বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

ফুটপাত নয় যেন মানুষ মারার ফাঁদ

ইমরান হোসেন পিংকু
প্রকাশিত: ২২ মে ২০২২, ১১:১৭ এএম

শেয়ার করুন:

ফুটপাত নয় যেন মানুষ মারার ফাঁদ

স্লাব ভেঙে ড্রেনের মধ্যে পড়ে আছে। এতে গভীর ড্রেন উন্মুক্ত হয়ে পথচলায় ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে। এমন দৃশ্য যশোর শহরের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের। এছাড়াও নির্মাণের দীর্ঘ দিন পরেও অনেক ড্রেনের ওপর এখনো স্লাব বসানো হয়নি। এর ফলে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে পথচারীদের। স্কুলগামী ছাত্র-ছাত্রীসহ পথচারীরা ফুটপাতে হাঁটতে গিয়ে সবসময় ভয়ে থাকেন কখন কে পড়ে যায় ড্রেনে। দীর্ঘদিন ধরে এমন অবস্থা থাকলেও ভেঙে পড়া স্লাব পুনর্নিমাণ ও খোলা ড্রেনে ঢাকনা স্থাপনে যশোর পৌরসভার কোনো উদ্যোগ নেই।

স্থানীয় লোকজন জানান, ঢাকনা না থাকায় ফুটপাত ব্যবহারকারীদের জন্য ড্রেনগুলো বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। দিনে সাবধানতা অবলম্বন করলেও চলাচল করা গেলেও রাতের অন্ধকারে ঢাকনাবিহীন ড্রেনে অনেককে দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে। সবাই আতঙ্কে নিয়ে চলাচল করেন। মানুষের চলাচলের জন্য মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে ড্রেনগুলো।


বিজ্ঞাপন


জানা যায়, গত সাত বছরে যশোর পৌর এলাকায় বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ৪০ কিলোমিটার আরসিসি ড্রেন নির্মাণ হয়েছে। এসব ড্রেনের অনেকগুলোর ওপর সুদৃশ্য ফুটপাত নির্মাণ হয়েছে। কিছু ড্রেনের ওপর দেওয়া হয়েছে স্লাব। কিন্তু এখনও বহুসংখ্যক ড্রেন ঢাকনাবিহীন রয়েছে। যেগুলোর ওপর ঢাকনা আছে, সেগুলো চলাচলের জন্য ফুটপাত হিসেবে ব্যবহার করেন পথচারীরা। কিন্তু স্লাব ভেঙে ড্রেন উন্মুক্ত হয়ে পড়ায় যাতায়াত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে বিভিন্ন জায়গায়।

শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কের একটি ঘোপ জেল রোড ঘুরে দেখা গেছে, সড়কটির অনেক জায়গায় স্লাব ভেঙে গভীর ড্রেন উন্মুক্ত হয়ে আছে। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠায় স্থানীয়রা ড্রেনের স্লাববিহীন এবং ভাঙা জায়গায় লঠির মাথায় লাল কাপড় বেঁধে দিয়েছেন। পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের পাশের সড়কটিরও ড্রেনের স্লাব ভেঙে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে ভাঙা স্লাব ড্রেনের মধ্যে পড়ে থাকলেও তা নিয়ে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ বহু মানুষের যাতায়াত এই সড়ক দিয়ে। নিরাপদে চলাচলের জন্য অনেকেই স্লাব দিয়ে ঢাকা ড্রেনের ওপরের পথটিকে ফুটপাত হিসেবে ব্যবহার করেন। কিন্তু স্লাব ভেঙে পড়ায় চলাচলও বিঘ্নিত হচ্ছে। 

সড়কটি দিয়ে ডা. আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজ, প্রিপারেটরি স্কুল, সেক্রেটহার্ট ও মুসলিম একাডেমি স্কুলের শিক্ষার্থীরা চলাচল করে। কিন্তু বছরের ওপর হতে চলল ড্রেনের ওপর স্লাব ভেঙে থাকায় শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেন। আবার অনেকে ঝুঁকি এড়াতে রাস্তা ব্যবহার করায় সেখানেও দুর্ঘটনায় শঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
jashore drain
ডা. আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়া শিক্ষার্থী ফাহমিদ হাসান ও নওশিন আক্তার বলেন, প্রধান সড়ক থেকে কলেজের দিকে মোড় নিতে হয়, সেখান থেকে খানিকটা দূরে ড্রেনের ওপরের অনেকগুলো স্লাব ভেঙে পড়ে আছে। বছরের বেশি সময় পার হলেও এগুলো পুনর্নির্মাণ হচ্ছে না। যার কারণে হাঁটাচলায় সমস্যা হয়। উপায় না পেয়ে ভয় আর আতঙ্ক নিয়েই চলতে হচ্ছে।

