মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

অশনির বৃষ্টিতে ডুবেছে কৃষকের স্বপ্ন 

আবু সাঈদ রনি 
প্রকাশিত: ২০ মে ২০২২, ০৮:১১ এএম

শেয়ার করুন:

অশনির বৃষ্টিতে ডুবেছে কৃষকের স্বপ্ন 

ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ব্যপক ক্ষতির শিকার হয়েছেন রাজশাহী অঞ্চলের ধান চাষিরা। কষ্টের ধান ঘরে তোলা নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তারা। 

রাজশাহীর পবা, মোহনপুর, গোদাগাড়ী, তানোর ও দুর্গাপুর উপজেলার ধানক্ষেতগুলো সরেজমিনে দেখা যায়, ধান পাকার শেষ মুহুর্তে এসে দুর্যোগের কবলে পড়ে নুয়ে পড়েছে বেশির ভাগ গাছ। হেলে জমে থাকা পানিতে ডুবে রয়েছে এখনও অনেক জমি। অর্জনের শেষ মুহূর্তে এমন ক্ষতিতে পথে বসার অবস্থা চাষিদের। 


বিজ্ঞাপন


দেখা গেছে, নিচু জমিতে প্রায় ৮০ শতাংশ পরিপক্ক ধান হেলে জমে থাকা পানিতে পড়েছে। অনেকে ক্ষতি কমাতে পুরো ধানগাছ কাটার পরিবর্তে শুধু মাত্র শীষ সংগ্রহের কাজ করছেন। তবুও কম পরিপক্ক ধান চিটা তৈরি হয় কিনা সেই দুশ্চিন্তা কাটছেই না। 

এদিকে বেড়েছে ধান কাটা শ্রমিকের মজুরি। তবুও শ্রমিক মিলছে না। অতিরিক্ত মজুরির কারণে অনেকে শ্রমিক নিতে না পেরে পরিবারের সদস্যদের নিয়েই নেমে পড়ছেন ধান কাটতে।
 
জানতে চাইলে তানোরের ধান চাষী রতন চন্দ্র প্রামানিক ঢাকা মেইলকে বলেন, এই এলাকায় শ্রমিক সংকট সচরাচর হয় না। তবে এ বছর শুরুর দিকে ৫০০ টাকায় একজন শ্রমিক পেলেও শেষ দিকে বৃষ্টির কারণে সংকট দেখা গেছে। সবকিছুর মতো শ্রমিক খরচও বেড়েছে।
paddy rajshahi  গোদাগাড়ীর কৃষক গোলজার রহমান বলেন, ‘গত বছর যে জমিতে ২০ মণ ধান পেয়েছি এবার সেখানে ১৫ মণ হবে কিনা সন্দেহ আছে। অসময়ের বৃষ্টি আর বাতাসে সব ধান নুইয়ে পড়েছে। শীষ থেকে ধান ঝরে শীষেই গাছ বের হওয়া শুরু হয়েছে। মাড়াইয় করার সময় এগুলো পাতান হয়ে উড়ে যাবে।’ 
 
তিনি আরও বলেন, ‘পুরো ধান গাছ পানিতে থাকায় এবার খড়ও সংগ্রহ করা গেল না। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে ধানের ভিউয়েই যাবো না। তবুও পেটের দিক তাকিয়ে যেতে হচ্ছে।’ 

ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে হওয়া অসময়ের বৃষ্টিতে ক্ষতির মুখে পড়েছে জেলার মোহনপুর উপজেলার ধানচাষিরাও। উপজেলার লক্ষীপুর, ডাংপাড়া, দেউপুর, গোয়ালপাড়া এলাকাগুলো সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় ৯০ শতাংশ ধান ডুবেছে। অনেকে এখনও ঘরে তুলতে পারেননি কষ্টের ফসল। 

এই উপজেলার ধানচাষি শাহাদুল্লার সাথে কথা হয় ঢাকা মেইলের। তিনি বলেন, ‘ঈদের দু-একদিন আগেপরে এই এলাকার ধান পাকতে শুরু করেছে। কিন্তু এই সময়টাতেই টানা বৃষ্টি চলেছে। প্রায় সবার ধান ডুবে ছিল। শতাধিক বিঘার ধান পানিতে ভেসেছে। 


বিজ্ঞাপন


শ্রমিক সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আগের বছরগুলোতে তানোর, বাগমারা ও মান্দা থেকে অনেক শ্রমিক আসতো। কিন্তু বৃষ্টির কারণে এবার সেই সংখ্যা অনেক কমে এসেছে। বাধ্য হয়ে রাজশাহী থেকে কলেজপড়ুয়া ছেলেকে ডেকে নিজেই নিজের ধান কাটা শুরু করেছি।’
paddy rajshahiএকই এলাকার আরেক কৃষক আবুল হোসেন বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেসব জমিতে গড়ে ২৫ মণ পর্যন্ত ধান হতো, এবার সেখানে ২০ মণই হচ্ছে না। যাবতীয় খরচ তোলাই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তবুও যদি ধান সহজে ঘরে তোলা যেতো শান্তি লাগতো।’  

শ্রমিক খরচ বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগের বছরগুলোতে দৈনিক ৪৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকার মধ্যেই একটা শ্রমিক পাওয়া গেছে। আর এবার ৮০০ টাকা পর্যন্ত লেগেছে শ্রমিক প্রতি। তবুও শ্রমিক পাওয়া কঠিন। 

এ বিষয়ে রাজশাহী ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ধান গবেষক ড. ফজলুল হক ঢাকা মেইলকে বলেন, ঝড়ের কারণে নুয়ে পড়া ধানগুলোর বিষয়ে কৃষকদের বলা হয়েছিল যেন পানি জমে থাকলে গোড়াসহই তুলে নেয়। তবুও কিছুটা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তারা। বিশেষ করে শ্রমিক সংকট আর পানিতে ডুবে থাকার কারণে কিছু এলাকায় সময়মতো ধান সংগ্রহ সম্ভব হয়নি। 

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, এপ্রিলে ধানের জমিতে খুব একটা ক্ষতি হয়নি। তবে মে মাসের বৃষ্টিতে কিছু এলাকার ধান ডুবে গেছে। ফলন অন্য বছরের তুলনায় কিছুটা কমতে পারে। হয়তো বিঘা প্রতি গড়ে দু-এক মণ কম ধান উৎপাদন হয়েছে। আরও কিছুদিন পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে

প্রতিনিধি/এএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর