৬ হাজার।
এদিকে বন্যা দুর্গতদের মাঝে ফেনী ১ আসনে বিএনপি'র নির্বাচন সমন্বয়ক ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন।
বিজ্ঞাপন
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, দুই মাসে ৩ বার ফুলগাজী ও পরশুরামে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। এতে করে মুহুরী কহুয়া ও সিলোনীয়া নদী রক্ষা বাঁধ ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত নদীর পানি বিপদ সীমার ৫৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টি না কমলে আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি জনদূর্ভোগ বাড়বে।
ফেনী জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার জানান, বন্যা পরিস্থিতির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন।
প্রতিনিধি/একেবি