জনউদ্যোগ যশোরের আহ্বায়ক প্রকৌশলী নাজির আহমেদ বলেন, ফুটপাত যদি চলাচলের উপযোগী না থাকে তাহলে সেটা থাকা আর না থাকা সমান। যশোরের বেশিরভাগ ফুটপাত দখলে থাকায় নাগরিকরা বাধ্য হয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটাচলা করেন। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু এ ব্যাপারে পৌর কর্তৃপক্ষ একেবারে উদাসীন। 


বিজ্ঞাপন


নাজির আহমেদ বলেন, ‘পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের পাশের সড়কটির ড্রেনের ওপরের অনেকগুলো স্লাব ভেঙে গেছে। পৌরসভার একেবারে নাকের ডগায় এমন চিত্র দেখা গেলেও সংশ্লিষ্টদের সেটি চোখে পড়ছে না।’
তিনি আরও বলেন, জেলরোডে ড্রেনের স্লাব ভেঙে পড়ার দৃশ্যও পৌর মেয়রের একদম নাকের ডগায়। তার বাড়ির খুব কাছাকাছি একটি স্থানে গভীর একটি ড্রেনের ওপরে স্লাব ভেঙে ড্রেনটি উন্মুক্ত হয়ে আছে। স্লাব ভেঙে গর্ত তৈরি হয়েছে। সেটিও তার নজরে পড়ছে না। ভেঙে যাওয়া স্লাব বদল ও ক্ষতিগ্রস্ত স্লাব সংস্কার করার দাবি জানান তিনি।

এদিকে শহরের অনেক এলাকায় দীর্ঘদিন আগে ড্রেন নির্মাণ হলেও সেগুলোর ওপর ঢাকনা না দেওয়ায় উন্মুক্ত অবস্থায় রয়েছে। ফলে এর পাশ দিয়ে মানুষের চলাচলে ঝুঁকি বেড়েছে। এছাড়া ঢাকনাবিহীন ড্রেনে অবাধে মশার প্রজননও চলছে। শহরের ঘোপ নওয়াপাড়া, সেন্ট্রাল রোড, স্টেডিয়াম সড়ক, সরকারি এমএম কলেজের সামনেসহ আরও অনেক সড়কে ড্রেনের ওপর ঢাকনা নেই।
jashore drain

ঘোপ কবরস্থান এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা আশরাফ হোসেন বলেন, এই সড়কে ড্রেনের ওপর কোনো ঢাকনা নেই। ফলে হাঁটাচলা বা সাইকেল মোটরসাইকেল চালানোর সময় একটু অসর্তক হলে নির্ঘাত দুর্ঘটনা ঘটার শঙ্কা রয়েছে। এছাড়া মাধেমধ্যেই দুর্ঘটনাও ঘটে বলে জানান তিনি।

যশোর পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত সাত বছরে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে শহরে প্রায় ৪০ কিলোমিটার আরসিসি ড্রেন নির্মাণ হয়েছে। সিআরডিপি (সিটি রিজন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট) ও ইউজিপআইআই-৩ (তৃতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নীতকরণ সেক্টর প্রকল্প) প্রকল্পের মাধ্যমে এই ড্রেন নির্মাণ হয়। 

এসব ড্রেনের বেশিরভাগের ওপর ফুটপাত তৈরি হয়েছে। অনেক জায়গায় স্লাব দেওয়া হয়েছে। স্লাব দেওয়া ড্রেনগুলো ফুটপাত হিসেবে ব্যবহার করেন নাগরিকরা। এছড়া বহু ড্রেন আছে যেগুলোর ওপর নির্মাণের দীর্ঘদিন পরেও ঢাকনা বসেনি। 

যশোর পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা আজমল হোসেন জানান, ভেঙে পড়া ও ক্ষতিগ্রস্ত স্লাব বদল ও সংস্কারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাকনাবিহীন ড্রেনের ব্যাপারে জানতে চাইলে আজমল হোসেন বলেন, শহরের ড্রেনগুলো বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে নির্মাণ হয়েছে। এগুলো যখন নির্মাণ হয় তখন স্লাব বা ঢাকনার বিষয়ে বলা হয়েছিল। কিন্তু ড্রেনের নকশায় ঢাকনা না থাকায় প্রকল্প কর্তৃপক্ষ নির্মাণের সময় স্লাব স্থাপন করেনি। শহরে ড্রেনের সংখ্যা অনেক। প্রত্যেকটি ড্রেনে স্লাব নির্মাণ অনেক ব্যয়বহুল। পরবর্তীতে আবারও কোনো প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হলে তখন উন্মুক্ত ড্রেনের ঢাকনা তৈরির প্রস্তাবনা রাখা হবে।

প্রতিনিধি/এএ/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর