‘স্বাধীনতা এনেছি সংস্কারও আনবো’, ‘দূর্নীতি ঠেকাতে আওয়াজ তুলুন’, ‘ভয়ের দেওয়াল ভাঙলো; এবার জোয়ার এলো ছাত্র জনতা’, ধর্ম যার যার; বাংলাদেশ সবার’ নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে ফেনী শহরের দেয়ালে দেয়ালে এসব কথা গুলো লিখছে প্রজন্মের শত সাহসী তরুণ-তরুণীরা।
ছাত্র-জনতার অন্দোলনের মুখে পতনের পর দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার পতনের পর সারাদেশের ন্যায় ফেনীতেও ছাত্র-জনতার মাঝে স্বস্তি ফিরে আসে। এরপর থেকে ফেনীর বিভিন্ন স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, রাস্তা-ঘাট, সরকারি স্থাপনা, মসজিদ ও মন্দির পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন দায়িত্বে নিজেদেরকে নিয়োজিত করেছিল।
বিজ্ঞাপন
এছাড়াও গতকাল ফেনীর মিজান রোড, ফেনী কলেজ, আলিয়া মাদরাসা প্রাঙ্গন, পৌর শহরের বিভিন্ন দেয়ালে বিপ্লবের স্মৃতি ধারন করতে দেশ সংস্কারে ঘুষ-দূর্নীতি বন্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী, সন্ত্রাসবিরোধী, আন্দোলনে শহীদদের স্মৃতি সংবলিত বিভিন্ন স্লোগানের অগ্নিময় উক্তি দিয়ে গ্রাফিতি এঁকেছে।

শিক্ষার্থীরা জানায়, ২৪ এর স্বৈরাচার থেকে মুক্ত হওয়া স্বাধীনতাকে স্মরণীয় রাখতে এ উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। বিভিন্ন দেওয়াল পরিষ্কার করে শহরের বিভিন্ন স্থানে আরবি ক্যালিওগ্রাফিও অংকন করা হচ্ছে। এতে করে একদিকে শহর পরিষ্কার হচ্ছে; অন্যদিকে শহরের সৌন্দয্যও বৃদ্ধি হচ্ছে।
শহরের শান্তি চত্ত¡রের আশপাশের দেওয়ালগুলো পরিষ্কার করে ফেনী ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মারুফের নেতৃত্বে আলী ইবনে হাসান পাবেল, আরফিন, নোহাসহ অন্যান্য শিল্পীরা। তারা জানায়, শহীদদের স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখাতে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে শহরের দেয়ালগুলোকে আমরা সাজাচ্ছি। দেয়ালগুলোতে সাধারণের চোখ পড়লে যেন তারা ২৪ এর স্বাধীনতাকে মনে করতে পারে। স্মরনীয় করে রাখতে পারে।
বিজ্ঞাপন
ফেনী আলিয়ার সামনে মাহবুবর রহমান’র নেতৃত্বে মাদরাসার শিক্ষার্থীদেরকে ক্যালিওগ্রাফি আঁকতে দেখা যায়। ক্যালিওগ্রাফি শিল্পীরা জানায়, ছাত্র জনতার এ আন্দোলনে অনেক শিক্ষার্থী শহিদ হয়েছে। দেয়ালের এ লেখাগুলো সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। তারা ২৪ এর শহিদের কথা স্মরণ করে দোয়া করবে।
এছাড়াও ফেনী ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের শিক্ষার্থী প্রমিলার নেতৃত্বে এক ঝাঁক শিক্ষার্থী মাস্টার পাড়ার প্রবেশ মুখে গ্রাফিতি অংকন করেছেন। কেন দেওয়াল লিখন জানতে চাইলে প্রমিলা বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তোপের মুখে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়। পুলিশসহ বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম দূর্ণীতি ও বিভিন্ন দপ্তরের সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা এখনো মাঠে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। সর্বস্তরের মানুষকে দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে আমরা দেয়ালে দেয়ালে চিত্রাংকনের মাধ্যমে সচেতনতামূল প্রচারণা করতে চাই।

সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক ফেনী জেলার সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন বলেন, তরুণ শিক্ষার্থীরা জেগে উঠলে সবকিছুতেই পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগে। ফেনী শহরে শিক্ষার্থীদের রঙ্গের তুলিতে আঁকা গ্রাফিতি একদিকে আমাদেরকে নানাভাবে অনুপ্রাণিত করবে; অন্যদিকে এর মাধ্যমে শহরের দেয়ালগুলো দৃষ্টিনন্দনের পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নও থাকবে। এখন সবার দায়িত্ব তাদেরকে প্রেরণা দিয়ে এগিয়ে দেয়া। আমরা বিশ্বাস করি; এ তরুণরা আগামীতে বৈষম্যহীন উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমাদেরকে উপহার দিতে পারবে।
প্রতিনিধি/একেবি

