উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ফুলজোড়, করতোয়া, ইছামতি, হুড়াসাগর ও চলনবিলসহ নদ-নদীর পানি বেড়েই চলছে। ইতোমধ্য নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে যাচ্ছে চরাঞ্চলের ফসলি জমি। এতে বন্যা আতঙ্ক বিরাজ করছে চরাঞ্চলের মানুষের মাঝে।
যমুনায় পানি দ্রুত বাড়ায় সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়ন, কাজিপুরের খাসরাজবাড়ি ইউনিয়নের সানবান্ধা ঘাট থেকে বিশুরি গাছাঘাট ও শাহজাদপুরের জালালপুর ইউনিয়নের পাঁচিল, হাট পাঁচিল, জালালপুর ও সৈয়দপুর গ্রামে রাক্ষসী যমুনার তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। কোনো কিছুতেই ভাঙন থামছে না। কবে যে যমুনার সর্বগ্রাসী ক্ষুধা মিটবে কেউই তা জানে না। রাক্ষসী যমুনার তীব্র ভাঙনে জেলার তিনটি উপজেলার প্রায় ৮ শতাধিক বসতবাড়ি ও হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (৩ জুলাই) সকালে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেন, চলতি মৌসুমে যমুনা নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এসকল অঞ্চলে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে জেলার কাজিপুর, সদর ও শাহজাদপুরে হাজার হাজার ঘর-বাড়ি, ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, ভাঙনের মুখে থাকা সদর উপজেলার কাওয়াকোল ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বড় কয়রা কমিউনিটি ক্লিনিকটি নিলামে বিক্রির জন্য সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিস প্রকাশ্যে নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এছাড়া দুটি মুজিব কেল্লা, সাড়ে ৪ কিলোমিটার পাকা রাস্তা, বর্ণি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙনের মুখে রয়েছে। গতকাল বিকেলে শাহজাদপুরের পাচিল গ্রামের কোবাদ মাস্টারের দোতলা ভবন নদীগর্ভে ধসে পড়েছে। এছাড়া বহু ঘরবাড়িও নদীতে ভেঙে পড়ছে। সহায় সম্বল হারিয়ে এসব পরিবারের মানুষ এখন নিঃস্ব। এসকল অঞ্চলগুলোতে দ্রুত ভাঙন রোধের ব্যবস্থা না নিলে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনাসহ অনেক ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাবে।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কাওয়াকোল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেন, নদীভাঙনে জেলার মানচিত্র থেকে মুছে যেতে চলেছে কাওয়াকোলা ইউনিয়ন। ভাঙন রোধে পাউবো কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। কাওয়াকোলা ইউনিয়নের হাট বয়ড়া, দৌগাছী, বড়কয়রা, ছোট কয়রা, কৈগাড়ী দড়তা, চন্ডল বয়ড়া, বেড়া বাড়ি গ্রামে তীব্র নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। অনেক গ্রাম ইতিমধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। চলতি বছর এ পর্যন্ত ৩ শতাধিক ঘরবাড়ি নদীতে চলে গেছে। ভাঙনের কারণে কমিউনিটি ক্লিনিক নিলামে বিক্রি করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, নদী ভাঙনের কারণে যেকোনো মুহূর্তে বয়কয়রা কমিউনিটি ক্লিনিক নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে। এ কারণে কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে নিলাম বিক্রির কমিটি গঠন করে প্রকাশ্যে নিলাম অনুষ্ঠিত হবে।
শাহজাদপুরের জালালপুর ইউনিয়নের ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পাকড়তলা গ্রামের লাল মিয়া ও পাচিল গ্রামের আলাউদ্দিন, কালাম শেখ, আয়নাল হকসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, চলতি মৌসুমে নদী ভাঙনে এলাকার অন্তত ৫ শতাধিক ঘর-বাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। বর্তমানে বহু মানুষ অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। বিপুল আবাদি জমি নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় আমরা এখন ভূমিহীন। কেউ আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি। পাউবো’র ঠিকাদাররা যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাঁধ নির্মান কাজ শেষ করতো, তাহলে আমাদের এই সর্বনাশ হতো না।
এ বিষয়ে জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী সুলতান মাহমুদ জানান, নদী ভাঙনে খুকনী, কৈজুরী ও জালালপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থান খুবই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। গত কয়েক বছরে জালালপুর ইউনিয়নের পাঁচ থেকে ছয়টি গ্রাম নদীতে বিলীন হয়েছে। ইতোমধ্যে এসব অঞ্চলের শত শত পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। তিন বছরেও বাঁধ নির্মান প্রকল্প শেষ না হওয়ায় নদীতীরের মানুষজনকে এমন ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সিরাজগঞ্জের গেজ রিডার হাসান মামুন জানান, গত ২৪ ঘন্টায় যমুনা নদী শহর রক্ষা বাধ পয়েন্টে পানি ৪২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানান, নদীর পূর্বপাড়ে চর জেগে উঠার কারণে প্রকল্প এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীর গতিপথ পরিবর্তনের জন্য নদীতে খনন কাজ চলছে। ভাঙন রোধে কাজ করা হচ্ছে। কিছু কিছু জায়গায় ভাঙন রয়েছে। ভাঙনকবলিত এলাকা চিহ্নিত করে জিও ব্যাগভর্তি বালির বস্তা ফেলা হচ্ছে।##
প্রতিনিধি/একেবি