শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

নদী ভাঙনের হুমকিতে দেশের সবচেয়ে বড় আশ্রয়ন প্রকল্প

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১৯ মে ২০২২, ১০:২৪ পিএম

শেয়ার করুন:

নদী ভাঙনের হুমকিতে দেশের সবচেয়ে বড় আশ্রয়ন প্রকল্প
ছবি : ঢাকা মেইল

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় মধুমতি নদীর ভাঙনে মুজিববর্ষে গড়ে তোলা আশ্রয়ন প্রকল্পের প্রায় ৩ শ ঘর হুমকির মুখে পড়েছে। গত ৩ বছরে এই উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ৬ শ পরিবারের ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। সেখানকার ১ হাজারের মতো পরিবার এখন হুমকির মুখে রয়েছেন। নদী তীর রক্ষায় পদক্ষেপ না নিলে এসব ঘর দ্রুতই নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন দিন কাটাচ্ছেন বসতিরা। 

এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার (১৯ মে) নদীর পাড়ে ভাঙন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিতে সেখানকার বসতিরা মাবনববন্ধন করেছেন।


বিজ্ঞাপন


জানা যায়, আলফাডাঙ্গার গোপালপুর ইউনিয়নের ছাতিয়াগাতি, দিগনগর, খোলাবাড়িয়া, কাতলাসুর ও পগনবেগ এই পাঁচটি গ্রামে মধুমতি নদীর ভাঙ্গনের মাত্রা তীব্র আকার ধারণ করেছে। এছাড়া আশেপাশের বাজড়া, বাঁশতলা, দক্ষিণ চর নারানদিয়া, পশ্চিম চর নারাণদিয়া ও পাড়া-গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী পাচুরিয়া, টগরবন্দ ও বানা ইউনিয়নেও মধুমতি নদীর ভাঙন চলছে। নদীর কবলে বিলীন হচ্ছে একের পর এক বসতভিটা, ফসলি জমি, স্কুল ঘর, মসজিদসহ নানা স্থাপনা। 

গোপালপুর ইউনিয়নের কাতলারসুর গ্রামে মুজিববর্ষে গড়ে তোলা হয়েছে স্বপ্ননগর আশ্রয়ন প্রকল্প। ওই আশ্রয়ন প্রকল্পে ২৮৬ জন বসতির কাছে জমিসহ ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর। 

দুই বছর না যেতেই এসব ঘরের বাসিন্দারা এখন নদী ভাঙনে ঘর হারানো আশঙ্কায় শঙ্কিত।

আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা রূপালি বেগম জানান, প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে তারা মাথা গোছার ঠাঁই হিসেবে একটু আশ্রয় পেয়েছিলেন। এখন এই আশ্রয় হারালে তারা আবার পথে পথেই থাকতে হবে। 


বিজ্ঞাপন


ছাতিয়াগাতি গ্রামের বিদেশফেরত প্রবাসী শাহ মো. মুকুল হোসেন মিয়া জানান, পৈত্রিকসূত্রে তাদের প্রায় ৩০ একরের মতো জমিজমা ছিলো মধুমতির তীরে। এখন প্রায় সবই শেষ শুধু ভিটেটুকু বাদে। 

ছাতিয়াগাতি গ্রামের প্রবাস ফেরত শাহ মো. মুকুল হোসেন মিয়া বলেন, বছরের পর বছর তার গ্রামে মধুমতি নদীর ভাঙন চলছে। তাদের প্রায় ৩০ একর জমি নদীতে চলে গেছে। এখন ভিটেটুকু রয়েছে। তাও ভাঙনের মুখে পড়েছে। বাপদাদার কবর ও মসজিদটাও নদীতে তলিয়ে যাবে যদি ভাঙনরোধ করা না যায়।  

সরেজমিনে দেখা গেছে, একটি পুরনো মসজিদ ছিলো, যা নদীতে চলে যাওয়ার পরে নতুনস্থানে মসজিদ করা হয়। সেটিও ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থাপনা ঝুঁকিতে রয়েছে। 

স্থানীয়রা জানান, মধুমতির ভাঙ্গনে বাজড়া গ্রামের পুরনো একটি মসজিদ বিলীন হয়ে গেছে। পুরনো মসজিদটির পর নতুন স্থানে মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল। সেটিও এখন ভাঙনের সম্মুখিন। 

তারা জানান, গোপালপুর ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় গ্রাম ছিল খোলাবাড়িয়া। ওই ভোটার ছিলো প্রায় ২৬ শ। এখন ওই পুরো গ্রাম মধুমতি নদীর গর্ভে চলে গেছে। তারা এখন আলফাডাঙ্গার নতুন নতুন গ্রাম বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন।

আলফাডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম জাহিদুল ইসলাম বলেন, এ সমস্যা নিয়ে বহুবার জেলার বিভিন্ন সভায় বলা হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য মনজুর হোসেন বুলবুল এবং ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার একাধিকবার ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শনও করে গেছেন। কিন্তু ভাঙ্গনরোধে সমন্বিত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। 

তিনি বলেন, এভাবে ভাঙতে থাকলে অল্প সময়ের মধ্যে আরও প্রায় হাজারখানেক পরিবারের ঘরবাড়ি নদীতে তলিয়ে যাবে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে অনুধাবন করে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে এটি আশা করছি।

জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, দুই থেকে তিন বছর হলো আমরা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি। স্থানীয় জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভাতেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ওই এলাকার আশ্রয়ন প্রকল্পসহ অন্যান্য ক্ষতি যাতে না হয় সেজন্য আবারো পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে গুরুত্বের সঙ্গে জানাবো।

প্রতিনিধি/এইচই

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর