ঝিনাইদহের সাবেক জেলা শিক্ষা অফিসার মো. মোকছেদুল ইসলাম অবশেষে ফেঁসে গেছেন। চাকরি করার সময় অঢেল সম্পদ অর্জন করেছেন তিনি। শেষ রক্ষা হলো না তার। জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদ ও নগদ টাকা অর্জনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুদক।
দুদক জেলা কার্যালয় ঝিনাইদহের উপ-পরিচালক মো. শফি উল্লাহ বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) এজাহার দায়ের করেন। একই দপ্তরের সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান দুপুর ১টার দিকে এজাহারটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
বিজ্ঞাপন
ওই অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার পীরগাছা গ্রামের মৃত কিতাব আলীর ছেলে মো. মোকছেদুল ইসলাম সাবেক জেলা শিক্ষা অফিসার ঝিনাইদহ এবং পরবর্তী পর্যায়ে উপ-পরিচালক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বরিশাল (বর্তমান অবসরে) ২৭ লাখ ৭২ হাজার ১৪২ টাকার সম্পদ অর্জনের হিসাব গোপন করে দুর্নীতি দমন কমিশনে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। এছাড়াও জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ৩৫ লাখ ৪০ হাজার ৬৬০ টাকা অসাধু উপায়ে অর্জন করেছেন মোকছেদুল ইসলাম।
আরও পড়ুন: নোয়াখালীতে ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
২০১৮ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন তৎকালীন সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোর মো. মোকছেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে করা অভিযোগের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে নামে। অনুসন্ধানে জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়। ২০১৯ সালের ৩০ জুন স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বিবরণী নির্ধারিত ফরমে হিসাব দাখিলের জন্য আদেশ প্রদান করে দুদক। ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট আলাদা কাগজে টাইপ করা একটি সম্পদ বিবরণী তৎকালীন সমন্বিত যশোর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক বরাবর দাখিল করেন তিনি (মো. মোকছেদুল ইসলাম)। দাখিল করা ওই বিবরণী (সম্পদের বিবরণী) যাচাই করার জন্য ২০২৩ সালের ৯ এপ্রিল মো. শফি উল্লাহ উপ-পরিচালক সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঝিনাইদহ-কে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। তদন্তে বেরিয়ে আসে মো. মোকছেদুল ইসলাম ১৯৮৭ সালের ১ মার্চ ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ওয়াড়িয়া গ্রামের মৃত আব্দুর রাজ্জাক মিয়ার মেয়ে কামরুন্নাহার লিপিকে বিয়ে করেন। মোকছেদুল ইসলাম ও তার স্ত্রী কামরুন্নাহার লিপি এক কোটি পঁয়ত্রিশ লাখ বিশ হাজার দুইশ আশি টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে এক কোটি একুশ লাখ ঊনআশি হাজার তিন শত পাঁচ টাকার স্থাবর এবং তিন লাখ একাত্তর হাজার নয়শ পঞ্চাশ টাকার অস্থাবর সম্পদ দেখানো হয়েছে। হিসাব মতে সাতাশ লাখ বাহাত্তর হাজার এক শত একচল্লিশ হাজার টাকার সম্পদের হিসাব গোপন করা হয়েছে বলে মামলার বাদী (উপ-পরিচালক মো. শফি উল্লাহ) উল্লেখ করেছেন। শুধু তাই নয়, ২০১২ সাল থেকে ২০১৫ সালের বিভিন্ন সময়ে তিনটি কবলা দলিলে সাত লাখ তিরানব্বই হাজার টাকার জমি মহেশপুর সাব রেজিস্ট্রি অফিসের মাধ্যমে ক্রয় করেছেন মকছেদুল। একই সময়ে পাঁচ লাখ সাত চল্লিশ হাজার নয়শ পঁচাত্তর টাকার ভবন নির্মাণ করেছেন মোকছেদ। একইসাথে স্ত্রী কামরুন্নাহার লিপির নামে নগদ ও ব্যাংকে জমা রাখা চৌদ্দ লাখ একত্রিশ হাজার একশত সাতষট্টি টাকার হিসাব দুদকের কাছে গোপন করেছেন।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: তেঁতুলিয়ায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ
দুর্নীতি দমন কমিশন সূত্র জানায়, নিজ জন্মস্থান ঝিনাইদহে কর্মরত থাকাকালীন এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদরাসায় নিয়োগ বাণিজ্যসহ মো. মোকছেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে আরও অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। জেলা শহরের শহীদ মশিউর রহমান সড়কে (উপশহর পাড়াস্থ সিএন্ডবি পুকুর পাড়ের পশ্চিমে) বিশাল আলিশান বাড়িতে থাকেন মো. মোকছেদুল ইসলাম। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, তদন্তে আরও কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে এ মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে তাদের।
১৯৮৯ সালের ৩০ জানুয়ারি মোকছেদুল ইসলাম উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার হিসেবে নড়াইলে যোগদান করেন। ১৯৯৩ সালের ১৪ জুলাই জেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে পাবনায় যোগদান করেন। ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই পদোন্নতি পেয়ে ঝিনাইদহ জেলা থেকে উপ-পরিচালক হিসেবে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বরিশাল অঞ্চলে যোগদান করেন। ২০২০ সালের ১০ জুন অবসরকালীন পিআরএলে গমন করেন। তার স্ত্রী কামরুন্নাহার ২০১২ সালে ঝিনাইদহ জেলা শহরে (শহীদ মশিউর রহমান সড়ক) নাম-সর্বস্ব আব্দুর রকিব উদ্দিন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে যোগদান করেন এবং এখনও সেখানে কর্মরত আছেন।
অভিযোগ রয়েছে যে বিপুল ধন-সম্পদের মালিক বনে গেছেন তারা (মকছেদ দম্পতি)। উল্লেখ করা হয়েছে (মামলা) স্বামী স্ত্রীর আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৩৫ লাখ ৪০ হাজার ৬৬০ টাকা অসাধু উপায়ে অর্জন করে তা দখলে রাখার অপরাধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬ (২)ও ২৭ (১) ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। এর আগে চলতি (২০২৪) সালের ২৮ মে দুর্নীতি দমন কমিশন প্রধান কার্যালয় থেকে মামলা দায়ের করার জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়।
প্রতিনিধি/ এমইউ