শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ফুচকা বিক্রেতা বিউটির স্বপ্নপূরণ, মেয়ে পড়ছে দেশসেরা বিদ্যাপীঠে

আবু সাঈদ রনি
প্রকাশিত: ২২ মে ২০২২, ১২:৩৬ পিএম

শেয়ার করুন:

ফুচকা বিক্রেতা বিউটির স্বপ্নপূরণ, মেয়ে পড়ছে দেশসেরা বিদ্যাপীঠে

বিউটি বেগম (৪০)। একমাত্র মেয়েকে নিয়েই তার সংসার। সেই সংসারের হাল ধরেছেন পদ্মার পাড়ে ফুচকা, চটপটি আর হালিম বিক্রি করে। দীর্ঘ ২২ বছর ধরে এই পেশায় আছেন তিনি। এই দীর্ঘ সময়ে মেয়ের প্রতি দায়িত্ব এবং কর্তব্যে বিন্দুমাত্র পিছুপা হননি তিনি। সংসারের সব প্রতিবন্ধকতাতে দু’পায়ে দলিয়ে মেয়েকে করেছেন শিক্ষিত, পড়িয়েছেন দেশের সেরা বিদ্যাপীঠে। নিজের স্বপ্নপূরণ করতে পেরে বেশ খুশি এই সংগ্রামী নারী।

বিউটি বেগম রাজশাহী নগরীর দরগাপাড়া এলাকার বাসিন্দা। ভাগ্যের নির্মমতায় বিয়ের দেড় বছরের মাথায় স্বামীর কাছ থেকে বিতাড়িত হন তিনি। সেই সময় ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে এক কাপড়ে স্বামীর বাড়ি থেকে বের হয়ে আসেন। এরপর জীবনের তাগিদে কিছু করার চেষ্টা করেছেন। অন্যের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে চেষ্টা করেছেন স্বাবলম্বী হওয়ার। এক সময় সেই পথও পেয়ে যান। কিন্তু পথটা সহজ না। কারণ সেই সময় রাজশাহী শহরে নারীদের জন্য সহজ কোনো কাজ ছিল না। জীবিকার তাগিদে অল্প বয়সেই চ্যালেঞ্জ নিলেন বিউটি বেগম। পেশা হিসেবে বেছে নিলেন ব্যবসা। এরপর আর থেমে থাকতে হয়নি বিউটিকে। শত বাধা এলেও মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে ব্যবসাটাকে চালিয়ে নিয়েছেন তিনি।


বিজ্ঞাপন


গ্রীষ্মের ভরদুপুরে বিউটি বেগমের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা মেইলের। তিনি জানান, বিয়ের দেড় বছর না পেরোতেই নানা সমস্যার কারণে স্বামীর কাছ থেকে বিতাড়িত হয়েছেন। অল্প বয়সেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে নাম লিখিয়েছেন ব্যবসায়ীর খাতায়। পদ্মা পাড়ের দর্শনার্থীদের কাছে মুখরোচক খাবার দিতে চালু করেছেন ফুচকা, চটপটি ও হালিম বিক্রি। উপার্জিত অর্থ দিয়েই যোগান মেয়ের পড়াশোনার খরচ। একটি সুন্দর আগামীর অপেক্ষায় অব্যাহত রেখেছেন মেয়ের লেখাপড়া। নানা বাধা অতিক্রম করে মেয়েকে পড়াচ্ছেন দেশসেরা বিদ্যাপীঠ রাজশাহী কলেজে।

করোনাকালীন দুর্বিষহ দিনের কথা মনে হলে তিনি জানান, করোনাকালীন দুই বছর অনেক কষ্টে চলতে হয়েছে। লকডাউনের কারণে দোকান চালু রাখারও উপায় ছিল না। দুবার কিছু সহযোগিতা পেলেও তা চাহিদা মেটানোর উপযুক্ত ছিল না। সেই সময়ও পেটের তাগিদে চেষ্টা করেছিলেন দোকান চালু করার। করোনার মধ্যেই কয়েকদিন চালু রেখে যুগিয়েছিলেন সংসার খরচ। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারও আগের মতোই গতিশীল জীবনে ফিরেছেন তিনি।

rajshahi

একলা মানুষ হওয়ায় নিজেই পালা করে দুবেলা বেচাবিক্রি করেন বিউটি বেগম। সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত ও বিকেল ৪টা থেকে রাত প্রায় সাড়ে ৯টা পর্যন্ত চলে তার কর্মযজ্ঞ। সিটি করপোরেশনের আলোকায়নের ফলে দর্শনার্থীরা রাতেও নির্দ্বিধায় থাকছেন বলে জানান তিনি।


বিজ্ঞাপন


সংগ্রামী এই নারী বলেন, ‘টানা ২২ বছরেরও বেশি সময় ধরে ফুচকা বিক্রি করি আমি। কাজ করেই ভাগ্যের পরিবর্তন করাতে আমি বিশ্বাসী। কিন্তু এর জন্য আমার প্রধান সমস্যা হলো পুঁজি। আমার কোনো পুঁজি নাই। কেউ আমাকে অর্থ দিয়ে সহায়তা করলে ব্যবসাটাকে বড় করতাম। নতুন কিছু করার পরিকল্পনা আছে, সেগুলোতে করতাম। এতে আমাদের মা মেয়ের আরও একটু ভালভাবে চলতো।’

স্বপ্নপূরণ নিয়ে বিউটি বেগম বলেন, ‘খুব ইচ্ছে ছিল মেয়েকে রাজশাহী কলেজে পড়াবো। মেয়ে সেই স্বপ্ন পূরণ করেছে। সে এখন একাউন্টিং শেষ বর্ষের ছাত্রী। কিছুদিন পর মাস্টার্সও শেষ হবে। আশা করছি সে একটা ভালো চাকরি করবে। ব্যাংকার হয়ে আমার মনের আশা পূরণ করবে।’

জীবন সংগ্রামের অদম্য এই নারী ফুচকা দোকানির পাশাপাশি একজন বৃক্ষপ্রেমীও। ফুচকা দোকানের পাশে পদ্মার ধার দিয়ে লাগিয়েছেন অসংখ্য গাছও। পাশাপাশি পানি দেওয়া থেকে শুরু করে যাবতীয় পরিচর্যার কাজও করেছেন নিজ হাতে। ভালো লাগা থেকেই এসব বৃক্ষরোপণ বলেও জানান তিনি।

তার লাগানো কয়েক প্রজাতির লাগানো চারা রূপ নিয়েছে গাছে। উপকারও পেতে শুরু করেছেন দর্শনার্থীরা। সবুজ পাতায় ছেঁয়ে গেছে আশপাশের এলাকা। বিশুদ্ধ অক্সিজেন পেতে অনেকেই ভিড় জমান এসব গাছ তলায়।

তাদেরই একজন রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী সাকিব হাসান। ক্লাস শেষে নির্মল হাওয়ায় শ্বাস নিতে চলে আসেন পদ্মা পাড়ে। জানতে চাইলে তিনি বলেন,  ‘একজন নারী একা হয়েও সংসারের সব খরচ মেটাচ্ছেন। স্বামীর কাছে বিতাড়িত হয়েও স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছেন এটা অনেক কিছু। তাকে স্যালুট জানাই।’

টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর