বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

রিকশার প্যাডেলে ঘোরে শতবর্ষী রণজিতের জীবিকার চাকা

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২০ মে ২০২২, ০৯:৪৪ পিএম

শেয়ার করুন:

রিকশার প্যাডেলে ঘোরে শতবর্ষী রণজিতের জীবিকার চাকা
ছবি : ঢাকা মেইল

রিকশার প্যাডেল ঘুরানোর জন্য দরকার শক্তি। সেই সামর্থ্য হ্রাস পেয়েছে অনেক আগেই। তবুও প্রতিদিন রিকশার প্যাডেল ঘোরানোর যুদ্ধে চলে ৯৮ বছর বয়সী রণজিত ঘোষের জীবিকার চাকা। 

জীবন সায়াহ্নে এসে আর কোনো উপায়ও নেই তার।


বিজ্ঞাপন


রিকশা চালিয়ে উপার্জিত সীমিত অর্থে জোগাড় করেন তিনবেলার আহার। কোনো রকমে খাবারের ব্যবস্থা হলেও নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই। তাই দিনশেষে ক্লান্ত শরীরে ফুটপাতে রাত্রিযাপন করেন। এভাবেই কাটছে তার দিন। 

মঙ্গলবার রাত থেকে তার জীবন সংগ্রামের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।

রণজিত ঘোষের আদি বাড়ি যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার জামালপুর গ্রামে। তিনি দীর্ঘদিন যশোর শহরের বেজপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। এক সময় হোটেলে বাবুর্চির কাজ করলেও বর্তমান রিকশা চালান। স্বজন বলতে তার একমাত্র মেয়ের সঙ্গে দীর্ঘদিন যোগাযোগ নেই। সারাদিন রিকশা চালিয়ে রাতে যশোর শহরের চৌরাস্তার ‘ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড (এনএলআই টাওয়ার)' ভবনের নিচে ফুটপাতে ঘুমান।  

যশোরের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বজন সংঘের সাধারণ সম্পাদক সাধন কুমার দাস বলেন, শতবর্ষী রণজিত কুমারের জীবন সংগ্রাম যেকোন হৃদয়বান মানুষকে স্পর্শ করবে। স্বজনরা মানুষটির সংগ্রামের গল্প আমাকেও অশ্রসিক্ত করেছে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার জীবনের গল্প উঠে এসেছে। তার সহায়তায় বিবেকবান মানুষের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। 


বিজ্ঞাপন


জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকার আক্ষেপ তুলে ধরে রণজিত ঘোষ বলেন, ‘কতো নিতার কাছে গিলাম সবাই ফিরোয়ে দেচে। লাগবে না আইডি কাড। কি হবে এখন আর আইডি কাড দিয়ে!’ 

তিনি বলেন, চার বছর বয়েসে মা মরে গেছে। সৎমার গালিগালাজ শুনিচি ম্যালা। দশ বছর বয়সে এই যশোরে আইচি। বিভিন্ন হোটেলের বাবুর্চির কাজ করিছি। সৎমারে আড়াল করে বাবা যশোরে আসে টুকটাক খোঁজ খবর নিতো। দেখাশুনা করে আমারে বিয়ে দিয়ার কয়দিন পরেই বাবা মরে গ্যালো। হিন্দুস্থান পাকিস্তান হওয়ার এক বছর পরে আমার ৩ ছেলে মরে গ্যাচে ডায়রিয়ায়। ওদের বয়স তখন ৫ বছরের কম। একটা মেয়ে ছিলো। এখন বেঁচে আছে কিনা জানিনে। মেয়েরে বিয়ে দিছিলাম। বিয়ের পরে ওর একটা ছেলে হলো। ছেলে হওয়ার দেড় মাস পরে বাচ্চাটকে নিয়ে আমার কাছে চলে আসলো মেয়ে। খুব কষ্টে মেয়ের নামে একটা বাড়িও কিনিছিলাম আকবরের মোড়ে (যশোর শহরের একটি জায়গা)। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে মেয়েটাও আমাকে ছেড়ে কোথায় যে চলে গ্যাছে তার খোঁজ আজও মেলেনি। ১১ বছর আগে আমার স্ত্রী মরে গেছে। মেয়ের রেখে যাওয়া দেড় মাসের ছেলেকে বড় করলাম, বিয়ে দিলাম। এখন আমার দুনিয়ায় এই রিক্সা ছাড়া আর আপন বলতে কেউ নেই! 

রণজিত ঘোষ আরও বলেন, কোনো কোনো দিন ৬০ টাকা, ৮০ টাকা, ১০০ টাকা বা ১৫০ টাকা আয় হয় তার। ব্যস্ততম সময়ের অধিকাংশ মানুষই রিকশায়  উঠতে চান না। যা আয় করেন তাই দিয়ে হোটেলে কোন রকম দু'বেলা দুমুঠো খেয়ে দিন পার করছি। বাড়ি-ঘর হারানোর পরে এক হাজার টাকার ভাড়া বাসায় একাই থাকতাম। রোজগার ভালো হয় না; তাই ভাড়া করা বাসা ছেড়ে এখন ফুটপাতে থাকি।

প্রতিনিধি/এইচই

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর