কমর উদ্দিন বগুড়া পৌরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের চক আকাশ তারা গ্রামের মৃত কছির উদ্দিনের ছেলে।গত ৪ আগস্ট রোববার দুপুরে বগুড়া শহরের নবাববাড়ি সড়কে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। এরপর তিনি মারা যান। এ বিষয়ে তার মা আক্ষেপ করে জানান, কবুতরের গোস্ত দিয়ে ভাত খাবার কথা ছিল ছেলের। কিন্তু, সে আর ফিরে আসেনি।
সোমবার (১৯ আগস্ট) কমর উদ্দিনের বাড়িতে গেলে তার মা জমেলা বেগম ছেলের ছবি হাতে ধরে আহাজারি করতে থাকেন। এ সময় ছেলেকে নিয়ে বিভিন্ন স্মৃতি ও স্বপ্নের কথা বলেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: নিহত কলেজছাত্র বিশালের পরিবারকে ৩ লাখ টাকা সহায়তা দিলো বিজিবি
ছেলে নিহত হওয়ার ঘটনার দিনের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ''সকালে ছোল হামাক কবুতরের গোস্ত দিয়ে ভাত রানবার কয়ে গেলো,সেই ছোল লাশ হয়ে বাড়িত আসলো। হামি কেনকা করে মনত বুজ দিমো। পাখি হামাক থুয়ে কুন্টি গেলো,পুলিশ হামার পাখিক গুলি করলো কিসক।''
৪ আগস্ট সকালে কবুতর জবাই করে মা জমেলা বেগমকে রান্না করতে বলে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দিতে বাড়ি থেকে বের হন রিকশাচালক কমর উদ্দিন (৪২)। দুপুরে বাড়িতে ফিরে ভাত খাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলেও বাড়িতে আসে না কমর উদ্দিন। রান্না করা কবুতরের গোস্ত দিয়ে ভাত পরিবারের সবাই খেলেও মা জমেলা বেগম ছেলের অপেক্ষায় বসে থাকেন। একপর্যায়ে মোবাইল ফোন বন্ধ পেয়ে চিন্তায় পড়ে যান পরিবারের সবাই। রাত সাড়ে ৮টায় গ্রামের একজন খবর দেন পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন কমর উদ্দিন। তার লাশ বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আছে।
বিজ্ঞাপন
জমেলা বেগম বলেন, ছোট ছেলে কমর উদ্দিন রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন। বাড়ির সাড়ে তিন শতাংশ জমি ছাড়া তার আর কোনো সম্পদ নেই। সাত মাসের গর্ভবতী স্ত্রী, মা, দুই ছেলে তৌহিদ (৬) ও আব্দুল্লাহকে (২) নিয়ে কমর উদ্দিনের সংসার। মা জমেলা বেগম হোটেলে কাজ করলেও বয়সের ভারে এখন আর কাজ করতে পারেন না। রিকশা চালিয়েই পাঁচজনের সংসার চালাতেন কমর উদ্দিন।
তিনি বলেন, গত ৪ আগস্ট সকাল ১০টায় মাথায় লাল কাপড় বেঁধে লাঠি হাতে ছাত্রদের আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হন কমর উদ্দিন। দুপুরে বাড়ি ফিরে ভাত খাওয়ার কথা ছিল। আগের দিন শনিবারও (৩ আগস্ট) সকালে আন্দোলনে গিয়ে দুপুরে বাড়ি ফেরেন কমর উদ্দিন। ভাত খেয়ে আবারও আন্দোলনে যোগ দিতে যান। রোববার সকালে আন্দোলনে গিয়ে ফেরেন লাশ হয়ে।
কমর উদ্দিনের মা বলেন, হাসপাতাল থেকে ৫ আগস্ট সকালে লাশ নিয়ে আসা হয়। জানাজা শেষে গ্রামেই দাফন করা হয়।
কমর উদ্দিন মারা যাওয়ার খবর পেয়ে বিএনপির সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু তার বাড়িতে গিয়ে সমবেদনা জানান এবং নগদ ১০ হাজার টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেন। এছাড়াও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিএনপি নেতা রুস্তম আলী পাঁচ হাজার, জামায়াত ইসলামীর পক্ষ থেকে পাঁচ হাজার টাকা এবং স্থানীয় বিএনপি নেতা হোসেন একটি ছাগল দিয়ে সহযোগিতা করেছেন বলে জানান জমেলা বেগম।
তিনি বলেন, মানুষের দেওয়া টাকায় আর কত দিন চলবে? ছেলের বউ সাত মাসের গর্ভবতী, রক্তশূন্যতায় ভুগছেন। হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার জরুরিভাবে শরীরে রক্ত দিতে বলেছেন। তার আরও দু’টি শিশু সন্তান রয়েছে। তাদের মুখে ভাত তুলে দিব কীভাবে? তাছাড়া বয়সের কারণে এখন আর হোটেলেও কাজ করতে পারি না।
প্রতিনিধি/ এমইউ