মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

কারাগার থেকে পালানো ২৬১ কয়েদির আত্মসমর্পণ, বাকিদের জন্য মাইকিং

জেলা প্রতিনিধি, নরসিংদী
প্রকাশিত: ২৪ জুলাই ২০২৪, ০৬:৩৯ পিএম

শেয়ার করুন:

কারাগার থেকে পালানো ২৬১ কয়েদির আত্মসমর্পণ, বাকিদের জন্য মাইকিং

নরসিংদী জেলা কারাগারে দুর্বৃত্তরা হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে অস্ত্র লুটের সময় ৮২৬ কয়েদি পালিয়ে গেছেন। এর মধ্যে বুধবার বিকেল পর্যন্ত ২৬১ জন আত্মসমর্পণ করেছেন। তারা নরসিংদী জেলা দায়রা জজ আদালতের মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করছেন বলে জানা গেছে। 

জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি কাজী নাজমুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 


বিজ্ঞাপন


এর মধ্যে মঙ্গলবার ১৩৮ ও বুধবার ১২৩ জন আত্মসমর্পণ করেন। পালিয়ে যাওয়া কয়েদিদের আত্মসমর্পণ করার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহরের বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করা হচ্ছে।

এদিকে বুধবার (২৪ জুলাই) দুপুর দেড়টায় নরসিংদী জেলা কারাগার পরিদর্শন করেন সেনাবাহিনী প্রধান ওয়াকার উজ-জামান।

যে কৌশলে পালিয়ে যান ৮২৬ বন্দি
নরসিংদীতে গত শুক্রবার দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে জেলা কারাগার থেকে ৮২৬ আসামি পালিয়ে যায়। কারাগারের অস্ত্রাগার থেকে ৮৫টি অস্ত্র ও আট হাজার গুলি লুট করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় তারা কারাগারের অফিসকক্ষ, অস্ত্রাগার, বন্দিশালা, ব্যারাক, অফিসারদের বাসাবাড়ি, গ্যারেজে থাকা গাাড়ি, মোটরসাইকেলসহ  বিভিন্ন ভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।

কারাগারে হামলার পর পালিয়ে যাওয়া ৮২৬ বন্দির মধ্যে ইয়াকুব মিয়া (৪৫), আপন মিয়া (৩০), বোরহান উদ্দিন (৩৫) ও মো. জাকির হোসেন—কেউ সাজাপ্রাপ্ত আসামি, কেউবা বিচারাধীন মামলায় কারাগারে ছিলেন। 


বিজ্ঞাপন


মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে তারা কারাগারের সামনে আত্মসমর্পণ করতে আসেন। কিন্তু তাদের আদালতে বা থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেয় কারা কর্তৃপক্ষ।

চার বন্দির মধ্যে মাদক মামলার আসামি আপন মিয়া ২ মাস, বোরহান উদ্দিন ১৫ দিন ও মো. জাকির হোসেন ৬ মাস ধরে কারাগারে ছিলেন। তারা জামিনের অপেক্ষায় আছেন। স্বজনদের পরামর্শে তারা ফিরে এসেছেন।

হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ইয়াকুব মিয়া জানান, হত্যা মামলায় ২০১৫ সালে তার ফাঁসির রায় হয়েছিল। পরে উচ্চ আদালত তার সাজা কমিয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন। ৮ বছরের সাজা খাটা শেষ হয়েছে। ঘটনার দিন পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন। এখন আত্মসমর্পণ করতে চান।

পুলিশ সুপার বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় পুলিশের অভিযানে কারাগার থেকে লুট হওয়া ১৮টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছেন ৩১ জন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ৩৩টি অস্ত্র উদ্ধার ও ৯৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি অস্ত্র উদ্ধার ও জড়িত আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে একাধিক কারারক্ষী ও এলাকাবাসী জানান, শুক্রবার বিকাল সোয়া ৪টার দিকে হামলাকারীরা মুহুর্মুহু ইটপাটকেল ছুড়তে ছুড়তে কারাগারের দুই দিকের ফটক ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। এ সময় পেট্রলবোমা মারা হয়। কারাগারের ভেতরে নানা জায়গায় আগুন ধরে যায়। হামলাকারীরা কারারক্ষীদের থেকে ছিনিয়ে নেওয়া চাবি দিয়ে বন্দিদের অনেকগুলো কক্ষের তালা খুলে দেন। কিছু কক্ষের তালা ভেঙে ফেলা হয়। চারপাশ ধোঁয়ায় ছেয়ে যায়। এ সময় হামলাকারীরা আসামি ছিনিয়ে নেন। এরপর একে একে ৮২৬ বন্দি পালিয়ে যান। এ সময় অস্ত্রাগার ও কারারক্ষীদের থেকে ৮৫টি অস্ত্র ও ৮ হাজার ১৫০টি গুলি লুট করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, কারাগারে যারা হামলা করেন, তাদের হাতে লাঠিসোঁটা, দেশি অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। তাদের হামলা প্রতিহত করার চেষ্টা করেন কারারক্ষীরা। তবে সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। কারারক্ষীরা নিরাপদ অবস্থানে চলে যান।

কারাগারে বন্দিদের থাকার জায়গা, রান্নাঘর, কনডেমড সেল ও অফিস এখন আর আলাদা করে চেনার উপায় নেই। সবখানে পোড়া চিহ্ন, লণ্ডভণ্ড অবস্থা। দেখে মনে হয়, যুদ্ধক্ষেত্রের কোনো ধ্বংসস্তূপ। গত শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কারাগারে ঢুকে এমন চিত্র চোখে পড়ে।

আরও পড়ুন—

কারাগারে গিয়ে দেখা যায়, কারাগারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সাদাপোশাকে আছেন। কারাগারের অফিস, রান্নাঘর, বন্দিদের থাকার জায়গা, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের থাকার কনডেমড সেলসহ পুরো এলাকায় আগুনে পোড়ার দাগ। আশপাশের উৎসাহী লোকজন কারাগারের ভেতরে ঢুকে ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন। কেউ কেউ কারাগারের বাগানের ফুল-ফল ছিঁড়ে বাড়ি নিয়ে গেছেন।

gt

বন্দীদের কারাগার থেকে চলে যাওয়ার সময়কার কথা উল্লেখ করে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, বের হয়ে যাওয়ার সময় বন্দিদের অনেকে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। এক বন্দি তাকে বলেছেন, তার ২৪ বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল। তিনি ১০ বছর সাজা খেটেছেন। তিনি এখন সুযোগ পেয়ে বের হয়ে যাচ্ছেন।

কারাগারে হামলা ও কারাবন্দীদের পালানোর ঘটনায় নরসিংদী কারাগারের জেলসুপার আবুল কালাম আজাদ ও জেলার কামরুল ইসলামকে মঙ্গলবার সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। নরসিংদীর জেলা প্রশাসক বদিউল আলম বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।

কারাগারে হামলার ঘটনায় গত রোববার দুপুরে জেলার কামরুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে নরসিংদী মডেল থানায় মামলা করেন। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, হামলায় অংশ নিয়েছেন ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার ব্যক্তি। তবে ভেতরে ঢুকে তাণ্ডব চালিয়েছেন অন্তত এক হাজার লোক।

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর